Skip to content

৬ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তৃণমূল নারীর উন্নয়ন নিশ্চিত হোক

নারীর উন্নয়ন মানে জাতির উন্নয়ন। আর জাতি উন্নত হলেই দেশের উন্নয়ন ঘটবে। ফলে দেশ, জাতির বৃহত্তর উন্নতি নিশ্চিত করতে হলে এ দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের দিকে নজর দিতে হবে। তৃণমূল নারী বলতে যাদের মাথা গোঁজার নিশ্চিত জায়গাটুকু নেই, দুবেলা দুমুঠো অন্ন জোটাতে হিমশিম খেতে হয়, যেসব নারী বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত গ্রাম পর্যায়ের ; তাদের কথা বলছি। এই নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে।

সর্বত্রই নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত। তবে গ্রামের নারীরা অবহেলা-বঞ্চনার শিকার বেশি। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল না হওয়ার কারণে তারা বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়। মৌলিক চাহিদাগুলো যেমন পরিপূর্ণভাবে পূরণ করতে পারে না, তেমনই স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হলেও সম্মানহানি বা মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকার কারণে এসব নারীরা দিনের পর দিন অত্যাচার সহ্য করে। নারীর প্রতি অত্যাচার, নিপীড়ন কমিয়ে আনতে হলে, নারীকে স্বাবলম্বী করে তুলতে হলে প্রথমেই তৃণমূল নারীদের কথা ভাবতে হবে।

তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের উন্নয়ন ঘটলে দেশের উন্নয়ন ঘটবে। এ লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে তৃণমূল নারীদের তালিকা করে তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আগ্রহ ও দক্ষতা অনুযায়ী কাজের ধরন ভিন্ন রাখতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিলে এসব নারীদের ভাগ্যন্নোয়ন ঘটবে সহজেই। এজন্য ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যেন ছোটখাটো ব্যবসা, গরু-ছাগলের খামার, মুরগি, হাঁস পালন, মাছচাষ, কৃষিকাজ , নার্সারি করে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে পারেন। আর নারীরা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হলে বিপথে যাবে না। সংসারের হাল ধরতে পারবে। নিজেদের ভালো-মন্দ সহজেই বুঝে নিতে পারবে। পরিবারে নারীর সম্মান বৃদ্ধি পাবে। মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব গড়ে উঠবে।

বর্তমান সরকারের উদ্যোগে নারীর ক্ষমতায়ন সৃষ্টি করার লক্ষ্যে নারীদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে কারিগরি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে মৃতপ্রায় লোকশিল্পকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে। এজন্য গ্রাম-পর্যায়ের নারীরা সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে পারে। একদিকে নারীদের আর্থিক সচ্ছলতা আসবে, অন্যদিকে দেশের সংস্কৃতিও রক্ষা পাবে।

করোনাকাল ও তৎপরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনীতি বড় ঝুঁকির সম্মুখীন। এই ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হলে প্রত্যকটি জনসম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। তৃণমূল নারীদেরও কাজে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এতে করে তাদের নিজের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল হবে। বিন্দু বিন্দু জল থেকেই সিন্ধুর সৃষ্টি হয়। ফলে সবাই যদি যৌথ উদ্যোগে নারীদের সহোযোগিতা করে, তবেই নারীর জন্য যেমন সুদিন আসবে, তেনি দেশের চলমান সংকট দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

বর্তমানে গ্রামকেন্দ্রিক অসংখ্য নারী সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। তবে তা যথেষ্ট নয়। এই সুযোগ-সুবিধার খাত আরও বাড়াতে হবে। নারীদের নিজেদের ভাগ্য উন্নায়নের জন্য তাদের এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার, সমাজের ভয়ে গুটিয়ে থাকলে কোনোদিন মুক্তি মিলবে না। তৃণমূল নারীদের উন্নয়ন সমাজের তথা দেশের উন্নয়ন। তাই এই নারীদের উন্নয়নের জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ