‘অনন্যা শীর্ষদশ ২০২১’ সম্মাননা প্রদান শনিবার
দেশের শীর্ষস্থানীয় নারীভিত্তিক ম্যাগাজিন পাক্ষিক অনন্যা কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছর ১০ জন আলোকিত নারীকে সম্মাননা দিয়ে থাকে। ১৯৯৩ সাল থেকে এই সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই বছর অর্থনীতিবিদ, করপোরেট ব্যক্তিত্ব, মঞ্চাভিনেতা ও নির্দেশক, অদম্য সাহসী, বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, আলোকচিত্রশিল্পী, মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষক, নারী উদ্যোক্তা ও প্রথম ফিফা রেফারি নারীকে ‘অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা ২০২১’ দেওয়া হবে। এছাড়া বিশেষ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ একজন বিশিষ্ট নারী পাবেন আজীবন সম্মাননা।
আজ শনিবার (১৯ নভেম্বর) বিকাল ৪টায় বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এই ‘অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা-২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন।
অনুষ্ঠানে সম্মাননাজয়ী নারীদের জীবনী নিয়ে বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে ও সাংস্কৃতিক পর্ব অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
যারা পাচ্ছেন এবারের ‘শীর্ষদশ’ সম্মাননা:
নাজনীন আহমেদ
অর্থনীতিবিদ
নাজনীন আহমেদ ১৯৯০ সালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে এবং ১৯৮৮ সালে যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসিতে সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে নাজনীন প্রথমে ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’ (সিপিডি)—তে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট হিসেবে কর্মরত।
বিটপী দাশ চৌধুরী
করপোরেট ব্যক্তিত্ব
বিটপী দাশ চৌধুরী বর্তমানে একটি মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংকের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স এবং ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিংয়ে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ এবং পরবর্তী সময়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এবং ফিন্যান্স নিয়ে দেশের বাইরে এমবিএ করেন। তিনি ব্যাংকের মধ্যে নন—ব্যাংকিং কাজ করে থাকেন, যেখানে প্রতিটি দিন আসলে নতুন চ্যালেঞ্জ ও নতুন কর্মপরিকল্পনার।
ত্রপা মজুমদার
মঞ্চাভিনেতা ও নির্দেশক
বাংলাদেশের মঞ্চ অভিনয়ের কিংবদন্তি শিল্পীদ্বয় ফেরদৌসী মজুমদার ও রামেন্দু মজুমদারের কন্যা ত্রপা মজুমদার সুনাম অর্জন করেছেন মঞ্চ অভিনয়ের পাশাপাশি নির্দেশনাতেও। থিয়েটারের ‘পোহালে শর্বরী’ নাটকটিতে বাবা রামেন্দু মজুমদারের সঙ্গে যৌথ নির্দেশনা দিয়েছেন ত্রপা। ইতোপূর্বে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন লালন ফকিরের জীবনী—নাটক ‘বারামখানা’। মার্কিন নাট্যকার লি ব্লেসিংয়ের ‘ইনডিপেনডেন্স’ অবলম্বনে ‘মুক্তি’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন ত্রপা।
শাহিনুর আক্তার
অদম্য সাহসী
সন্তানের বিপদে মায়েদের মনে যেন বিস্ময়কর শক্তি সঞ্চারিত হয়। এমনই এক কাহিনীর স্রষ্টা ইয়াকুবের মা শাহিনুর আক্তার। তার ছেলে ইয়াকুব লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন। ছেলেকে উদ্ধারের জন্য কুমিল্লার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে একা লিবিয়ায় ছুটে যান মা শাহিনুর। বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় মাফিয়াদের হাত থেকে ছেলেকে উদ্ধার করে আনেন তিনি।
সালমা সুলতানা
বিজ্ঞানী
বিজ্ঞানী সালমা সুলতানা বাংলাদেশের গবাদি পশু খাতের প্রথম নারী উদ্যোক্তা, পেশাদার ট্রেইনার ও উন্নয়নকর্মী। ২০২১ সালে সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে ১০০ এশিয়ান বিজ্ঞানীদের তালিকায় তিনি অষ্টম স্থান দখল করেন। সালমা সুলতানা বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারি প্রাণিস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা প্রশিক্ষণকেন্দ্র মডেল লাইভস্টক অ্যাডভান্সমেন্ট ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন।
রুদমীলা নওশীন
প্রযুক্তিবিদ
বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান স্কলাসটিকা থেকে ‘এ লেভেল’ শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান জোস স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেন রুদমীলা নওশীন। পরবর্তী সময়ে ডিজিটাল কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের সিইও। কাজ করছেন ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্স নিয়ে।
শাহরিয়ার ফারজানা
আলোকচিত্রশিল্পী
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার মেয়ে শাহরিয়ার ফারজানা আলোকচিত্রে ইতোমধ্যে শতাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার জীবনের দুর্বিষহ সময়ে সবচেয়ে বড় বন্ধু হিসেবে হাজির হয় আলোকচিত্রশিল্প। প্রতি বছরই অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারের বিরল পালক জমা হচ্ছে তার মুকুটে। ফটোগ্রাফি ছাড়াও শাহরিয়ার ফারজানা গত ৯ বছর ধরে ‘নারীকণ্ঠ’ নামের একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশনায় যুক্ত রয়েছেন।
সান্ত্বনা রানী রায়
মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষক
মার্শাল আর্ট কন্যা সান্ত্বনা রানী রায় ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত পাঁচটি আসরে স্বর্ণ জিতে নিজেকে সেরা প্রমাণ করেন। ২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০তম বিশ্ব তায়কোয়নদো প্রতিযোগিতায় তিনি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেন। ২০১৮ থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচটি ঘরোয়া প্রতিযোগিতা ও দুটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পাঁচটি স্বর্ণ এবং একটি করে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছেন।
মোছা. ইছমত আরা
নারী উদ্যোক্তা
মোছাম্মত ইছমত আরার বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ীর নন্নী ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ায়। একদিন বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পরচুলা তৈরির কারখানার সন্ধান পান তিনি। সেখানে ভর্তি হয়ে সেই কাজ রপ্ত করেন। তারপর নিজেই পরচুলা বানানোর কাজ শুরু করেন। এখন বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েক হাজার নারী তার মাধ্যমে কাজ করছেন। ইছমত আরার প্রচেষ্টায় গ্রামের শত শত নারীর দারিদ্র্য ঘুচেছে।
জয়া চাকমা
প্রথম ফিফা নারী রেফারি
রাঙামাটির মেয়ে জয়া ক্লাস ফোরে পড়ার সময় শিশু একাডেমিতে খেলার মাধ্যমে খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেন। একপর্যায়ে জাতীয় নারী দলে জায়গা পান জয়া। ২০১২ সালে তিনি জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন। রেফারি হিসেবে শুরু করেন নতুন জীবন। ২০১৯ সালে ফিফার রেফারি হওয়ার পরীক্ষায় পাশ করার মাধ্যমে তিনি অর্জন করেন বাংলাদেশের প্রথম ফিফা নারী রেফারি হওয়ার বিরল গৌরব।
এছাড়া এবার আজীবন সম্মাননা পেতে যাচ্ছেন কারুশিল্পী সরত মালা চাকমা। রাঙ্গামাটির তবলছড়ির মাস্টার কলোনিতে ৯০ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সাত বছর বয়সে তার কারুশিল্পে হাতেখড়ি হয়। সরত মালা সারা জীবনে দেশ—বিদেশ থেকে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। ২০১৬ সালে উইভার্স ফেস্টিভ্যালে তাকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। এখন তার একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি কম, তবুও অন্য ভালো চোখটি নিয়েই তিনি সেলাইয়ের কাজ করেন।