Skip to content

৭ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীর মুখে এসিড নিক্ষেপ: আবারও সেই বিভৎসতা!

আজও নারীরা যোগ্য স্থান পায়নি, সে প্রমাণ বারবার দেয় এই সমাজ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীর জন্য বেঁচে থাকায় দায়। খুন, ধর্ষণ, গুম, যৌন-হয়রানির মতো অসংখ্য অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে নারীর সঙ্গে। কিছুতেই যেন এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ ঘটছে না। একসময় নারীর প্রতি সব আক্রোশ গিয়ে থামতো মুখে এসিড নিক্ষেপের মাধ্যমে। কিন্তু সমাজ থেকে এরূপ বিভৎস ঘটনা চিরতরে মুছে গিয়েছে বলেই আমরা ধরে নিয়েছি।

তবে হঠাৎ পূর্ব-শত্রুতার জেরে নারীর মুখে এসিড নিক্ষেপের মাধ্যমে বিভৎসতার চরমতম প্রকাশ পেয়েছে। একইসঙ্গে সমাজের জন্য আবারও অশনিসংকেতের দেখা মিলেছে! ঘটনাটি মনে করিয়ে দেয় এই মানসিকতার মানুষদের বিষদাঁত ভাঙলেও পুরো বিষ যেন এখনো শরীর ছেড়ে যায়নি। তবে এখনই সময় উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কিছুতেই যেন এই ভয়াবহতা মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার কালিকাপুর চৌরাস্তার মোড়ে রাবেয়া খাতুন নামে এক গৃহবধূর ওপর এসিড ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে তার মুখের একপাশ, ডান হাত ও ডান পায়ের বেশ কিছু অংশ পুড়ে গেছে। এই বিভৎসতা, হিংস্রতা ঘটেছে পূর্ব-শত্রুতার জেরে। প্রায় দুই দশক আগে ২০০২ সালে এসিড সন্ত্রাস সারা দেশকে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছিল। এরপর আন্দোলন, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের ফলে সমাজ থেকে অনেকাংশে এই সামাজিক ব্যাধি মুক্ত হওয়া গিয়েছিল। তবে পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি আজও।

এই নিষ্ঠুরতার শিকার সবচেয়ে বেশি নারী। তবে খুলনার কয়রার ঘটনার ফলে নতুনভাবে আবারও সবাইকে ভাবতে হবে। সমাজে এসব অস্থিতিশীল পরিবেশ যেন কোনোভাবেই না বেড়ে ওঠে, এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বদা সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে। সমাজে গজিয়ে ওঠা যেকোনো অপরাধেরই যদি প্রকৃত শাস্তি নিশ্চিত করা না যায়। তবে তা বাড়তেই থাকে। ফলে সমাজ মানস থেকে একবার যে বিকারগস্ততার প্রায় মুক্তি মিলেছে, কোনো একটি ঘটনা যেন আবারও সেই রূপ জাগ্রত না করে। এজন্য অভিযুক্তদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, এসিড সহিংসতার শিকার ৯৯ শতাংশ নারী। পারিবারিক কলহ, যৌতুক, জমি সংক্রান্ত বিরোধ, বিয়ে বা প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়া, স্বামীকে তালাক এবং স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েতে বাধা দেওয়ার কারণে বরাবরই নারীরা এ ধরনের সহিংসতার শিকার হন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ওয়েবসাইটের পরিসংখ্যান মতে, যৌন সম্পর্কে রাজি না হলেও নারীকে জব্দ করতে এসিড নিক্ষেপ করার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

নব্বইয়ের দশক ও এর কিছু পরে আন্দোলনের কারণে বর্তমানে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা কমে এসেছে। তবে সমাজ থেকে চিরতরে বিদায় করতে হলে নারীর প্রতি সহিংস আচরণের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নারীর প্রতি বিদ্বেষের কারণে সমাজে অহরহ এসব ঘটনা নারীদের স্বাভাবিক জীবনযাপ ব্যাহত করে। আর এসিডের ক্ষত এতই বেশি যে গায়ের ক্ষত ধীরে ধীরে শুকালেও মনের ক্ষত কখনো শুকায় না। তাই এই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী যেন সঠিক বিচার পান, সে ব্যবস্থা করতে হবে। সামজিক সম্মান, টাকা বা ক্ষমতার জোরে কোনো অপরাধী যেন পার পেয়ে না যান, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আইনের শাসন সবার জন্য সমান এই কথাটি যেন শুধু সংবিধানে লিপিবদ্ধ না থেকে বাস্তাবায়িত হয়, সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে। সুস্থ, সুন্দর ও কল্যাণময় পথের দিশারি হয়ে উঠুক মানব জাতি।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ