Skip to content

২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পৃথিবীর বিস্ময়কর কিছু লেক

আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীকে আরো সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার জন্য লেক বা জলাশয় গুলোর বিশাল ভূমিকা রয়েছে। প্রায় বিশ্বের সমস্ত বড় বড় সভ্যতা গুলো গড়ে উঠেছিল নদ নদীকে কেন্দ্র করেই। অনেকেই ঘুরতে যাওয়ার জন্য বেছে নেন লেক বিশিষ্ট কোন স্থানকে। তবে, পৃথিবীতে এমন অনেক লেক রয়েছে যে লেকগুলো আপনাদের অবাক করে দেবে।

কানো ক্রিস্টাল্স:

কলম্বিয়ার একটি নদীর নাম। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নদী। যেখানে ফুটে ওঠে রংধনুর রংয়ের মিশ্রণ। ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটি কলম্বিয়া দুর্গম পাহাড়ি পথে বয়ে চলেছে। পাথর, শেওলা, জলজ উদ্ভিদ- লাল, হলুদ, সবুজ, কমলা, গোলাপি রঙের অসাধারণ এক সমারহ ভেসে ওঠে এই নদীর পানিতে। প্রতিটা ঋতু পরিবর্তনের সাথেই এই নদী সেজে ওঠে তার ভিন্ন রঙের সাজে। যেখানে স্রোত বেশি থাকে সেখানে লাল রঙের গুল্ম জাতীয় পদার্থটি পাথরের গায়ে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। নদীর তলদেশে আর পাথরের গায়ে জন্মানো শেওলা গুলো হয় সবুজ রঙের। আর এখানকার পানি এতটাই স্বচ্ছ যে, দেখলে নীলচে মনে হয়। এই নদীর বালু গুলো হয় হলুদ রঙের আর সঙ্গে রয়েছে ১২০০ মিলিয়ন বছরের পুরনো পাথর। যা ধূসর রং ছেড়ে কালচে রং ধারণ করেছে। নদীর পাশে থাকা জলাশয় আর গুহার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। জলবায়ু ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় এখানে পর্যটকদের যাতায়াত বেশ কয়েক বছর বন্ধ ছিল। ২০০৯ সাল থেকেই তা আবারো উন্মুক্ত করা হয়। ফলে পর্যটকরা আবারো প্রাকৃতিক সুন্দর এই নদীটি কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।

রিও টিউটো নদী:

এই নদীটি স্পেনে অবস্থিত। রক্তবর্ণ এই নদীর জল যতটা না আপনাকে অবাক করবে তার থেকে বেশি চমকে উঠবেন যখন জানবেন এই নদীর জল কতটা ভয়ঙ্কর। এই নদীর জলে উচ্চমাত্রায় অ্যাসিড থাকার ফলে, কোন প্রাণী এখানে বাঁচতে পারে না। এই জলে এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। যা জলের সঙ্গে মিশেই এতটাই শক্তিশালী ও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে, যেকোনো প্রাণী বা মানব দেহের স্পর্শ এলে মুহূর্তের মধ্যে মাংস গোলে কঙ্কালের পরিণত হয়ে যেতে পারে। এর কারণ হলো আশেপাশে তামা, রুপা ও সোনার খনি থেকে নির্গত বিভিন্ন ধাতুর বর্জ্য এই নদীর জলে মিশে এই নদীকে করে তুলেছেন রক্তবর্ণ লাল এবং বিষাক্ত।

ফুটন্ত লেক:

লেক বলতে আমরা বুঝি ঠাণ্ডা বা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় পানির লেক। তবে এটি একটি প্রাকৃতিক আজব সৃষ্টি। ডোমিনিকার রাজধানী থেকে ৬.৫ মাইল (১০.৫ কিমি) পূর্বে এই লেকটি অবস্থিত। যেখানে সব সময় টগবগ করে ফুটতে থাকে পানি। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারী এই লেক। যে লেকে রয়েছে ফুটন্ত পানি। ডমিনিকার রিপাবলিক ন্যাশনাল পার্কে রয়েছে এই অদ্ভুত লেকটি। ১৮৭০ সালে এই লেকটি আবিষ্কার করা হয়। এ লেকে রয়েছে প্রচণ্ড ফুটন্ত জল। লেকের ধারের জলের তাপমাত্রা প্রায় ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কিন্তু লেকের মাঝখানে জলের তাপমাত্রা এখনো রেকর্ড করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। অতিরিক্ত উষ্ণতার জন্য এই জলে কোন প্রাণী বাঁচতে পারে না।

গাবসা লেক:

তিউনিসিয়ার মরুভূমিতে হঠাৎ করে দেখা মেলে এই লেকটির অথচ আগের দিনেও সেখানে কোন লেকের চিহ্ন মাত্র ছিল না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূগর্ভস্থ সাইন্সে প্লেটের নড়াচড়ার কারণে এই লেকটি সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি যেভাবেই হোক না কেন প্রচুর পর্যটক যায় লেকটি দেখতে। এখানকার প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অতিষ্ঠ হয়ে দর্শনার্থীদের সাঁতার কাটতে দেখা যায় । লেকটি প্রায় ৬৫ ফুট গভীর এবং ১ হেক্টর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। সরকারিভাবে সাঁতার কাটতে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও বিশেষজ্ঞদের মতে এখানে সাঁতার কাটা মোটেও উচিত না। কেননা ধারের কাছে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস এর কারণে লেকের পানি সহনশীল মাত্রা চেয়ে বেশি তেজস্ক্রিয় হতে পারে। যা ক্যান্সারসহ নানা প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। তবুও সেই সতর্কবাণীকে অবজ্ঞা করে, দর্শনার্থীরা নেমে পড়ছেন সাঁতার কাটতে।

পিঙ্ক লেক:

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার গোল্ডফিল্ড এক্সপ্রেস অঞ্চলে অবস্থিত একটি বিখ্যাত লেক। এ লেকটি লবণাক্ত এবং গোলাপি বর্ণের। তবে এর গোলাপি বর্ণ সব সময় থাকে না। যখন লেকের লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে যায়, তাপমাত্রা উচ্চ হয়, যথেষ্ট আলো থাকে তখন এক ধরনের শৈবাল বিটা-ক্যারোটিন সংশ্লেষ করে সেই শৈবাল থেকেই লাল রঙ ছড়াতে থাকে এবং লেকের তলদেশে জন্মানো লবণখোর ব্যাকটেরিয়া লবণ প্রেমী চিংড়ি এবং শৈবালের ভারসাম্যপূর্ণ উপস্থিতি লেকটিকে গোলাপি করে তোলে। লেকটিতে দেখা মেলে নানা জাতের পাখি এবং সারা বছর বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকেরা এ লেক ভ্রমণ করতে আসে।

অনন্যা/জেএজে

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ