Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীর বয়সের ট্যাবু ভাঙতে হবে

আমাদের সমাজে প্রচলিত ট্যাবুগুলোর অন্যতম একটি নারীর বয়স। নারীকে বয়সের গণ্ডিতে বেধে ফেলা হয়। মাপা হয় বয়সের সীমানায়৷ কোন নারী কেমন জীবনযাপন করবেন, কিভাবে থাকবেন, কত বয়সে বিয়ে হতে হবে, বাচ্চা নেওয়ার বয়স প্রভৃতি বিভিন্নরকম মনগড়া নিয়ম-নীতির আওতায় নারীকে তার বয়সে আঁটকে ফেলা হয়। আর এই বয়সের মাপকাঠিতে নারীর শিক্ষা, জীবনযাপন, গর্ভধারণ সবকিছু একসূত্রে গাঁথা হয়।

আমাদের দেশে পড়াশোনা শেষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে উঠতে বয়স ৩০-এর কোঠা পার হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে নারীর জন্য তো রেড অ্যালার্ম। কারণ নারীর এত বয়সে বিয়ে হওয়ার সম্ভবনা কম, ভালো পাত্র জুটবে না, গর্ভধারণে সমস্যা, চেহারার সৌন্দর্য থাকবে না; এমন নানাবিধ কথকতা প্রচলিত। আর সেই প্রচলিত সমাজের জোয়ারে গা ভাসাতে গিয়ে একসময় নারীরা মানসিক সমস্যায় ভোগেন। শুধু তাই নয়, সমাজের নিয়মকে ভেঙে যে নারীরা নির্দশন সৃষ্টি করতে চান; তারাও ভুক্তভোগী। পরিবার, সমাজের চাপে প্রতিনিয়ত এই নারীকে যুদ্ধ করে চলতে হয়। বিয়ে, সন্তান-জন্মদান, সংসারের বাইরে ব্যক্তির জীবনে আরও অসংখ্য কিছু পাওয়ার আছে, দেখার আছে; সে সম্পর্কে নিজেরা যেমন উদাসীন; তেমনি যেই নারী সচেতন; তাকেও খুঁচিয়ে বিপথগামী করার লক্ষ থাকে পরিবার-সমাজের।

একুশ শতকে এসেও আমাদের সমাজে গণ্য হয় নারীকে অল্প বয়সে বিয়ে দিলে পাত্রস্থ করতে সমস্যা হবে না। কিন্তু বয়স যদি ২৫-৩০ হয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে। এই চিত্র প্রায় সবক্ষেত্রেই রয়েছে। পরিবারের কথা বাদ দিয়ে বলা চলে সমাজে এ ধারায় প্রবাহিত আজও। হাতেগোনো কিছু নারী হয়তো স্বাবলম্বী হওয়ার আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন না। কিন্তু নিরানব্বই ভাগ নারীই বিয়ে করতে বাধ্য হন পরিবার এবং সমাজের চাপে। এবং বিয়ের মধ্যেও পরিবার বা সমাজের দুশ্চিন্তা ঘোচে না। নারীকে দেখতে চায় মা হিসেবে। একটি সুন্দর সংসারের কর্ত্রী হিসেবে। ফলে পরিবার, সমাজের চাহিদা পূরণে সর্বদা নারীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। এবং এই ধকল সয়তে গিয়ে নারী যখন শুধু সংসারী হয়ে ওঠে তখন সংসারে শুরু হয় অসম্মান-অশ্রদ্ধার।

বয়স দিয়ে বিয়ের মতো সামাজিক বন্ধনকে আষ্টেপৃষ্টে বেধে ফেলা হয়েছে। সমাজের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী আজ অবধি সর্বোচ্চ ২০-২৫ বছর বয়সের মধ্যে নিরানব্বই ভাগ নারীদের বিয়ে হয়ে যায়। আর এত অল্প বয়সী মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে পাত্রকে হতে হয় সম্পদের মালিক, চাকরি-বাকরিধারী, অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল। সেক্ষেত্রে আবারও পরিবার- সমাজের বলি হতে হয় নারীকে। কিন্তু এই নারীরাই যদি কোনরকম দুর্ঘটনার শিকার হয়ে স্বামীকে হারায় তাহলে বাকি জীবনটা নিঃসঙ্গ কাটানোর তকমা আমাদের সমাজই জুড়ে দিয়েছে। সমাজের এই নিয়ম পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার ফল। একজন পুরুষকে সমাজ যেভাবে ডালপালা গজিয়ে বাড়তে দেয় সেখানে নারীকে করে তোলা হয় বনসাই।

নারীর বয়স দিয়ে মাপা হয় বিয়ে, গর্ভধারণ সবকিছুই। এমনকি পোশাকের ক্ষেত্রেও নারীরা স্বাধীন নয়। সেখানে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা দিয়ে নারীকে আঁটকে ফেলা হয় স্বাভাবিকতা থেকে। প্রত্যেক পদক্ষেপে বিচার করা হয় নারী হিসেবে। সেখানে বয়স হীন মানসিকতা সম্পন্ন মানুষদের কাছে বাড়তি সংযোজন হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের সমাজে নারীর প্রতি এই অবিচার থামাতে হবে। নারী কোন জড়বস্তু নয়। স্বয়ংসম্পূর্ণ একজন মানুষ। ফলে তাদের ছোট করে দেখার কোন অবকাশ নেই। পরিবারে, সমাজে নারীর প্রতি সম্মানবৃদ্ধি করতে হবে। নারীর বয়সের মতো তুচ্ছ একটি মানসিকতা পরিহার করে নারীকে পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। অসময়ে নারীর মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে তার মেধার স্খলন না করি। চাপসৃষ্টি হলে কাজে বিঘ্ন ঘটা স্বাভাবিক। পরিবার, সমাজ নারীকে আজও চাপে রাখতে পছন্দ করে বেশি। তাই নারীর ওপর চাপিয়ে দেয় একেকটি পাহাড়। আর সেটা কাঁধে নিয়ে নিজকে প্রমাণ করতে বের হতে হয় নারীকে নতুবা দীর্ঘশ্বাসে পার করতে হয় জীবন। আমাদের পরিবার, সমাজের মানসিকতা বদলালে নারীরা মুক্ত বিহঙ্গের মতো বাঁচতে পারবে। নিজেদের সর্বোচ্চ মেধা, দক্ষতা দিয়ে দেশের সেবায় অংশ নিতে পারবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ