Skip to content

২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওজন কমাতে যা করবেন

বর্তমানে অধিকাংশ নারীর মধ্যেই স্লিম হওয়া বা জিরো ফিগারের দিকে আগ্রহ বেশি। অর্থাৎ নিজেকে সুন্দরতম রূপে প্রকাশ করতেই পছন্দ করেন তারা। আর শরীরকে আকর্ষণীয় করতে অনেককেই দেখা যায় খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে স্লিম হওয়ার প্রচেষ্টা করতে। কিন্তু কিছুদিন পরেই আবার ফিরে আসে আগের রূপে। আবার অনেকেই অতিরিক্ত ওজন নিয়ে সম্মুখীন হন নানা ধরনের প্রতিকূলতায়।

ওজন কমানোর জন্য ফার্মেসিতে বা বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দেখতে পারবেন। এই ওষুধগুলো আপনার জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে, ওজন কমানো তো দূরের কথা, উল্টো এ ধরনের ওষুধ সেবন করলে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। আগে থেকেই সতর্ক হয়ে উপায়গুলো মেনে চললে আপনার জন্য অধিক কার্যকর ফল দিতে সক্ষম হবে। তাই ওজন কমাতে মেনে চলতে পারেন কিছু সহজ কৌশল।

প্রচুর পরিমাণে পানি পান
ওজন কমানোর সবচেয়ে কার্যকর ও সহজ উপায় হলো প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সহজে গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। এছাড়া বেশি পরিমাণে পানি পান করার কারণে শরীর থেকে সব ধরনের বর্জ্য বের হয়ে যায়। শরীরে চর্বি জমতে পারে না। যে চর্বির কারণে আমাদের শরীরে ওজন বাড়ে, সেই চর্বি আস্তে আস্তে পানির সঙ্গে চলে যায়।

সঠিক সময়ে খাবার
সঠিক খাবার হওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া একজন বেশি ওজন বিশিষ্ট মানুষের প্রয়োজন। সব সময় চেষ্টা করবেন, রাত আটটার পরে খাবার না খেতে। রাত আটটার আগে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ হালকা-পাতলা কাজ করে নেবেন। যা কিনা আপনার শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

নিয়মিত হাঁটাচলা করা
ওজন কমানোর জন্য হাঁটাচলার বিকল্প অপরিসীম। এই উপায়ে আপনি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটাচলা করলে আপনার দেহের ১৬০ ক্যালোরি পর্যন্ত খরচ হতে পারে। চেষ্টা করবেন যতদ্রুত সম্ভব হাঁটতে থাকার। যত বেশি দ্রুত হাঁটবেন তত বেশি আপনার জন্য ভালো। একাধারে এত সময় যদি আপনার কাছে বিরক্তিকর মনে হয়, তাহলে আপনি কানে হেডফোন লাগিয়ে আপনার পছন্দের বিষয়গুলো শুনতে শুনতে হাঁটতে পারেন।

সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা
বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা প্রতিদিন সিঁড়ি দিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট ওঠানামা করে তারা অন্যদের তুলনায় দ্রুত ওজন কমাতে সক্ষম হয়। সিঁড়িতে উঠা নামা করার ফলে আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত ক্যালোরি খরচ হতে পারে,যা কিনা আপনার ওজন কমানোর উপায় হিসেবে বিবেচিত।

প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া
ওজন কমানোর জন্য সবসময় স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে ওজন কমানো সম্ভব নয়। যদি শরীরের পরিবর্তন দেখতে চান তাহলে খাদ্যতালিকায় এমন সব খাবার রাখতে হবে যেগুলোতে অনেক পরিমাণে প্রোটিন আছে। যেমন, সবুজ শাকসবজি, বিভিন্ন প্রকার ফল, ডিম, দুধ, মাংস, ডাল ইত্যাদি আপনার ওজন কমাতে বিশেষ প্রক্রিয়া। শর্করার পরিমান কম রাখতে হবে। খাবারে ভাতের পরিমান কম রাখতে হবে। কারণ, শর্করা ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তাই ওজন কমাতে শর্করা জাতীয় খাবার থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে।

চিনি থেকে দূরে থাকুন
চিনি এমন এক ধরনের উপাদান দিয়ে তৈরি যা কিনা আপনার ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা বেশি মিষ্টি পছন্দ করে। সচরাচর যেসব মিষ্টি বানানো হয় অথবা মিষ্টিজাতীয় খাবার তৈরি করা হয় সবগুলাতেই চিনির ব্যবহার অপরিসীম। তাছাড়া চা খাওয়ার সময় অনেকেই আছে বেশি পরিমাণে চিনি ব্যবহার করে চা খায়। মিষ্টি জাতীয় খাবার ডায়াবেটিসের একটি অন্যতম কারণ। ওজন বৃদ্ধি পেলে ডায়াবেটিস হতে পারে। তাই ওজন কমানোর জন্য একটি বিশেষ উপায় হিসেবে চিনি কে বর্জন করতে হবে।

গ্রিন টি ও আদা
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ গ্রিন টি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। শারীরিক নানান সমস্যা দূর করতেও গ্রিন টি বেশ উপকারী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এই চা সহায়ক। পাশাপাশি গ্রিন টি’র সঙ্গে আদা মিশিয়ে পান করলে তা হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই চা তৈরি করতে প্রয়োজন আধা ইঞ্চি আদা পরিষ্কার করে কুঁচি করে কাটা, ১ চা-চামচ গ্রিন টি, পরিমাণ মতো পানি ও স্বাদ মতো ভেষজ মধু। পানি ফুটিয়ে এর মধ্যে গ্রিন টি’র পাতা ও আদা দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ছেঁকে নিন। সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করুন। দিনে দু তিন কাপ এই চা পান করা উপকারী।

দারুচিনির চা
রক্তের শর্করার পরিমাণ আমাদের ওজনের উপর প্রভাব ফেলে। কারণ এর মাত্রার উপর নির্ভর করে আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও শক্তির পরিমাণ। রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় থাকলে ক্ষুধার পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত থাকার পাশাপাশি কর্মক্ষমতা ঠিক থাকে। ফলে শরীরে মেদ জমে থাকার ঝুঁকি কমে আসে। রক্তে শর্করার এই মাত্রা বজায় রাখতে দারুচিনি দারুণ কার্যকর। এই মিশ্রণ তৈরি করতে লাগবে এক টেবিল-চামচ দারুচিনি গুঁড়া, একটি আস্ত দারুচিনি এবং আট আউন্স বিশুদ্ধ পানি। পানি গরম করে তাতে দারুচিনি মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। কুসুম গরম হলে পান করুন। দিনে দুতিনবার এই পানীয় পান করুন।

পর্যাপ্ত ঘুম
শরীরের স্বাভাবিক কার্যপ্রক্রিয়া ধরে রাখতে ও বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। ঘুম শরীরের প্রতিটি অংশের মধ্যে কাজের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই সুস্থ থাকতে সঠিক মাত্রায় ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ঘুমে অনিয়ম হলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা থেকে ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়ম করে ঘুমাতে হবে।

টক দই ও মধু
টক দইয়ের ভালো ব্যাক্টেরিয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। দইয়ের প্রোবায়োটিকস হজম প্রক্রিয়ার সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। হজমের পাশাপাশি কিছু চর্বি ও অন্যান্য উপাদান ভেঙে ওজন কমাতেও সাহায্য করে টক দই। আর মধু মিষ্টির চাহিদা পূরণ করবে কোনো ক্ষতি ছাড়াই। তবে এক্ষেত্রে ফ্যাট বিহীন দই বেছে নিতে হবে। দুই কাপ দইয়ের সঙ্গে এক টেবিল-চামচ মধু মিশিয়ে সকালের নাস্তার সঙ্গে খেতে পারেন। স্বাদের ভিন্নতা আনতে পছন্দের ফল বা ওটসের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে।

গোলমরিচ ও লেবুর রস
লেবুর রসের সঙ্গে গোলমরিচের গুঁড়ার মিশ্রণ ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। গোলমরিচে রয়েছে পিপারিন নামক উপাদান যা থেকে এর ঝাঁঝালো স্বাদ হয়ে থাকে। এই উপাদান চর্বি জমার প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। তাছাড়া রক্তের চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও গোলমরিচ বেশ উপকারী। অন্যদিকে লেবু হজমে সহায়তা করে। ফলে ওজন কমতে সাহায্য করে। এই শরবত তৈরি করতে প্রয়োজন হবে অর্ধেক লেবুর রস, অল্প পরিমাণ গোলমরিচের গুঁড়া এবং পরিমাণ মতো খাবার পানি। এই মিশ্রণ প্রতিদিন একবার খাবার পরে পান করতে হবে।

চকলেট
ওজন বাড়ার ভয়ে স্বাধের চকলেটের লোভ সামলে চলতে হয়। তবে ৭০ শতাংশ ডার্ক চকলেট বরং স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ডার্ক চকলেট রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। রাতের খাবারের পর দেড় থেকে দুই ইঞ্চি আকারের এক টুকরা চকলেট খাওয়া যেতে পারে।

ব্যায়াম
যেকোনো খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ব্যায়াম ওজন কমাতে সহায়ক। খাবার কমানোর পরও অনেক ক্ষেত্রে ব্যায়াম না করার কারণে ওজন কমানো সম্ভব হয় না। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত ব্যায়াম করতে হবে।

অনন্যা/নুপুর

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ