Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শতরঞ্জিতে অন্দরসজ্জা

সারাদিনের হাজারো ব্যস্ততার ক্লান্তি কেটে যায় নিজের বাসায় ফিরলে। ঘরের আবহাওয়াই ক্লান্তিবোধ দূর করে দেয় যখন চারিদিক সাজানো গোছানো থাকে। এই সাজানোর মধ্যে যদি প্রাকৃতিক কিছু বা গ্রামীণ কিছু থাকে তাহলে তো কথায় নেই।

ঘরের সাজে নতুনত্ব আনতে পারে গ্রামীণ জিনিসপত্র। সেটা হতে পারে পাটের তৈরি জিনিস বা মাটির তৈরি জিনিসপত্র অর্থাৎ কারুপণ্য। যেহেতু সময়টা এখন বর্ষাকাল তাই এই ঘর সাজানোর উপযুক্ত হবে কারুপণ্যে সাজানো। কারুপণ্যের অন্যতম একটি হলো শতরঞ্জি। শতরঞ্জি একটা সময়ে বিত্তবানদের আভিজাত্যের প্রতীক ছিল। যা আসন, শয্যা, বিছানা, সভা, মজলিশ বা জলসায় বসানোর জন্য ব্যবহৃত হত। তবে বর্তমানেও এটি ঘর সাজানোর কাজে যেমন ম্যাট, টেবিল ম্যাট, ওয়ালমেট কিংবা ব্যাগ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

শতরঞ্জির বিভিন্ন জিনিসের একটি হলো পাপস। ঘরের দরজায় ইদানীং আমরা প্লাস্টিকের পাপসই দেখতে পাই। কিন্তু ঘরকে নতুন করে সাজিয়ে তুলতে পাপস হিসেবে শতরঞ্জি ব্যবহার করা যায়। প্রতিটি ঘরের দরজায় রঙিন শতরঞ্জি দেখতে মন্দ হয় না। সেইসাথে ঘরে প্রবেশের সাথে সাথে একটা আপন ভাব কাজ করে যা মনকে শান্ত করে।

পাপোস হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়াও ঘরের টেবিলের ঢাকনা হিসেবেও শতরঞ্জি ব্যবহার করা যায়। শতরঞ্জিতে ফুটে উঠানো যায় নানা নকশা। এটা হতে পারে গ্রামের কোন দৃশ্য যেমন নদীতে পানি আনতে যাওয়া কিংবা মাঠে কাজ করা। নিজের পছন্দ মতো নকশার শতরঞ্জি নিয়ে টেবিলকে সাজানো যাবে নতুন উপায়ে। টেবিলে প্লাস্টিকের তৈরি ঢাকনা ব্যবহার করলে অনেক সময় গরম ভাবের জন্য ঢাকনা পুরে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। আবার কাপড়ের তৈরি ম্যাট বা ঢাকনা ব্যবহার করলে তাও পানি পরলে নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে শতরঞ্জিতে টেবিল সাজানো যায়। এটি দেখতে যেমন সুন্দর হবে সেইসাথে টেকসইও হবে।

বসার ও শিশুর ঘরে শতরঞ্জি এনে দিতে পারে নতুনত্ব। বসার ঘরে ঘর সাজানোর মাধ্যম হিসেবে শতরঞ্জি ব্যবহার করতে চাইলে পাওয়া যাবে নানা জিনিস। বসার ঘরে বসার জন্য তৈরি সোফাটা নিতে পারেন পাটে তৈরি। পাটের তৈরি অনেক সুন্দর ডিজাইনের সোফা পাওয়া যায়। এছাড়া শতরঞ্জির একটি মাদুর ঘরের একটি কোণে বিছিয়ে তার ওপর তোষক ও শতরঞ্জির তৈরি চাদর দিয়ে বসার জায়গা তৈরি করা যায়। সেখানে মেঝেতে একটি ছোট টেবিল রেখে তার ওপর বেতের তৈরি ছোট ঝুড়ি রেখে সেই ঝুড়িতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা যায়। ঘরের কোণে টবে গাছ লাগিয়ে তার চারপাশ শতরঞ্জিতে সাজিয়ে তোলা যায়। গ্রামীণ নানা জিনিস ফুটিয়ে তোলা শতরঞ্জির ওয়ালমেট ঘরের দেয়ালকে করে তুলবে আকর্ষণীয়। বর্তমান সময়ে শহুরে জীবনে বসার ঘরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যাবে গ্রামীণ স্নিগ্ধতার ছোঁয়া।

শিশুদের মনে গ্রামীণ এই স্নিগ্ধতা এনে দিতে তাদের ঘরটিও সাজানো যায় শতরঞ্জিতে। শিশুদের ঘরে খুব বেশি রাখা হয় না কারণ তাদের খেলার জন্য জায়গা প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে শিশুর ঘরের একটি কোণেতে বসার জন্য শতরঞ্জিতে তৈরি মোড়া রাখতে পারে। ঘরে ব্যবহার করা ম্যাটটিও শতরঞ্জির হতে পারে। ঘরের দেয়ালে সুন্দর ও আকর্ষণীয় কিছু ওয়ালমেট দিতে পারেন। এছাড়া শিশুর বিছানার চাদর ও কুশনগুলোতে শতরঞ্জি ব্যবহার করতে পারেন।

শুধু বসার ঘর বা শিশুর ঘর না, বাসার অন্য ঘরেও শতরঞ্জি নতুনত্বের ছোঁয়া দিতে পারে। ঘরের দেয়ালে ও মেঝেতে শতরঞ্জির ম্যাট ও ওয়ালমেট ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও ঘরের কোণে সুন্দর ডিজাইনের কলসি বা গাছ লাগানো যায় এমন ঝুড়ি দিয়ে ঘর সাজানো যায়। ড্রেসিং টেবিলের উপরে দেওয়া ঢাকনাটাও হতে পারে শতরঞ্জির। এছাড়া ড্রেসিং টেবিল ও সোকেজের উপর ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ঝুড়ি এই ঝুড়িগুলো হতে পারে শতরঞ্জির।

এছাড়া বাড়ির অন্যতম প্রয়োজনীয় জায়গা হলো বারান্দা বা ব্যালকনি। মন খারাপ হলেই সবাই ব্যালকনিতে গিয়ে বসে থাকি। শুধু মন খারাপের সময়ই নয়, গল্প করার জন্যও ব্যালকনিতে বসে থাকা হয়। তাই এই বারান্দা কিংবা ব্যালকনিতে বসার জন্য ব্যবহার করা যায় শতরঞ্জির তৈরি সোফা বা চেয়ার। চেয়ারের সামনে একটি ছোট টেবিল দিয়ে তার উপর ছোট রঙিন নকশার চাদর বিছিয়ে দিলে তো কথাই নাই।

ঘরের সাজকে নতুন করে তুলতে শতরঞ্জি হতে পারে অন্যতম মাধ্যম। এতে গ্রামীণ জীবন যেমন ফুটে উঠে সেইসঙ্গে হৃদয়কেও জুড়িয়ে যায়।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ