Skip to content

৯ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন-হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি দ্রুত কার্যকর হোক

বর্তমান সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও কিশোরী-তরুণীরা বিভিন্নভাবে যৌন-হয়রানির শিকার হচ্ছে। এর ফলে উচ্চ আদালতের আদেশ ও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন-হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো যৌন-হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠন করা হয়নি। এছাড়া, যেসব প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেগুলোতেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তার ওপর পাঁচ সদস্যের কমিটিতে নারীর সংখ্যাও কম বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে। নির্দেশনা থাললেও তা সঠিকভাবে মান্য করছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। এর ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন-হয়রানির মতো ঘটনা কিছুতেই নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না।

এই পরিস্থিতিতে যৌন-হয়রানী প্রতিরোধে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি নেই, সেগুলোতে দ্রুত কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। একইসঙ্গে কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ট নারী রাখতে হবে। সম্ভব হলে নারী সভাপতি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং সব আঞ্চলিক পরিচালককে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে, এই নির্দেশ শুধু দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, যেন অবশ্যই কর্তৃপক্ষ পালনে বাধ্য থাকে সে লক্ষ্যে চাপ বৃদ্ধি করতে হবে।

রবিবার (১১ ডিসেম্বর) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ লক্ষ্যে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনায় বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তের আওতায় সব অফিস এবং সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন-হয়রানি প্রতিরোধের লক্ষ্যে কমিটি গঠন। প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে যে, কিছু অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি, যা আদালত অবমাননার শামিল।

এমতাবস্থায়, জরুরিভিত্তিতে এই বিষয়ে কমিটি গঠন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য নিম্নরূপ নির্দেশনা দেওয়া হয়। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে উল্লিখিত বিষয়ে অভিযোগ গ্রহণ, তদন্ত পরিচালনা এবং সুপারিশ করার জন্য কর্তৃপক্ষ কমপক্ষে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করবে, যার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য হবেন নারী। সম্ভব হলে কমিটির প্রধান হবেন নারী; কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সৎ, দক্ষ এবং সক্রিয় সদস্যদের অগ্রাধিকার দিতে হবে; কমিটির দুই জন সদস্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে জেন্ডার ও মানবাধিকার বিষয়ে যারা কাজ করে, তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কমিটি অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখবে; অভিযোগ গ্রহণকারী কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করবে। প্রয়োজনে (যদি উপযুক্ত কারণ থাকে) কর্তৃপক্ষ এ সময়সীমা ৩০ কর্মদিবস থেকে ৬০ কর্মদিবস বাড়াতে পারবে। প্রতিষ্ঠানের সম্মুখে যৌন-হয়রানি প্রতিরোধ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ বক্স থাকবে।

আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে উল্লিখিত বিষয়ে কমিটি গঠন নিশ্চিত করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই কমিটি গঠনের তদারকির বিষয়টি মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করবেন। এছাড়া, আঞ্চলিক পরিচালক এবং উপপরিচালক (মাধ্যমিক) তার আওতাধীন যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিসে এ বিষয়ে এখনও কমিটি গঠন করেননি তাদের তালিকা তৈরি করে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অধিদফতর বরাবর হার্ড কপি এবং সফট কপি ইমেইলে পাঠিয়ে নিশ্চিত করতে হবে।

মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থাৎ মাউশির এই নির্দেশনা নিঃসন্দেহে প্রশংসার। তবে তা যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ণ না হয় তবে যৌন হয়রানির মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কমবে না। এর জন্য মাউশি এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মতোবেক প্রত্যেকটা কমিটিতে নারী সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। কমিটিতে নারী সদস্য বেশি থাকলে কিশোরী বা তরুণীরা সমস্যার সম্মুখীন হলে তারা সংকোচহীনভাবে কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলো জানাতে সক্ষম হবে। তাই নির্দেশনা যাতে মাঠ পর্যায়ে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় সে লক্ষে সরকারি উদ্যোগে তদন্তকারী এবং পর্যবেক্ষণ কমিটিও রাখতে হবে। যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাজ সঠিকভাবে দ্রুত সম্পাদন করতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠনের মাধ্যমে আশাকরি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বেড়ে ওঠার একটা সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ পাবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ