ঋতু বদলে ঘরের সাজ বদল
দিনশেষে সবাই ঘরে ফিরি। ভালো লাগা, মন্দ সবটা জুড়ে থাকে নিজের শান্তির নীড়ে অর্থাৎ বাড়িতে। আর বাংলাদেশ তো ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ। এক এক করে ঠিক ছয়টি ঋতুর আগমন ঘটে এই দেশে! হাড়কাপানো হিমেল হাওয়া আর কুয়াশায় পথ ঘাট ছেয়ে দিয়ে আগমন ঘটে শীতের। মাথার উপর টাপুরটুপুর বৃষ্টি আর নদে বান নিয়ে আমাদের মাঝে আসে কদম ফুলের মৌসুম বর্ষা। ঋতুর সাথে মিল রেখে চারিদিকের আবহাওয়া বদলে যায়, আর বদলে যায় পোশাক, খাওয়া-দাওয়া, কাজকর্মসহ সবকিছু। এই বদলে যাওয়ার মেলায় নিজের প্রিয় বাসাটিকে একটু বদলে নিতে কার না মন চায়? ঋতু বদলের সাথে বদলে নিন ঘরের সাজ।
গ্রীষ্ম
সূর্য যদি মাথার উপর ঘাড় ত্যাড়া করে দাড়িয়ে থাকে তাহলে, দরদর করে ঘামতে থাকা কোন লোকেরই বুঝতে অসুবিধা হয় না যে গ্রীষ্মকাল চলে এসেছে! বছরের এই সময়টাতে কে না গরমে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। শুধুমাত্র নিজের বাসাতেই শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু, এই বাসাটি যদি হয়ে থাকে গুমোট, আঁটসাঁট তাহলে কি আপনি দু-দন্ড শান্তি খুঁজে পাবেন? মোটেই না। শীতকাল অনুযায়ী যদি বাসা ডিজাইন করে থাকেন, সেখানে কখনই গ্রীষ্মকালের স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পাবেন না। সেক্ষেত্রে, প্রথমেই যেটা করতে পারেন তা হল, ঘরের ভেতর টুকরো টুকরো সবুজ ছড়িয়ে দিন। পর্দা বদলে ফেলুন, হালকা রঙের পর্দা বাছাই করুন। যাতে করে আলো বাতাস চলাচল করতে পারে। অপ্রয়োজনীয় আসবাব সরিয়ে ফেলুন। ঘর খোলামেলা লাগাটা জরুরী। যদি বাজেট কোন সমস্যা না হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে, পুরো বাসা রঙ করিয়ে নিতে পারেন। অবশ্যই ভিন্ন টেক্সচারের মাথায় রাখবেন এবং হালকা ধরনের রঙ বাছাই করবেন। অফ হোয়াইট, হালকা বাদামী এইসব রঙ চোখের শান্তি অনেক বৃদ্ধি করে। বাসার ভেতরে ছোটখাটো সংস্কারও করে নিতে পারেন। বাসার সিলিং অনেক বেশি অবহেলিত,এটা স্বীকার করতেই হবে। অথচ মাথার উপর এই সিলিংকে একটু সাজিয়ে নিলেই ঘরের চেহারা বদলে যেতে পারে। আপনি চাইলে অনেক ভাবেই ঘরের সিলিং ব্যবহার করতে পারেন।
বর্ষা
বর্ষাকাল এমন এক ঋতু, যে সময়ে আকাশ মেঘলা থাকে আর রোদ থাকে না বললেই চলে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির সাথে কখনও থাকে ঝড়। এই আবহাওয়াতে রাতে অনেক ভালো লাগলেও দিনের বেলায় তৈরি হয় স্যাঁতস্যাঁতে একটা পরিবেশ। বাইরে বৃষ্টির কারণে বাইরে তেমন বের হওয়া যায় না বলে, নিজের বাসাকে এই বর্ষা ঋতু অনুযায়ী সাজিয়ে নিতে হবে। যেহেতু আকাশ মেঘলা থাকে তাই বেশিরভাগ সময় ঘরে বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হয়, সেক্ষেত্রে ঘর আলোকিত করে এমন রঙের পর্দা নির্বাচন করুন। আর যদি দেয়ালের রঙ বদলাতে পারেন, তাহলে তো বেশ ভালো। বিছানার চাদর, কুশন কাভার, সোফার কাভারের জন্য উজ্জ্বল রঙ বাছাই করুন। এতে করে ঘর বেশ আলোকিত দেখাবে। যদি কৃত্রিম আলো দিনের বেলায় জ্বালিয়ে রাখতে ইচ্ছে না করে, আপনি চাইলে ঘরের ভেতর লাইট শেডও ব্যবহার করতে পারেন। ঘরের বিভিন্ন কোণায় ছোট ছোট মৃদু বাতির ল্যাম্প ব্যবহার করতে পারেন। তবে, সাবধান থাকতে হবে বৃষ্টির পানি যেন ঘরের মধ্যে কোথায় জমে না থাকে। সাথে সাথে পরিষ্কার করে ফেলুন। নয়তবা, ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাবে।
শীত
৬ টি ঋতুর এই একটি কম বেশি সকলেরই পছন্দ। কুয়াশায় ঢেকে যায় চারিদিক। কেমন এক ধোঁয়াশায় ছেয়ে যায় সারা দেশ। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে ঘরের ভেতর ছড়িয়ে দিতে হবে উষ্ণতা। সেজন্য, ওয়ার্ম লাইটগুলো চমৎকার উপায় হতে পারে। ঘর যেমন আলোকিত হবে তেমনি এক ধরনের উষ্ণতা ছড়িয়ে যাবে। আপনি চাইলে মোমবাতিও ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন নকশার বিভিন্ন ধরনের মোমবাতি বাজারে আছে সেগুলো ঘর সজ্জার জন্য চমৎকার হবে। শীতকালে বরফ ঠাণ্ডার আভাস কেন? প্রথমে বুঝিনি। রিডারেরও বুঝতে সমস্যা হতে পারে। দেখতে কিন্তু বেশ চমৎকার হবে ব্যাপারটা!
বসন্ত
সবচেয়ে প্রিয় যে ঋতু সেটি সম্ভবত “বসন্ত”। শীতের আমেজ কাটিয়ে সকল পাখিরা নীড়ে ফিরে আসে। খুঁজে পায় তাদের পুরানো ঠিকানা। গাছের পুরনো পাতা ঝরে গিয়ে জন্ম নেয় সবুজ পাতা। হাজারো বসন্তের ফুলে ছেয়ে যায় গাছগাছালি। এমন রঙিন ঋতু আর কোনটিই নয়। তাই চাইলে আপনি ঘরের সাজে আনতে পারেন বাহারি সব রঙ। বসন্তের ফুলের সাথে মিল রেখে বেছে নিতে পারেন, বাহারি সব পর্দা। কন্ট্রাস্ট এর কথাও মাথায় রাখতে পারেন। ঘরের বিভিন্ন কোণায় রাখতে পারেন, টুকরো টুকরো সবুজ। বসন্তের ফুলের গাছ যদি রেখে দেন মন্দ হয়না কিন্তু? বরং ঘরের ভেতরেও ফুটবে বসন্তের ফুল। বসন্ত আপনার ঘরেও পাড়ি জমাবে। বিছানার চাদর, কুশন কাভার, সোফার কাভার সবকিছুই যদি রঙিন করে নিন তাহলে দেখতে বেশ সুন্দর লাগবে। বসন্তের রঙগুলোই হচ্ছে, হলুদ, কমলা, সবুজ কিংবা লাল। সবগুলোই উজ্জ্বল রঙ। এগুলো সবসময়ই ঘরকে উজ্জ্বল আভা দিয়ে থাকে।
৬টি ঋতুর মধ্যে বরাবরই এই ৪ টি ঋতুর প্রভাব বেশ লক্ষণীয়। আবহাওয়ার সাথে ঘরের ভেতরটাও বদলে নেওয়া জরুরী। তাই ঋতু বদলের সাথে বদলে নিন ঘরের সাজ।
ঘর সাজানো বা অন্দরসজ্জার সময় সবারই সাধারণ একটি প্রত্যাশা থাকে। আর সেটা হলো বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব যেই আসুক না কেন, ঘরে ঢুকেই যেন মুগ্ধ হয়ে যান। এমন প্রত্যাশা থেকেই কম-বেশি সবাই বসার ঘর সাজাতে বেশি মনোযোগ দেন। সে তুলনায় উপেক্ষিত থেকে যায় লিভিং রুম, বেডরুম বা কিচেন। কিন্তু ভেবে দেখুন, সারা দিনের ব্যস্ততা, ক্লান্তি, যান্ত্রিক কোলাহলের শেষে মানুষ প্রশান্তির পরশ খোঁজে নিজের বেডরুমেই। তাই বেডরুমের সাজেও থাকা চাই যত্নের ছোঁয়া। অন্দরসজ্জায় মনে রাখতে হবে, বেডরুম মূলত বিশ্রামের জন্য। তাই এর সাজসজ্জায়ও থাকতে হবে প্রশান্তির ছায়া। যেন বেডরুমে ঢুকলে নিমেষে দূর হয় দিনের ক্লান্তি। বেডরুমের সাজে শৌখিনতা আর আভিজাত্যের চেয়ে আরামের বিষয়টি বেশি প্রাধান্য পেতে পারে। এখানের বর্ণ, গন্ধ, সাজসজ্জা সবই হওয়া উচিত আকর্ষণীয়।