Skip to content

৭ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীকে তার নিজের মতো থাকতে দিন

স্রষ্টার সৃষ্টিতে নারী-পুরুষ দুটিই মানব সত্তা। একে অন্যের সহায়ক। তবে নারীর মধ্যে স্রষ্টা কিছু ব্যতিক্রমধর্মী গুণ দিয়েছেন। যা শুধু নারীরই আছে। প্রত্যেক নারীই তার নারীত্বকে মর্যাদা দেন, গুরুত্বদেন এবং একইসঙ্গে ভালোবাসেন৷ তবে জীবনের বন্ধুর পথে চলতে গিয়ে নারীকে অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা পার করতে হয়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে হয়।

অন্যায়-জুলুমের রাজত্বে টিকে থাকতে, মাথা উঁচু করে বাঁচতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। আর নারী জীবনের প্রতিষ্ঠা ঘটে প্রথমত তার শিক্ষার হাত ধরে। নারী যদি শিক্ষিত হয় তবে জীবনের প্রতিকূল পরিস্থিতি সহজেই মোকাবিলা করতে সক্ষম হন। কিন্তু আমাদের সমাজব্যবস্থায় নারী জীবনের পূর্ণতা বা সার্থকতা বলতেই বোঝানো হয় মাতৃত্ব। যে নারী মাতৃত্বের স্বাদ পায়নি কখনোই, তাহলে কি তার জীবন ব্যর্থ? নাকি নারীর মাতৃত্বকে তার জীবনের পূর্ণতার নিক্তিতে মেপে নারীকে ঘরবন্দি করার নতুন ফন্দি?

প্রত্যেক নারীর অদম্য কামনা মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ। মা হওয়ার বাসনা। কিন্তু সেই বাসনাকে কেন আমাদের সমাজ দায় হিসেবে চাপিয়ে দেয়? এই চাপিয়ে দেওয়ার কাজটা কোনো একজন করেন না। মূলত আমাদের পরিবার প্রথা গড়েই উঠেছে এভাবে যে, নারী মানেই মা। নারী মানেই সংসার। অবশ্যই নারীর সঙ্গে মাতৃত্ব ওতপ্রোতোভাবে জড়িত। কিন্তু শুধু এর মধ্যেই নারী জীবনের সার্থকতা নয়। কারণ নারীর আরও বহুকিছু করার আছে। পৃথিবীর পথে চলতে হলে নারীকে বদ্ধ ঘরে থাকা শোভা পায় না।

শুধু লিঙ্গ ভেদের কারণে নারীকে ঘরে আবদ্ধ করে সন্তান আর সেই সন্তানের কাঁথা সেলাইয়ের জন্য নারীর জন্ম হয়নি। নারী যেমন মা তেমনই প্রত্যেক নারী এদেশের একেকজন সম্পদ। দেশকে উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও দায়িত্ব আছে। নারী কোনো জড় বস্তু নয় যে, তাকে মা হওয়ার স্বাদগ্রহণের জন্য ঘরে বসে থাকতে হবে। আর শুধু মাতৃত্বকে জীবনের সার্থকতা ভাবা বোকামি। আমাদের সমাজে এমনও অনেক নারী আছেন, যারা শত চেষ্টা করেও মা হওয়ার ইচ্ছে পূর্ণ করতে পারেননি। সেই নারীর কী দায়? কিন্তু আমাদের সমাজে সে নারী হীনণ্মন্যতায় ভোগেন। জীবনকে বোঝা মনে করেন। জীবনকে সার্থকতাহীন মনে করেন।

আমাদের পরিবারগুলোকে নারীর জীবনের প্রকৃত শিক্ষা দিতে হবে। নারীর মাতৃত্ব জীবনের একটি অংশ মাত্র। পুরো জীবন নয়। মূলত সফলতা সবটা মিলেই আসে। কেউ যদি মনে করেন, মা হলেই তার ইহজীবন পূর্ণ হলো সেটা যেমন ভুল আবার কেউ সম্পূর্ণ সাফল্যের চূড়ায় উঠেও ভাবতে পারেন, মা হননি তাই তার জীবন বৃথা। চিন্তাধারা মনের বিশ্বাস থেকে আসে। ফলে আমাদের হীন মানসিকতা দূর করতে হবে। নারীর যোগ্যতা, দক্ষতাকে সম্মান করতে হবে।

নারীর কাজের মূল্যায়ন করতে হবে। নারী যেমন মা হওয়ার মধ্যে জীবনের পূর্ণ সার্থকতা কখনোই পেতে পারে না, তেমনই শুধু আর্থিক সচ্ছলতা, মান-মর্যাদাসম্পন্ন মানুষরূপে গড়ে উঠেও সবটা সার্থক না হতেই পারে। তাই মতপথকে গুরুত্ব দিতে হবে। নারীর স্বাধীনতা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নারীর মঙ্গলকামনায় পুরো মানবজাতিকে একসঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে একে অন্যের প্রতি। তবেই নারীরা জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য খুঁজে পাবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ