Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডায়বেটিস : নারীরা সচেতন হবে কবে

বর্তামনে ডায়বেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য বয়সের বাধা নেই। সব বয়সী নারী-পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে ডায়বেটিস এমন একটি রোগ যা শরীরে অন্যান্য রোগের উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ফলে ডায়বেটিস সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান এবং প্রতিকার সম্পর্কে জানতে হবে। একবার এ রোগের উপস্থিতি ঘটলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের চেয়ে যাতে ডায়বেটিস আক্রান্ত না হোন সে লক্ষেই জীবনযাপন করতে হবে।

বিশ্বজুড়েই ডায়বেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি ৭ সেকেন্ডে দেশে ১ জন ডায়বেটিস আক্রান্ত হচ্ছেন। শুধু তাই নয় দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ জানেনই না যে তাদের শরীরে ডায়বেটিসের উপস্থিতি আছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যাদের প্রায় অর্ধেকই নারী। কিন্তু আক্রান্তদের অর্ধেকেরও বেশি মানুষই জানেন না তাদের ডায়াবেটিস আছে। এমনকি দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২৬ জন নারীই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে ভোগেন। আবার তাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই পরবর্তীকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। ডায়াবেটিস সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং প্রতিরোধের উপায় জানা না থাকয় বেশিরভাগ মানুষ এখন ডায়বেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ডায়বেটিস বা বহুমূত্র রোগ মূলত ইনসুলিন জনিত সমস্যা। শরীরে যখন ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় বা ইনসুলিন উৎপাদন হওয়ার পরও তা কর্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে না তখন শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি থাকে। আর অতিরিক্ত মাত্রায় শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি থাকাকেই ডায়বেটিস রোগ বলা হয়। খালি পেটে যদি গ্লুকোজের মাত্রা ৭ এর বেশি এবং খাওয়ার পর গ্লুকোজের মাত্রা ১১ এর বেশি থাকে তখন ধরে নেওয়া হয় শরীরে ডায়বেটিসের উপস্থিতি আছে। ডায়বেটিস একধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার।

ডায়বেটিস আক্রান্তের ধরনঅনুযায়ী চারটি স্তর। এগুলো হলো টাইপ-১, টাইপ-১-এ, টাইপ-১-বি, টাইপ-২।

টাইপ-১ অনুযায়ী ব্যক্তির শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা জমে যায়। এবং শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা কমতে থাকে। এক্ষেত্রে রোগীকে ইনসুলিন না দিলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। ইনসুলিন হলো অগ্ন্যাশয়ের প্রধান হরমোন। যা গ্লুকোজকে রক্ত থেকে কোষের মধ্যে প্রবেশ করা নিয়ন্ত্রণ করে।

টাইপ-১-এ. অটোইমিউনিটির জন্য বিটা কোষের ধংসের ফলে এই টাইপ-১-এ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে ।
টাইপ-১-বি. দুঃখজনকভাবে এর সঠিক কারণ জানা যায়নি। ফলে ডায়বেটিস সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি।
টাইপ-২-এর ক্ষেত্রে রোগীদের শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন হলেও তারা ব্যবহার করতে পারেন না। নিয়মিত ব্যায়াম এবং খাদ্যাভাসের সাহায্যে এটির পরিবর্তন করা যায়।

সাধারণত ডায়বেটিস আক্রান্ত হলে কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। ঘন ঘন ঘন প্রস্রাব, অতিশয় দুর্বলতা, চোখে ঝাপসা দেখা, সার্বক্ষণিক ক্ষুধা, অধিক তৃষ্ণা ও মুখ শুকিয়ে যাওয়া, স্বল্প সময়ে দেহের ওজন হ্রাস, ঘন ঘন সংক্রমণ প্রভৃতি।

ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আক্রান্তের হার অনুযায়ী নারীদের সংখ্যা অনেক বেশি। সব বয়সী নারীরাই ডায়বেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি গর্ভবর্তী নারীও এ থেকে ছাড় পাচ্ছেন না। দেহে অতিরিক্ত মেদ জমা এই রোগের অন্যতম কারণ। অসচেতনতার কারণে চিকিৎসা না করা, অন্ধত্ব, কিডনি-বৃক্কের অক্ষমতা প্রভৃতি কারণেও ডায়বেটিস আক্রান্ত হয়।

ডায়বেটিস সব রোগের সহায়ক হয়ে কাজ করে। তাই ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেতন হওয়ার কোনই বিকল্প নেই। প্রথমত নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ডিসিপ্লিন, ডায়েট এবং ডোজ এই তিন নিয়ম পালন করলে ডায়বেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি পরিমিত খাবার গ্রহণ করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। মিষ্টিজাতীয় খাবার সর্বাবস্থায় পরিহার করতে হবে। তবে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখতে হবে। হঠাৎ গ্লুকোজ কমে নীল হলেও মৃত্যু ঝুঁকি। ফলে শরীরে অস্থিরতা, আনচান করা, ক্লান্তি লাগা, ঘাম হলে দ্রুত ডায়বেটিস চেক করতে হবে। যদি গ্লুকোজের পরিমাণ নিচে নেমে যায় তবে দ্রুত মিষ্টি জাতীয় হালকা খাবার খেতে হবে।

এখন হসপিটালগুলোতে ডায়বেটিস রোগীদের জন্য বই করে দেওয়া হয়। এই বইয়ে তালিকা দেওয়া আছে। কোনদিন কত পয়েন্ট থাকে, এবং মাস শেষে কতটা উন্নতি বা অবনতি তা পরীক্ষা করার জন্য। ডায়বেটিস আক্রান্ত রোগীদের হসপিটালের সদস্য হয়ে রুটিন মেনে জীবনযাপন করতে হবে। এর ফলে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলবে।

ডায়বেটিস থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে শরীর চর্চা করতে হবে, খাবারের দিকে নজর দিতে হবে, পরিমিত খাবার গ্রহণ এবং খাবারটা হতে হবে স্বাস্থ্যকর। অতিরিক্ত তেল, মসলা জাতীয় খাবার, ভাজা- হাইহিট খাবার পরিহার করা উচিত। পর্যাপ্ত পানি পান করা। যাদের হৃদরোগ রয়েছে, রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, উচ্চ রক্তচাপ, তাদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

যাদের পরিবারে ডায়বেটিস আছে তারা পূর্বেই যদি জীবনধারা পাল্টে ফেলেন তাতে সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। ডায়বেটিস বিষয়ে সচেতনতাই পারে এ থেকে মুক্তি দিতে। তাই প্রত্যেকের জীবনযাপন পদ্ধতির প্রতি সচেতন হতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ