Skip to content

৯ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বডি শেমিংকে ‘না’ বলুন

কলেজ থেকে সহপাঠীদের সঙ্গে বাসায় ফিরছে অবন্তি। স্বভাবতই সে একটু নীরব থাকতে পছন্দ করে। তাই সহপাঠীরা হৈ-হুল্লোড় করে চললেও অবন্তি হেঁটে যাচ্ছে চুপচাপ। হুট করেই পেছন থেকে একটা ডাক, ‘কিরে মুটকি, কথা বলিস না কেন?’ এ রকমই আরেকটি ঘটনা ঘটলো বেশ কিছুদিন আগে। এক সহকর্মী আরেক সহকর্মীকে বলে উঠলো, ‘আপা, আপনি এত চিকন, একটু বাতাসেই তো উড়ে যাবেন।’ কথাটা বলেই একটা কটূক্তি ভরা হাসি দিলেন। যেই মেয়েটির উদ্দেশে বলা, সে হাসিমুখে গ্রহণ করলেও আমার রাগ হলো। এ রকম ঘটনা আমরা হরহামেশাই দেখি। তাদের কাছে ব্যাপারটা সমাজসেবা মনে হলেও এর একটা পোশাকি নাম আছে। যাকে বলে ‘বডি শেমিং’।

প্রশ্ন হচ্ছে এই বডি শেমিং কী এবং তা করলেই বা সমস্যা কী? সংজ্ঞা অনুযায়ী আপনি যদি কারও দেহের আকার, আয়তন বা ওজন নিয়ে প্রকাশ্যে এমন কোনো সমালোচনা বা মন্তব্য করেন। যেন সেই মানুষটি লজ্জাবোধ করেন বা অপমানিত হন, তবে তা বডি শেমিং। সবচেয়ে সাধারণ উদাহরণ হচ্ছে, মোটকা, শুঁটকো ও বাটকু ইত্যাদি নামে মানুষকে ডাকা।

তবে আরও ভয়াবহ উদাহরণ হচ্ছে, ‘এই তাল পাতার সেপাই, তোর দিকে কোন মেয়ে তাকাবে রে?’ বা ‘সুমো পালোয়ানও তো তোকে দেখে লজ্জা পায়, সারাজীবন তুই তোর বাপের কাঁধের বোঝা হয়ে থাকবি।’ ভয়াবহ উদাহরণগুলোই কমন বেশি। মানুষজন এত অবলীলায় বলে যে, মনে হয় সামনের জন বুঝি রোবট-অনুভূতিশূন্য।
মানবজন্মের শুরু থেকে যে জ্বলন্ত প্রশ্ন আমাদের মনে জ্বলছে, তা নিয়ে একটু কথা বলা যাক। এখনো বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে গেলে সবার আগে সৌন্দর্যের ব্যাপার আসে। ‘আগে দর্শনধারী এরপরে গুণবিচারী’। এই কথা একশতে একশ মানা হয়।

যদি মেয়ে দেখতে কালো হয়, তাহলে তো কথাই নেই। ‘মন মানসিকতা মেলে না’ বলে নাকচ করে দেয়। যদি কাউকে ভালো না লাগে, তার মধ্যে অপরাধের কিছু নেই। মানুষ বৈচিত্র্যময়, ব্যক্তিগত পছন্দের কোনো মাপকাঠি নেই। ধরুন, যে চক্ষুযুগল আপনার কাছে বিষরূপ, সেই চক্ষুযুগলেই হয়তো অন্য কেউ ভালোবাসার সমুদ্র দেখে। কিন্তু সমস্যা তখনই হয়, যখন আপনি আপনার পছন্দকে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। বাহ্যিক সৌন্দর্য অবশ্যই হেলা-ফেলার বিষয় নয়, কিন্তু সেটিকে পেতে যদি আপনার অন্তর কলুষিত হয় তবে সে সৌন্দর্য থেকে দূরে থাকাই উত্তম।

আপনি একজনকে মানসিকভাবে আঘাতে জর্জরিত করা মানে আপনার পরবর্তী প্রজন্মকেও আত্মবিশ্বাসহীনতায় ঠেলে দেয়।

বডি শেমিং কারা করে? যারা হীনন্মন্যতায় ভোগে, তারা অন্যজনের মনে আঘাত দিয়ে শান্তি লাভ করে। যারা অবুঝ, তারা না বুঝেও অন্যজনকে আঘাত করতে পারে। আর সত্যিকারের খারাপ মানুষ, যারা তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই অন্যকে আঘাত করে।এই বডি শেমিংয়ে ফল খুবই খারাপ হয়।


ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ক্যানসার রিসার্চ টিম এই প্রশ্ন নিয়ে গবেষণা করে বের করেছেন, ফ্যাট শেমিং কোনো উপকার তো করেই না, উল্টো ওজন বাড়িয়ে স্থূলতার দিকে ঠেলে দেয়। অপমানজনক কথা শোনার জন্য মানুষ অবসাদগ্রস্ত হয়ে খাবারের মাঝে সান্ত্বনা খোঁজে। পরিণামে ওজন বেড়ে চলে। বডি শেমিংয়ের আরেকটা ভয়াবহ ফল হলো আত্মবিশ্বাসহীনতা। প্রতিনিয়ত নেগেটিভ মন্তব্য শুনতে শুনতে একপর্যায়ে মানুষ সেটাই বিশ্বাস করা শুরু করে। আর এর ফল হচ্ছে ডিপ্রেশন, অ্যানোরেক্সিয়া ও বুলেমিয়া নার্ভোসার মতো মানসিক ব্যাধি। যার সঙ্গে আসে পুষ্টিহীনতাজড়িত অনেক রোগ।

কেউ কেউ ড্রাগস বা গাঁজা খাওয়া শুরু করে শুধু শুকানোর জন্য। কিন্তু আর ফেরত না আসতে পেরে নিজের, পরিবারের তথা সমাজের জীবন ধ্বংস করে দেয়। যথাযথ নির্দেশনা না থাকার পরেও বেড়ে চলেছে লাইপোসাকশন, গ্যাস্ট্রিক ক্লিপিংয়ের (পাকস্থলীতে ক্লিপ দিয়ে তার আয়তন ছোট করা) মতো অপারেশন। যার বেশির ভাগই হয় রোগীদের চাপাচাপিতে।

মানুষের তির্যক মন্ত্যব্যে মাত্র ১০ বছর বয়সে আত্নহত্যার চেষ্টা করে। সে বলে, ‘কেউ যখন শারীরিক কোনো তির্যক মন্তব্যের শিকার হয়, সে এক পা এক পা করে খাদের দিকে এগিয়ে যায়। খাদের এপারে জীবন, অপারে আত্মহত্যা। তুমি হয়তো ভাবছ যে তোমার একটা টিটকারিতে কীই-বা এসে যাবে। কিন্তু যাকে বলছ হয়তো সে অনেকের টিটকারি শুনতে শুনতে খাদের কিনারাতেই দাঁড়িয়ে ছিল, তোমার একটি তুচ্ছ মন্তব্যের জন্যই সে হয়তো আজ রাতে খাদের ওপাশে লাফিয়ে পড়বে। তুমি জানলেও না যে পরোক্ষভাবে তুমি একটি জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী হলে।’

ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলে কেমন শোনায় ব্যাপারটা?
সোশ্যাল মিডিয়ায় কারও ছবি যদি সত্যিকার খারাপ হয়, ১০ জনের কাছে খারাপ লাগে, তাহলে তাকে ব্যক্তিগতভাবে বলুন। আড্ডার আসরে কাউকে নিয়ে বাজে মন্তব্য না করাই ভালো। কাউকে বডি শেমিং না করে তার ভালো করার চেষ্টা করুন। সবাইকে হাসিখুশি রাখুন। বডি শেমিং বন্ধ করুন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ