Skip to content

৫ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতে নারী-পুরুষ ক্রিকেটারদের সমান বেতন, কী ভাবছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা

ভারতীয় ক্রিকেট কাউন্সিল (বিসিসিআই)-এর ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নারী-পুরুষ খেলোয়াড়ে আর থাকবে না বেতন বৈষম্য। এবার থেকে পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেটাররা পাবেন সমান বেতন। এমন এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের জন্য ইন্ডিয়ান ক্রিকেট বোর্ডকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে উঁকি দিচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে নারী ও পুরুষ ক্রিকেটারদের মধ্যে আকাশছোঁয়া বৈষম্যের কথা। দেশের ক্রিকেট প্রেমী মানুষেরা কী ভাবছে বিষয়টি নিয়ে?

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আফরিদা জিননুরাইন উর্বী বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যে সব নারী ক্রিকেট কিংবা কোনো পেশাগত খেলা খেলেন, তারা শুধু মাঠেই লড়াই করেন না। তাদের প্রতিনিয়ত লড়াইটা করতে হয় পরিবারের সঙ্গে, সমাজের অচলায়তন আর ধর্মীয় গোঁড়ামির সঙ্গে, দারিদ্র্যের সঙ্গে। বাংলাদেশে যে আর্থসামাজিক কাঠামো তাতে ‘প্যাশন বনাম পেশা’ বিতর্কে পেশাভিত্তিক খেলাধুলা খুব কম পরিবারই সাদরে গ্রহণ করার বাস্তবতা দেখে, কারণ আটটা পাঁচটা চাকরির যে অর্থনৈতিক সামাজিক নিরাপত্তা তা খেলাধুলায় তুলনামূলক বেশ কম। সেই ক্ষেত্র থেকে নারী ক্রিকেটারদের এই বেতনবৈষম্য তাদের খেলাধুলার প্রতিভাকে রীতিমত কবর দেওয়ার আয়োজন ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।’’

আফরিদা জিননুরাইন বলেন, ‘আমাদের দেশের এই আকাশছোঁয়া বৈষম্যকে আরও একবার বড় করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেখার একটা বড় সুযোগ হচ্ছে পাশের দেশের এই যৌক্তিক পদক্ষেপ। অচিরেই এই বৈষম্য কমে যাবে বলে আমি খুব বেশি আশাবাদী নই। তবে আমার মনে হয় এই দৃষ্টান্তটা নিয়ে জোরালোভাবে কথা বলার সঠিক সময় এটিই। খেলোয়াড় থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী সবার এখন এই দাবি জানানোর সময়। দ্রুত কোনো কিছু পাওয়া যায় না, আদায় করে নিতে হয়। যেমনটা আমাদের মেয়েরা ছাদখোলা সংবর্ধনা তাদের যোগ্যতায় এবং দাবিতে আদায় করে নিয়েছেন।’

গণমাধ্যমকর্মী মাজহারুল হক মুহাজির বলেন, ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট বোর্ড সম্প্রতি নারী ও পুরুষ ক্রিকেটারদের বেতন বৈষম্য দূর করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আমার কাছে মনে হয় একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শুধু তাদের দেশে বা আমাদের উপমহাদেশেই নয় পুরো বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশেও নারী ও পুরুষ ক্রিকেটারদের মধ্যে বেতন বৈষম্য অনেকটা প্রকট। ইন্ডিয়ার এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে চাইলেই বিসিবিও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিসিবি ক্রিকেটের মান উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এবার নারী ক্রিকেটারদের যেন কোনো রকমের বৈষম্যের শিকার না হতে হয়, সে চেষ্টাও করা উচিত বিসিবির। আর বিসিবি চাইলে তা সম্ভব বলে আমি মনে করি।’

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থী আসিফ হাসান বলেন, ‘যখন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড প্রথম নারী ও পুরুষের সমান বেতন দেয়, তখন সৌরভ গাঙ্গুলির ইন্ডিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের মাথায় এই চিন্তাটা আসে। বর্তমানে কোহলি-রোহিতদের সমান বেতন পায় স্মৃতি মান্ধানারা। এটা ক্রিকেটের উন্নতিতে বড় ভূমিকা রাখে। বেতন ও ভবিষ্যতের জন্য ইন্ডিয়ান ক্রিকেট বোর্ড যে কাজটা করেছে, তাকে একদম পার্ফেক্ট বলা যায়। কারণ রোহিত-কোহলিদের থেকে তো মান্ধানাদের যোগ্যতা কোনো দিক দিয়েই কম নয়। পরিসংখ্যান কিংবা সাফল্য সেই কথাই বলে।’

আসিফ হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে একজন পুরুষ ক্রিকেটার একটা সিরিজ চলাকালীন সময় যে ডিএ পায়, সেটা নারী ক্রিকেটারদের বেতনের কাছাকাছি। অল্প সুবিধার মধ্যেও সালমা,জাহানারাসহ সবাই দেশকে বিশ্বের বুকে অন্য রকম একটা অবস্থান তৈরি করে দিয়েছে। এখানে বাংলাদেশের মিডিয়াও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। পুরুষদের ক্রিকেট নিয়ে যেমন আলোচনা এবং প্রচার হয়, সেটা নারীদের ক্রিকেটে হয় না। বেতন ও বাকি সুবিধা না পাওয়ার পেছনে এটাও বড় একটা কারণ। বিসিবি যদি এমন সিদ্ধান্ত নেয় নারী ক্রিকেটে আমরা আরও তারকা পাবো,ছেলেদের মতো পরিবার মেয়েদেরও ক্রিকেট খেলতে আগ্রহী দেখাবে। বিসিবিও নিউজিল্যান্ড কিংবা ইন্ডিয়ার পথে এগোতে পারে,এতে করে লাভটা দেশের ক্রিকেটেরই হবে। সাফল্য নারী ক্রিকেটে আরও কয়েক ধাপ ওপরে উঠবে। ’

ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-এর শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসেন ইফতি বলেন, ‘ভারত এখন বেতনবৈষম্য দূর করে আলোচনায় আর আমাদের দেশের নারী ক্রিকেটারদের বেতন-ভাতা কম হওয়ায় আলোচনায়। এর অন্যতম কারণ হলো আমাদের ক্রিকেট অবকাঠামো, যেখানে নারী ক্রিকেটকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না৷ যদিও নারী ক্রিকেটে আসতে আসতে সাফল্য আসা শুরু করেছে৷ নারীরা আগে সেভাবে অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধাও পেতো না। যেটা এখন এসে তারা কিছুটা হলেও পাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘১০ বছর আগেও বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট আজকের এই অবস্থায় ছিল না। তখন খেলার জন্য তেমনভাবে খেলোয়াড়ও পাওয়া যেতো না৷ যেটা কিন্তু এখন প্রচুর পরিমাণে মেয়েরা খেলার জন্য এগিয়ে আসছে। এটাকে পেশা হিসেবে নিতে এগিয়ে আসছে৷ আমার মতে আমাদের পক্ষে ছেলে-মেয়েদের বেতনের এই বৈষম্য সম্পূর্ণ দূর করা না গেলেও যাতে মেয়েদের একটা সম্মানজনক বেতনের ব্যবস্থা করা হয়, যাতে তারা সামনের দিকে আরও সাফল্য বয়ে আনতে পারে।’

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফাহমিদা সৃষ্টি বলেন, ‘দুইটা দল যেহেতু সেইম কাজ করে, সেইম সংগঠনের অধিনে তো সেই হিসেব যদি করিও তাহলেও পুরুষ ক্রিকেটার আর নারী ক্রিকেটারদের বেতন কম হওয়ার কোনো কারণ নেই। ইন্ডিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের পদক্ষেপ অত্যন্ত সাধুবাদ জানানোর মতো একটি পদক্ষেপ। খুব দ্রুতই বিসিবির এই ধরনের একটি সিদ্ধান্তে আসা উচিত। কারণ, বাংলাদেশের দুই দলের যে বেতনবৈষম্য তা আকাশছোঁয়া। এমন যদি হতো নারী দলের তেমন কোনো অবদান নেই, তাও জিনিসটা কিছুটা হজম করা যেতো। কিন্তু ঘটনা একদম উলটো। বাংলাদেশ নারী দলের এত এত অর্জন থাকার পরও এই ধরনের বেতন বৈষম্য অত্যন্ত দৃষ্টিকটু।’

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ