Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোশ্যাল মিডিয়াও নারীর জন্য এক আতঙ্ক

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আশীর্বাদ আমরা ভোগ তো করছি বটেই সঙ্গে অভিশাপও কিছু কম দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে নারীদের জন্য। চলার পথে, গণপরিবহনে, কর্মস্থলে, এমনি নিজ বাসস্থান সব জায়গায়ই নারীর নিরাপত্তায় রয়েছে যথেষ্ট খামতি। এর ওপর সোশ্যাল মিডিয়ায় নিত্যনতুন তৈরি হওয়া হয়রানি তো রয়েছেই।

আজকাল গণপরিবহন যেমন নারীর জন্য এক আতঙ্ক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও একই। প্রযুক্তির আর কোনো বিষয়টি আমরা ঠিক কতটা আয়ত্ত করতে পেরেছি, বলতে পারবো না, তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে বিশ্বের যেকোনো দেশকে টেক্কা দেওয়ার লড়াইয়ে নিজেদের প্রস্তুত করছি বললেও খুব একটা ভুল হবে না।

বেশ কয়েকবছর আগেও অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে এতটা শোরগোল ছিল না। কারণ তখনো আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এত দক্ষতা ছিল না। ২০২০ সালের গোঁড়ার দিক থেকে করোনা মহামারীর কারণে যখন গৃহবন্দি হতে থাকে মানুষ তখন প্রযুক্তির আশীর্বাদ খুব ভালোভাবে উপভোগ করতে থাকে সবাই। মানুষের জীবন বেশ অনেকটাই অনলাইন নির্ভর হয়ে পরে। কিন্তু সেই সময়টাতে অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা যেন লাগাম ছাড়া হয়ে যায়। আর সেই লাগাম যেন কোনোভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে ২৭ নভেম্বর রোববার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘নারীর প্রতি অনলাইন সহিংসতা বন্ধ করুন: প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ’ শিরোনামে এক অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

একশনএইডের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনলাইনে নারীর প্রতি ১২ ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে নারীরা অশ্লীল, ক্ষতিকর, যৌনতামূলক ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য পেয়ে থাকেন। ৫৩ শতাংশ নারীকে ইনবক্সে অশ্লীল ছবি পাঠিয়ে যৌন সম্পর্ক করার কথা বলে হয়রানি করা হয়। বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হন ১৯ শতাংশ নারী।

একশনএইডের ‘বাংলাদেশে অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা’ শীর্ষক সেই গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, অনলাইনে প্রায় ৬৪ শতাংশ নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছেন, আগের বছরের তুলনায় হারটি ১৪ শতাংশীয় বিন্দু বেশি। নারীরা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও অনলাইনে বার্তা আদান–প্রদানের মাধ্যম মেসেঞ্জারে।

একশনএইডের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনলাইনে নারীর প্রতি ১২ ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে নারীরা অশ্লীল, ক্ষতিকর, যৌনতামূলক ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য পেয়ে থাকেন। ৫৩ শতাংশ নারীকে ইনবক্সে অশ্লীল ছবি পাঠিয়ে যৌন সম্পর্ক করার কথা বলে হয়রানি করা হয়। বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হন ১৯ শতাংশ নারী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের নাম ব্যবহার করে ভুয়া আইডি খোলার মাধ্যমে সহিংসতার শিকার হয়েছেন প্রায় ১৮ শতাংশ নারী। ১৬ শতাংশ নারী বলেছেন, সাইবার জগতে তাঁদের কর্মকাণ্ড সব সময় অনুসরণ করা হচ্ছে। সমকামিতার পক্ষে কথা বলায় ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হয়েছেন ১৩ শতাংশ।

এ ছাড়া অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া (পোস্ট), যৌন সহিংসতা করার হুমকি, ফেসবুক লাইভ বা শিক্ষামূলক অধিবেশন চলার সময়ে যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্য, কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলার চাপ, যৌন সহিংসতা ঘটানোর সময় ছবি তুলে ও ভিডিও করে পরে পোস্ট করা এবং নাটক–সিনেমায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করা হয়েছে নারীদের সঙ্গে।

২০২১ ও ২০২২—দুই বছরের জরিপেই একশনএইড দেখেছে, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানানোর হার খুবই কম, মাত্র ১৫ শতাংশ। ওই দুই বছর যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা অভিযোগ করার জন্য ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম বেশি বেছে নিয়েছেন। এ বছর পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের ফেসবুক পেজে ২০ শতাংশ এবং জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ১৫ শতাংশ অভিযোগ করেছেন। সশরীর গিয়ে অভিযোগ করার আগ্রহ কম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনলাইনে সহিংসতার শিকার হওয়ার ঘটনা নারীর জীবনে বড় প্রভাব ফেলে। প্রায় ৪২ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, তাঁরা অনলাইনে সক্রিয়া থাকা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করার বিষয়ে আর আস্থা পান না।

অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে ১২টি সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এর মধ্যে রয়েছে ভুয়া অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করে বাতিল করা এবং সুরক্ষা জোরদার করতে ‘টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ বাধ্যতামূলক করা, ভুক্তভোগীরা যেন বিষয়গুলো জনসমক্ষে তুলে ধরার মতো জায়গা পান, সে ব্যবস্থা করা এবং ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর বিষয়ে সংবাদ প্রকাশে নীতিমালা তৈরি।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ