Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীকে ভোগ্যপণ্য ভাবা বন্ধ করুন

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা সবদিক থেকে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা। নারীর যেন প্রকৃতির বিশুদ্ধ নির্মল বাতাসটুকু গ্রহণেরও অবসর জোটে না। নারীকে রজ্জু দিয়ে বেঁধে তার সবটা পেতেই যেন পুরুষের লালা ঝরে। আর এর শিকার প্রত্যেকটা নারী। ঘরে- বাইরে নারীদের নিরাপত্তা দিন দিন ব্যাপকভাবে বিঘ্ন হচ্ছে। আমাদের সমাজে পুরুষদের বিকৃত রুচি নারীদের জন্য যে কতটা অস্বস্তিকর তা নারীমাত্রই হাড়েহাড়ে টের পান। কিন্তু আমাদের পুরুষ সমাজ যেন আলাভোলা, তারা দেখেও না দেখার এবং বুঝেও না বোঝার ভান করে। এসব বিকৃত চিন্তা-ভাবনা, রুচির মানুষদের জন্য সুস্থ স্বাভাবিকভাবে নারীর জীবনযাপন করাও দায় হয়ে পড়েছে। কবে পুরুষ সমাজের সত্যিই বোধদয় হবে? কবে তারা যেকোনো নারীকে দেখলেই ভোগ্যপণ্য বসবে না?

সময়ের সঙ্গে নারীরা নিজেদের পাল্টাতে শুরু করেছে। শুধু ঘরেই যে নারীর জীবনভর বন্দি থাকলে চলবে না, তা নারীরা খুব গভীরভাবেই অনুধাবন করতে পারে ইদানিং। এরফলে নারীরা ঘরের বাইরে প্রবেশ করছে প্রতিনিয়ত। যোগ দিচ্ছে নানা কর্মে। তবে এই কর্মক্ষেত্রে নারীরা কোনাভাবেই নিরাপদ নয়। অফিসের বস বা পুরুষ সহকর্মীদের কামুকতায় নারীকে বিব্রত হতে হয়। নিজেকে গুটিয়ে নিতে হয় ক্রমাগত।

নারীদের সবসময় মাথায় রেখে চলতে হয়, তারা কতটা উৎফুল্ল হয়ে তাদের কাজটা করবেন। কারণ প্রাণভরে উৎফুল্লভাবে নিজের কাজটা নারীরা সম্পাদন করলেই অন্যপক্ষে থাকা পুরুষ সহকর্মী ভেবেই বসে, হয়তো তার প্রতি নারীটি আকৃষ্ট। শুধু কর্মক্ষেত্রে নয় বরং নারীরা যদি কারো সঙ্গে একটু বিনয়ী হয়ে কথা বলে, তাতেই পুরুষ জাতির শরীরে যেন বিদ্যুৎগতি প্রবাহিত হয়। নারীর প্রতি তার পাশবিক কামনা জেগে ওঠে। প্রায় নিরানব্বই ভাগ পুরুষের মধ্যেই এই একই প্রবৃত্তি!

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় আরও একটি গুরুতর সমস্যা হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যেহেতু যোগাযোগের সহজ একটি মাধ্যম এটি ফলে পুরুষ জাতির জন্য তা হয়েছে ঠিক ‘নাচুনি বুড়ির ওপর ঢোলের বাড়ি’ ধরনের। গভীর রাতে নারীদের সঙ্গে আলাপ করতে তাদের যেন বেশ ভালো লাগে! মূলত কোনো নারী যদি রাতে তার নিজের প্রয়োজনেও অনলাইনে থাকেন তাকে ‘হাই-হ্যালো’র মতো অনেক বার্তায় পেতে হয়! কী বিভৎস মানসিকতা আমাদের সমাজে গড়ে উঠেছে! একজন নারীর সঙ্গে কিঞ্চিৎ পরিচিত বা অফিসের সহকর্মী হওয়ার খাতিরে গভীর রাতে তাকে সামাজিক মাধ্যমে নক দেওয়া কোন ধরনের ভদ্রতা?

সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, অফিসের নারী সহকর্মীকে দেখা মাত্রই গাঘেঁষে চলার ভাবধরাটা বন্ধ করুন। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তো নারীদের জীবনযাপনের ওপর রেশ টানতে পারলেই নিজেদের বাহাদুর ভাবতে শুরু করেন। তবে সেই বাহাদুরিটা আগে নিজের সঙ্গেই চর্চা করুন। তাতেই দেশ ও দশের কল্যাণ হবে। নারীদের অযথা ত্যক্ত-বিরক্ত না করে বরং নিজের মানোন্নয়ন করুন।

নারীর সঙ্গে এরূপ আচরণের আগে পুরুষদের নিজেদের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয় না? তারা একজন মানুষকে কোন কারণ ছাড়া গভীররাতে বিব্রত করতে চান কোন বিকৃত মানসিকতা নিয়ে? আবার অনেকে আছেন খানিক পরিচয় আছে কী নেই, বা পরিচিতই হলো হঠাৎ ম্যসেঞ্জারে ভিডিও বা অডিও কল দিয়ে বসেন! আর এরূপ কিছু গণ্ড মূর্খ, অবিবেচকদের কারণে নারীদের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতে হয় সর্বদা!

শুধু অফিসের সহকর্মী বা পুরুষ সহকর্মীই নয় বলা চলে ছোট- বড় সব বয়সী পুরুষদের মধ্যেই এরূপ মানসিকতা খুব বেশিই লক্ষ করা যায়। শিক্ষক, ক্লাসমেট, পরিচিত ছোট-বড় যেকোনো নারীর সঙ্গে এরূপ ঘৃণ্য আচরণ আমাদের পুরুষ জাতির কদর্য মানসিকতার প্রকাশ। আবার এরাই সমাজে খুব দাপট নিয়ে চলতে পছন্দ করেন ! বড় আশ্চর্য হতে হয় এরূপ কপট, ভণ্ডদের দেখে!

অধিকাংশ নারী যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন গণপরিবহন। এক্ষেত্রেও একশ্রেণির বিকৃত মানুষদের জন্য নারীকে অনেক সময় অস্বস্তিতে পড়তে হয়। নারীর পাশে যদি কোন পুরুষ যাত্রী বসেন তবে পুরুষটির আচরণ, হাফ-ভাব দেখে মনে হয় পাশের নারীটি তার স্ত্রী বা প্রেমিকা! যদি দীর্ঘ পথের সহযাত্রী হয় তাহলে তো কোনো কথায় নাই। যেকোনো উছিলায় নারীর সঙ্গে কথা বলে তাকে বিব্রত করা পুরুষদের বেশ রপ্ত করা। কিন্তু পুরুষ সমাজ কেনো বোঝেন না তাদের এরূপ কদর্য আচরণের কারণে নারীদের জীবনযাপন ভীতিপ্রদ হয়ে ওঠে। নারীরা স্বাভাবিকভাবে তাদের কাজ সম্পাদন করতে পারেন না। তাই পুরুষ সমাজের উচিত নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। নিজেদের অতি আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা।

সময় হয়েছে বদলানোর। এবার পুরুষ সমাজ একটু নিজেদের দিকে নজর দিন। রাস্তা- ঘাটে চলতিপথে, সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, অফিসের নারী সহকর্মীকে দেখা মাত্রই গাঘেঁষে চলার ভাবধরাটা বন্ধ করুন। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তো নারীদের জীবনযাপনের ওপর রেশ টানতে পারলেই নিজেদের বাহাদুর ভাবতে শুরু করেন। তবে সেই বাহাদুরিটা আগে নিজের সঙ্গেই চর্চা করুন। তাতেই দেশ ও দশের কল্যাণ হবে। নারীদের অযথা ত্যক্ত-বিরক্ত না করে বরং নিজের মানোন্নয়ন করুন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ