মাইগ্রেন আক্রান্ত নারীদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে
বর্তমানে ‘মাইগ্রেন’ আমাদের সবার কাছে অতি পরিচিত একটি শব্দ। দৈনন্দিন জীবনে আমরা সবাই কমবেশি কাজের চাপে থাকি। দীর্ঘ সময় কাজে থাকলে বা কোনো কিছুতে একনাগাড়ে ব্যস্ত থাকলে ব্রেনে চাপ পড়ে মাথাব্যথা করতে পারে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে এ ব্যথা সেরেও যায়। কিন্তু মাইগ্রেন হলো বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা, যা সহজে সারে না।
মাইগ্রেন কী
মাইগ্রেন হলো মস্তিষ্কের এক ধরনের নিউরোলজিক্যাল পেইন বা যন্ত্রণা। এ ব্যথা মাথার যেকোনো একপাশ থেকে শুরু হয়। আস্তে আস্তে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে এবং তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়। এতে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়।
মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত কপালের একপাশে হয়ে থাকে। আর এই ব্যথা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে বমিভাব কিংবা বমি। মাইগ্রেনের ব্যথা ৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে।
মাইগ্রেন সমস্যা হলে চোখের সামনে আলো জাতীয় কিছু দেখা, শরীরের একপাশ ঝিনঝিন করার সমস্যা হতে পারে। পনির, চকলেট, কফি, অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা, দুর্গন্ধ, দীর্ঘসময় খালি পেটে থাকা, অতিরিক্ত আলো বা রোদ কিংবা খুব কম আলো, অতিরিক্ত শব্দ কানে এলে এই সমস্যা হতে পারে।
মাইগ্রেন কেন হয়
মাইগ্রেন জেনেটিক কারণে বেশি হয়ে থাকে। শুধু মাথাব্যথার জেনেটিক কারণ যতটা থাকে, তার চেয়ে অন্য অনেক কারণ, পরিবেশ, শরীরের অবস্থা, স্ট্রেস, এমন সব অবস্থা এর জন্য দায়ী। পুরুষের চেয়ে নারীদের এই সমস্যা বেশি হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি হাজারে প্রায় ৮০-৮৫ জন নারী মাইগ্রেন ব্যথার ভুক্তভোগী।
মাইগ্রেনের উপসর্গ
মাইগ্রেনের সমস্যা হলে মাথার ভেতরে ব্যথা হয়। এই ব্যথা সাধারণত মাথার একদিকে হয়, ডান অথবা বামদিকে। তবে অনেক সময় মাথার দুদিকেই ব্যথা হতে পারে ও বমি ভাব থাকতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, মাইগ্রেনের ব্যথা পুরোপুরি নিরাময় হয় না। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে এ ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। মাইগ্রেনে মাথার যন্ত্রণার সঙ্গে শরীরে আরও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। মাইগ্রেন হলে মাথার সঙ্গে চোখ, পেট, মুখ, নাক, অনেক কিছুই আক্রান্ত হয় বা হতে পারে। মাইগ্রেন হলে আলো, শব্দ, গন্ধ, দৃষ্টিতে সমস্যা, চিন্তায় অস্বচ্ছ হয়ে যাওয়া, ফোকাসিং পাওয়ার কমে যাওয়া, শরীরজুড়ে অস্বস্তি, বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া, কথা বলতে সমস্যা, রোদ, তীব্র আলো, হালকা শব্দ ও ধুলোবালি সহ্য করতে পারে না।
মাইগ্রেন হলে এক ধরনের নিউরোকেমিক্যাল সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসকরা বলছেন, এই নিউরোকেমিক্যাল সমস্যার কারণে মাইগ্রেন হওয়ার আগেই কিছু প্রি-সিম্পটম দেখা যায়। এ অবস্থাটিকে বলে Aura। এমন হলে চোখে কম দেখতে থাকে, জিগজাগ লাইন দেখতে থাকে, অথবা ফ্লাশিং লাইট দেখতে থাকে। তখনো মাথার যন্ত্রণা শুরু হয় না। এরপর মস্তিষ্কের কিছু অংশ তার নরমাল কাজগুলো করতে পারে না বলে ব্রেইন ফ্রগ বা মস্তিষ্ক কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে যেতে থাকে। এতে মস্তিষ্কের কগনিটিভ পাওয়ার বা চিন্তা ধারার ক্ষমতা কমে যায়।
মস্তিষ্কের সঙ্গে পেটের একটি সংযোগ আছে। সংযোগটি তৈরি করে শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ু ভেগাস নার্ভ। মাইগ্রেনে এটির কাজ বা মস্তিষ্কের সঙ্গে শরীরের বা পেটের অংশের কার্যক্ষমতা কমে যায়। ফলে পরিপাকের কিছু সমস্যা যেমন দেখা দেয়, সঙ্গে পেটে খাবার থেকে গেলে সেই খাবারটি অন্ত্রে পরিশোধিত হওয়ার কাজটি কমে যায়। আর তাতে বমি বমি ভাব হয় অথবা বমি হতে থাকে।
প্রতিকার
মাইগ্রেন ব্যথার স্থায়ী কোনো প্রতিকার নেই বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তাদের মতে, মাইগ্রেন হলে নিজেকে রক্ষা করার সবচেয়ে বড় উপায় হলো, ঠিক যে কারণে হয়, সে কারণগুলো খুঁজে বের করতে পারা। তারপর সে কারণগুলো হতে না দেওয়া। এক্ষেত্রে মাইগ্রেন যেহেতু সাধারণ মাথাব্যথার চেয়ে বেশি হয়, মাসে যদি একাধিকবার হয়, তবে একটি মাইগ্রেন হেডেক ডায়েরি মেনটেইন করা।
সাধারণ মাথাব্যথা হলে যেকোনো পেইন কিলার সহজে কাজ করে। কিন্তু মাইগ্রেন হলে স্পেসিফিক পেইন কিলার যতটা ভালো কাজ করে, সেই মেডিসিন যথাসময়ে খেলে আরও দ্রুত কাজ করে। বিশেষ করে ট্রিপটান জাতীয় ওষুধ মাইগ্রেন এর ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। একনাগাড়ে এক সপ্তাহের বেশি এই জাতীয় মাইগ্রেনের ওষুধ খাওয়া যাবে না। সঙ্গে বমি বমি ভাব হলে বমির ভাব দূর করার ওষুধ খাওয়া যাবে। তবে সব ক্ষেত্রেই আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারলে ভালো। মাইগ্রেন যেহেতু জেনেটিক ও পরিবারের অন্য সদস্যদের হয়ে থাকে, সঙ্গে খুব স্পেসিফিক প্যাটার্নের লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তাতে মাইগ্রেন ডায়াগনোসিস করা সহজ হয়।