Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নিশ্চিত হোক

বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার করেছে। দীর্ঘ ৫০ বছরে দেশের উন্নয়নে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও নারীর ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। প্রতিটি পদে নারীরা শোষিত-বঞ্চিত। ঘরে-বাইরে নারীর জন্য অবহেলা এবং বঞ্চনার দেওয়াল তৈরি করা হয়েছে। পিতা-মাতা-ভাই-বোন একত্রে পরিবারিক বন্ধন সৃষ্টি হয়। তবে পরিবারেই নারী সবচেয়ে বেশি বঞ্চনার শিকার। শৈশব থেকেই কন্যাশিশু যেন এক করুণার পাত্র। তাকে যদি বাবা-মা লেখাপড়া শিখিয়ে একটু মানুষ করতে চেষ্টা করেন, তাহলে তো কথায় নেই।

পরিবারের ধ্যান-ধারণা এতটাই ন্যুব্জ যে, নারীকে তার পরিবারের প্রতারণা নিয়ে মুখ খুলতেও দেখা যায় না। সেখানেও শৈশব থেকেই তার মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তুমি মেয়ে তোমার অধিকার নেই কোনো বিষয়ে কথা বলার। পরিবারের সদস্যরা যা ঠিক মনে করবে সেটাই নারীর জীবনের শিরোধার্য। কিন্তু নারীও একজন পূর্ণ মানুষ। বাঁচার জন্য পুরুষের যা প্রয়োজন নারীরও কি তাই প্রয়োজন নয়? কিন্তু আমাদের সমাজ, আমাদের অতি ধর্মিক পরিবারগুলো কন্যা সন্তানের সঙ্গে সর্বোচ্চ অর্ধামিকতাটাই করে থাকেন।

বাংলাদেশের সংবিধান নারী-পুরুষের সমান অধিকার দিয়েছে। কিন্তু সেই অধিকারের কতটুকুই বা আজ অবধি রক্ষিত হয়েছে? বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে মুসলিম আইন মান্য করা হয়। যেহেতু ধর্মীয় দিক থেকে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। তাই আজ পর্যন্ত সমান অধিকার নিয়ে আন্দোলন চললেও তা নিশ্চিত করা যায়নি। এবার আসা যাক মুসলিম আইনে সম্পত্তি বণ্টনের যে অধিকার সেটা কতটা রক্ষিত হয়?

বাংলাদেশে যদি নারীর সম্পত্তি বণ্টনের ওপর জরিপ চালানো হয় তবে দেখা যাবে নিরানব্বই ভাগ নারীই উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি বণ্টনে বঞ্চনার শিকার। পিতা-মাতা কন্যা সন্তানকে পাত্রস্থ করতে পারলেই তাদের সাধারণ ধারণা সব দায়িত্ব শেষ। কন্যা মাঝে মাঝে বাবার বাড়ি বেড়াতে আসবে এটাই তার জন্য অনেক। এরওপর আবার সম্পত্তির হিসেব কিসের! যে নিজেই পরের বাড়ির সম্পদ তাকে তো সম্পত্তি বণ্টন করে দেওয়া চলে না। বিয়ে করে তারা তো অন্যের ঘরে চলে যাবেই। এই হীন মানসিকতা আজও রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজমান। মুখে ধার্মিকতার বুলি আওড়ানো সমাজ আজও কেন নিশ্চিত করতে পারছে না নারীর অধিকার?

সবক্ষেত্রে নারীর ওপর চাপিয়ে দিয়ে পার পাওয়া পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অভ্যেস। তারা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে আবেগকে পুঁজি করে। মা, বোনকে আগে থেকেই বশে রাখার চেষ্টা করেন যাতে আর যাইহোক সম্পত্তিতে তাদের নজর না পড়ে। কিন্তু পরিবার, সমাজ ভুলে যায় উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি নারীর অধিকার। নারীর প্রতি করুণা নয়। এক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় না বললেই নয় সম্পত্তির সুষম বন্টন তো হয়ই না তারওপর উত্তরাধিকার সূত্রে কোন নারী সম্পত্তি পেলেও সেখানেও ভাই- আত্মীয়-স্বজনের সুলভমূল্য সেটা করায়ত্ত করার জোর প্রচেষ্টা থাকে। তাদের কাছে দিতেও নারী বাধ্য হন অনেকক্ষেত্রে। সমাজ বা পরিবারের সদস্যদের মত অনুযায়ী, বিয়ে হয়ে যেহেতু নারীটি অন্য জায়গায় চলেই গেছে তো তার তো রক্ষণাবেক্ষণের সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে ঘুরিফিরে কিঞ্চিৎ সম্পত্তি প্রদান করলেও প্রহসনের সাহায্য আবারও সেটুকু করায়ত্ত করে। এই প্রক্রিয়ায় আজ অবধি নারীর সঙ্গে চলছে প্রহসন!

নারীর জীবনযাত্রাকে সুনিশ্চিত করতে হলে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি নারীর আর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে সাহায্য করে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেকোনো উদ্যোগ নিতে গেলেই পুঁজির দরকার হয়। সেক্ষেত্রে নারীর পুঁজি হিসেবে সম্পত্তি সে জায়গাটা পূরণ করতে পারে। সরকারি- বেসরকারি ঋণদান ব্যাংকগুলোও মর্টগেজ না রাখলে ঋণ প্রদান করেন না। এক্ষেত্রে নারী কোন বড় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন না। উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পত্তি নারীর জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে অনেকটাই। তবু পরিবারের সদস্যরা যারা অতি ধার্মিকতা পরায়ণ জীবনযাপনে বাধ্য করে নারীকে, ঘরের বাইরে নারীকে দেখলেও যাদের গাত্রে আগুন জ্বলে ওঠে, নারীর উচ্চ কণ্ঠ শোনা যাদের জন্য হারাম, বেপর্দা হলে যার পিতা-মাতা এমনকি পরিবারের সম্মানহানি ঘটবে ঠিক তারাই সন্তানের অধিকার নিয়ে কথা বলতে নারাজ। এই প্রহসন থেকে কবে নারীর মুক্তি মিলবে?

এক্ষেত্রে আরও একটি মজার ঘটনা আমাদের সমাজে লক্ষ করা যায় বাবা- ভাই ঠিকই তার স্ত্রীর সম্পত্তি ভোগ- দখলে উদ্যোগী হন। কিন্তু সেই একই ব্যক্তিরা নিজের বোন, মা, স্ত্রী সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে নাখোশ থাকেন। ভয়াবহ এই মানসিকতার পরিত্রাণ ঘটতে পারে যদি নারীরা নিজেরা তাদের অধিকার সম্পর্কে সোচ্চার হয়। পুরুষতান্ত্রিক হীন মানসিকতা পরিহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি নারীর প্রতি করুণা নয়, নারীর অধিকার। ফলে নারীর সম্পত্তি গ্রহণের ফলে ভাই-বোন বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই বা কেন সম্পর্কের অবনতি ঘটবে?

বেশিরভাগ নারী সম্পত্তি গ্রহণ করতে চান না সম্পর্কে ফাঁটল ধরার ভয়ে এটিও কি আমাদের পরিবার, সমাজ সৃষ্ট নয়? নারীকে তার অধিকার নিশ্চিত করতে হলে তাকেই অগ্রগামী হতে হবে। সমাজের পরিবর্তন তখনই ঘটবে যখন নিজের সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। নারীর প্রতি করা সব অন্যায়ের বিনাশ হোক। শুভদিনের আগমনী গানে নারীরা পাক নতুন প্রাণ, মান, সম্মান।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ