Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ হোক 

আজকাল পত্রিকার পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ে এক একটি বীভৎস ঘটনার ছবি। ঘটনাগুলো দেখে মানুষকে পশুর চেয়েও অধম বলেই মনে হয়। নারীর প্রতি এতটা আক্রোশ পুরুষতন্ত্রের? পরস্পর সহযোগিতার জন্যই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে কিন্তু মানব জাতির মধ্যে ন্যূনতম মনুষ্যত্বও হারিয়েছে। আগে যে পরিবারই ছিল মানুষের সব আশা-ভরসা-বিশ্বাসের জায়গা এখন তা রূপান্তরিত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে।

বাবা-মায়ের কাছে সন্তান নিরাপদ নয় আবার স্বামীর কাছেও স্ত্রী নিরাপদ নয়। একসঙ্গে থাকতে গিয়ে মতের অনৈক্য-দ্বন্দ্ব দেখা দিতেই পারে কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করা বুদ্ধিমানের কাজ। আর যদিও সমস্যার সমাধান না হয় তবে দুজনের পথের দিশা পাল্টানো উচিত। কিন্তু পরিবার-সমাজের কথা বিবেচনা করে নারীরা মুখ বুজে সব সহ্য করে। মেনে নেয়। একটি পর্যায়ে দাম্পত্য কলহের জেরে নারীটি হত্যা বা আত্মহত্যা শিকার হচ্ছেন।

শুধু দাম্পত্য কলহের জেরেই যে নারীর খুন-গুম-হত্যা হচ্ছে এমনটি নয়। নারীর প্রতি নির্যাতনের আরও বহুবিধ মাত্রা পাশবিকতার পর্যায়কেও হার মানিয়েছে। আদিম যুগের বর্বরতার শিকার হচ্ছে অনেক নারী। গণপরিবহনে, কর্মক্ষেত্রে, পরিবারের সদস্যদের সংস্পর্শে সবর্ত্রই নারীর প্রতি ঘটে চলেছে অসহনীয় আচরণ। নারীরা স্বাভাবিক জীবনযাপনের পরিবেশ পাচ্ছে না। পথে বের হলেই নানারকম সংকোচ, ভয় নিয়ে নারীদের বের হতে হয়। কর্মক্ষেত্রে হোক আর গণপরিবহনে হোক সব জায়গায় নারীর জন্য পুরুষতন্ত্র ফাঁদ পেতে রেখেছে। শিকার ধরার জন্য পশু যেমন ওঁৎ পেতে থাকে অসৎ উদ্দেশে তেমনই আজকাল মানুষও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।

আজকাল মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতি-শ্রদ্ধা-সম্মানের অভাব। তাই বন্য প্রাণীকে মানুষের বশে আনতে হলে যেমন তার বিষ দাঁত ভাঙতে হয়, শিং ভেঙে দেওয়া হয় ঠিক তেমনই অসভ্য, বর্বর পুরুষতন্ত্রকে থামাতে হলে আইনের কঠোর ও তাৎক্ষণিক প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

চলন্ত বাসে সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে নারী। সাধারণ জনগণের জন্য একমাত্র সহজলভ্য বাহনের মধ্যে পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলো তারা ব্যবহার করে থাকে। কাজের সূত্রে বাইরে বের হলে নারীরা গণপরিবহনেই চলাচল করে কিন্তু সেই গণপরিবহনও নারীর জন্য ভীতিকর হয়ে উঠেছে। একা নারীর পথ চলতে আরও বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কর্মক্ষেত্র, অফিস, আদালত থেকে ফিরতে সন্ধ্যা গড়ালে নারীকে প্রচণ্ড আতঙ্কে থাকতে হয়।

গণপরিবহন ব্যবহার না করে সিএনজি বা রিক্সা একা নারীর জন্য উভয়ই অনিরাপদ। ফলে যতই কাজের চাপ থাক, জ্যাম থাক না কেন নারীকে জীবনের মায়া ত্যাগ করে পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গণপরিবহনে উঠতে হয়। সেক্ষেত্রে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আবার গণপরিবহনে আর কোন নারী সদস্য না থাকলেও নারীরা আরও সমস্যায় পড়েন। এক্ষেত্রে কোন সমস্যা সম্মুখীন হলে প্রায় অধিকাংশ মানুষই নারীটিকে দোষারোপ করেন। সন্ধ্যার পরও কেন বাইরে ইত্যাদি নানারকম মন্তব্যের শিকার হতে হয়।

বাড়ির আঙ্গিনায় স্বামী, শ্বশুরবাড়ির পরিবারের কাছে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বাড়ির বাইরে কর্মক্ষেত্র, গণপরিবহন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্রই নারীকে শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে চলতে হয়। এরূপ পরিস্থিতির কবে পরিবর্তন হবে?

মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ সৃষ্টি করতে হবে। নারীও মানুষ ফলে পুরুষতন্ত্রের এই পাশবিকতাকে এখনই থামাতে হবে। এত বর্বর আচরণ চলতে থাকলে জাতির ধ্বংস সুনিশ্চিত। নারীরা সমাজে-রাষ্ট্রে যাতে কোনরকম অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার না হয় সেজন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। আজকাল মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতি-শ্রদ্ধা-সম্মানের অভাব। তাই বন্য প্রাণীকে মানুষের বশে আনতে হলে যেমন তার বিষ দাঁত ভাঙতে হয়, শিং ভেঙে দেওয়া হয় ঠিক তেমনই অসভ্য, বর্বর পুরুষতন্ত্রকে থামাতে হলে আইনের কঠোর ও তাৎক্ষণিক প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ