নারীকে পেশা নির্বাচনে স্বাধীনতা দিতে হবে
একটা নারী যখন পড়াশোনা করে, তখন বাবা-মা ভাবেন, পড়াশুনা শেষ করে একজন উপার্জনক্ষম ছেলের সঙ্গে এবং বংশীয় পরিবারে বিয়ে দিলেই ঝামেলা শেষ ৷ অথবা নারী শিক্ষিক, নার্স, ব্যাংকে চাকরি করবে ৷ নারীর পেশা আগে থেকেই নির্ধারণ করে দেয় পরিবার ৷ তারাই বলে দেয় সংসার, স্বামী, সন্তানদের দায়িত্ব পালন করাটাই আসল মানবিক কাজ ৷ নারীর ভাবনার গণ্ডিটা সেখানেই স্তব্ধ হয়ে যায় ৷ এরকম ভাবার পেছনের কারণ হিসেবে দেখা যায়, তারা চাকরি করলেও সংসারেও সমান সময় দিতে হয় ৷
একজন ছেলে যখন চাকরি করে, তখন অফিস থেকে ফিরে এসে সারাদিনের দায়িত্ব সম্পন্ন করে আসে ৷ হয়তো কোনো বাবা ছেলেমেয়ের পড়াশুনার দায়িত্বটা নেয় ৷ বাকি সাংসারিক যত রকম কাজ আছে তার দায়িত্ব নারী ৷ সে কারণে চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীদের পদার্পণ তুলনামূলকভাবে কম ৷ আবার কোনো নারী অফিসের কাজে কর্মস্থলের বাইরে যাবে, এই বিষয়টিও অনেক পরিবার মেনে নিতে পারে না ৷ প্রমোশন হলে বদলি হয়, সংসার থেকে দূরে থাকতে হবে বলে অনেক নারী তা নিতে পারে না ৷
অনেক নারী ইঞ্জিনিয়ার এবং এগ্রিকালচারিস্ট হয়েও শুধু স্বামীর ইচ্ছাতেই গৃহিণী হয়ে জীবন পার করে ৷ অনেক নারীকে সন্তান মানুষ করার জন্য চাকরি ছেড়ে দিতে হয় ৷ নারী যদি লেখক হয়, সংসারের মানুষ বলে এত লেখালেখি করে কী হবে? সংসারের কাজে মন দাও ৷ নামকরা লেখক হতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়৷
নারী যখন চায় সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীতে অফিসার পদে পরীক্ষা দেবে, তখন বলে এত কঠিন ট্রেনিং নারীরা করতে পারবে না৷ যদি কোনো নারী অভিনয় বা মডেলিং জগতে পা রাখতে চায়, আগেই বলা হয় সমাজের মানুষের কাছে এই পেশার গ্রহণযোগ্যতা নেই ৷ এদের ভালো ঘরে বিয়ে হয় না ৷
যারা ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে, তাদের বলা হয় কোনো সরকারি চাকরি করার জন্য ৷ কারণ বেসরকারি চাকরিতে বদলি বেশি, সংসার হবে না ৷
সমাজের মানুষ নারীদের উচ্চ পদেও দেখতে নারাজ ৷ কারণ বেশি উচ্চ পদে গেলে নারী নাকি স্বামীকে গুরুত্ব দেয় না ৷ সংসারও ভেঙে যায় তাড়াতাড়ি ৷ নারী ব্যবসা করতে গেলে বলে এসব ঝুঁকির কাজ, তুমি পারবে না ৷ জীবনের তাগিদ অথবা কারও চক্রান্তে পড়ে নারী যদি বেশ্যাবৃত্তি করে পুরুষদের খায়েস মেটাতে, তখন বলে এরা কোনোদিন সমাজের মানুষের মধ্যেই পড়ে না ৷
নারী কী করবে? সেটা সে নিজে নির্ধারণ করতে পারবে না ৷ পরিবারের মানুষই তা নির্ধারণ করে দেবে ৷ তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বামীর সহযোগিতায় নারী অনেক উচ্চ পদে পদোন্নতি পেয়ে সাফল্য অর্জন করেছে৷
নারীর উপার্জনে সংসার এগিয়ে যায়, তবে কেন এই রক্ষণশীল মানসিকতার জন্য নারী পিছিয়ে থাকবে? নারীকে প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে সহযোগী ভাবলে কিছুটা সমস্যার সমাধান হতে পারে ৷ এত কিছুর পরও কিছু নারীরা কর্মদক্ষতা কাজে লাগিয়ে এখন পরিবার, সমাজ এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ৷ নারী যখন নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিয়ে, দক্ষতা অনুযায়ী উপযুক্ত পেশা নির্ধারণ করতে পারবে তখন আরও বেশি উন্নতি সাধন সম্ভব হবে ৷