Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিবন্ধী নারীকে অবহেলা নয়

নারীরা অবহেলিত সর্বত্র। তারওপর নারী যদি প্রতিবন্ধী হয়, সেক্ষেত্রে তার জীবনধারণ শোচনীয়। সামগ্রিক উন্নয়নে নারীদের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলেও বিশেষভাবে প্রতিবন্ধী নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে নেই তেমন কোনো উদ্যোগ। ফলে এই নারীদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়েই জীবনাবসান ঘটে।

প্রতিবন্ধী নারী যদি হাতে-কলমে কাজ শিখে স্বাবলম্বী হতে পারে, তবে তাদের অভিশপ্ত জীবন থেকে খানিক মুক্তি মিলবে। সারাদেশে অসংখ্য প্রতিবন্ধী নারী আছেন যারা স্বাবলম্বী হতে চায়। শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা তাদের দমিয়ে না দিলেও নানারকম সামাজিক ও নীতিগত সহায়তার অভাবে তারা এগিয়ে যেতে পারে না। সমাজের মূল স্রোতে প্রতিবন্ধী নারীদের ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে প্রতিবন্ধী নারীদের স্বাবলম্বী করা প্রয়োজন। যেন তারা দেশের বোঝা না হয়ে সম্পদে পরিণত হতে পারেন। এ লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত ন্যাশনাল সার্ভে অন পারসনস উইথ ডিজ্যাবিলিটিস (এনএসপিডি) ২০২১ এর জরিপে বলা হয়েছে, দেশের পুরুষদের ৩.২৯ শতাংশ এবং নারীদের ২.৩৪ শতাংশ কোনো না কোনভাবে প্রতিবন্ধী। এদের মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধীর সংখ্যাই বেশি।

জরিপের তথ্যে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে প্রতিবন্ধীরা আশঙ্কাজনক হারে পিছিয়ে আছে। জাতীয় পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষায় প্রায় শতভাগ এনরোলমেন্ট হলেও প্রতিবন্ধী শিশুদের মাত্র ৪০.৫৫ শতাংশ স্কুলে যেতে পারছে। সারা দেশে বেকারত্বের হার মাত্র ৫ শতাংশের মধ্যে হলেও প্রতিবন্ধীদের মাত্র ২৭.২১ শতাংশ কোনো না কোনো অর্থনৈতিক কাজে যোগ দিতে পেরেছেন। প্রতিবন্ধী নারীদের ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী করতে গ্রহণ করা হয়নি বিশেষ কোনো উদ্যোগ। সামাজিকভাবে বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য ও যৌন হয়রানির শিকারও হতে হয় তাদের। প্রতিবন্ধী নারীদের তিন-চতুর্থাংশ মানসিক নির্যাতনের শিকার। এই নারীদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে সরকারি, বেসরকারি, গণমাধ্যম একযোগে দায়িত্ব নিতে হবে। তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে।

বর্তমান যুগ অনেকটা অনলাইননির্ভর। ফলে প্রতিবন্ধী নারীদের উন্নয়নের জন্য ভার্চুয়াল জগৎ হতে পারে অন্যতম মাধ্যম। প্রতিবন্ধী নারীদের অনলাইন প্লাটফর্মে যুক্ত করে তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো বিশেষ সাহায্য-সহোযোগিতা করতে পারে। নারী উদ্যোক্তাসহ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য নানারকম ঋণ গ্রহণের সুযোগ থাকলেও প্রতিবন্ধী নারীদের ক্ষেত্রে তা নেই। তাদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে ঋণ, প্রশিক্ষণ, প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে মানুষের মানসিক দৈন্য দূর করতে হবে। প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ আমাদের সমাজের বাইরের কেউ নয়; বরং তারা সমাজের বিরাট একটা অংশ। ফলে তাদের স্বাবলম্বী জীবনযাপন নিশ্চিত করতে একযোগে কাজ করতে হবে।

প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। তারা ধীরে ধীরে নিজের কাজ সঠিকভাবে পালন করার দক্ষতা গড়ে তুলতে পারবে সেই বিশ্বাস রেখে সরকারি উদ্যোগে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরে বসেই অনলাইনে কিভাবে তারা প্রোডাক্ট সেল করতে পারবে, ফ্রিল্যান্সিং, ক্ষুদ্র-কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এই নারীদের জীবনকে হতাশা মুক্ত, বিষাদ-গ্লানি থেকে টেনে বের করতে তাদের হাতে ধরিয়ে দিতে কাজ। যেহেতু এই নারীরা প্রতিবন্ধী ফলে জিনিস-পত্র আনায়ন, সংরক্ষণ, দেখভালের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারেম, সেহেতু সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে একটি প্যানেল গঠন করতে হবে। প্রতিবন্ধী নারীর ধরন অনুযায়ী যেন তারাই সবকিছু সরবরাহের দায়িত্ব নিতে পারে। তারা বিক্রির ভার নেবে কিন্তু মূলে একটি সংগঠনের আওতায় কাজ করবে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ