Skip to content

৬ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীদের সম্পর্কে প্রচলিত ট্যাবু ভাঙতে হবে

মানুষ সমাজের বাইরে নয়। একাকী সে বাস করতে পারে না। এ সম্পর্কে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল বলেছিলেন, ‘যে সমাজে বাস করে না সে হয় পশু না হয় দেবতা।’ মূলত সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করা মানুষের জন্মগত স্বভাব। এর বড় কারণ পারস্পরিক সহোযোগিতা। এককভাবে মানুষ সমস্ত চাহিদা পূরণ করতে পারে না। ফলে দলবদ্ধ হয়ে বা সমাজের অন্তর্ভুক্ত হয়ে বসবাস করতেই হয় তাকে। কিন্তু যে সাহায্য ও সহোযোগিতার জন্য মানুষের সমাজবদ্ধ হয়ে জীবনযাপন তার কতটুকু রক্ষিত হয়েছে?

বর্তমান সমাজের দিকে লক্ষ করলে সহজেই অনুমেয় হিংসা-বিদ্বেষ -খুনোখুনি ব্যতীত মানুষ এখন যেন আর সভ্য জাতি নয়। দিনের পর মানুষের মূল্যবোধ, পরস্পর সাহায্য-সহোযোগিতা, ভাবের আদান- প্রদান, শ্রদ্ধাবোধ সবই কমে এসেছে। জীবন যত যন্ত্র কেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে মানুষও যন্ত্রমানব হয়ে পড়ছে। মূল্যবোধের অবক্ষয় আরও পরিলক্ষিত হয় যখন দেখা যায় নারীর প্রতি অসম্মানজনক আচরণ। অশ্রদ্ধা। সমাজ নারীকে অবরুদ্ধ করে রাখতে চায়। আর নারী বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী, মেধা অনুযায়ী সামনের দিকে এগুতে চায়। কিন্তু সমাজের নানাবিধ বিধিনিষেধ নারীদের চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

কন্যাশিশু যখন ধীরে ধীরে শৈশব, কৈশোর পার করে তখন থেকেই তাকে ঘরের কোণে হাঁড়ি-পাতিল, পুতুল জাতীয় খেলনা দিয়ে ঘরেই আবদ্ধ করে রাখা হয়। সেখানে ছেলে সন্তানকে শৈশব থেকেই বাইরের পরিবেশে নানা প্রতিকূলতা পার করে বড় হতে শেখানো হয়। যার দরুণ ধীরে ধীরে তাদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা বাড়ে। আর কন্যাশিশুকে ঘরে আবদ্ধ রেখে তাকে করে তোলা পোষ মানা পশু-পাখির মতো। যারা মনিব বা প্রভু ছাড়া নির্বিকার হয়ে পড়ে। নিজের ভালো-মন্দ বোধ যাদের নেই ঠিক তেমনই শান্ত, নির্বিকার করে তোলা হয় মেয়েদের। ফলে পরবর্তী জীবনে নারীদের নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পরিবার এবং সমাজে প্রচলিত ট্যাবু ভাঙতে হবে।

মেয়ে বলে তাকে ঘরে আবদ্ধ রেখে শরীর, মনে মরীচিকা ধরালে ভবিষ্যৎ জীবন কণ্টকিত হবে। ফলে মেয়েদের প্রতি পরিবার এবং সমাজের সব করা যাবে না, সব বলা যাবে এই ভাবধারার পরিবর্তন করতে হবে। কন্যাশিশুদের স্বাভাবিক গতিধারায় গড়ে তুলতে হবে। লিঙ্গ বৈষম্য করে ছেলে এবং মেয়েকে আলাদা মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সমাজের মাঝে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।

মানুষ তার ইচ্ছের দাস। ফলে কারো জীবনযাপন ঠিক তার নিজ মন মতো হওয়া চায়। এতে ব্যক্তি নিজে যেমন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন তেমনই তিনি সবদিক থেকে ভালোভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারবেন। পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন, কাজের জয়গা সবটা নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী বেছে নেবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায়

নারীর পায়ে শিকল বেঁধে দেওয়া হয়। নারীরা তার স্বাচ্ছন্দ্য মতো জীবনযাপন করতে পারে না। সমাজের সব শ্রেণি-পেশার নারীর ক্ষেত্রেই তা সমান প্রযোজ্য। কোন কোন নারীরা সমাজকে তোয়াক্কা না করে নিজের মতো চলতে চান। কিন্তু সেখানেও কিঞ্চিৎ সুবিধা তারা করতে পারেন না। নানারকম মন্তব্য ভারি হয়ে ওঠে তার আশপাশ। কিন্তু সমাজে মানুষ বাস করে সভ্য জাতির তকমা নিয়ে। আর সভ্য জাতির দায়িত্ব -কর্তব্য হলো অপরের প্রতি অসম্মান না করা। অপরের কাজে হস্তক্ষেপ না করা। ফলে নারীদের সম্পর্কে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, গড়ে ওঠা ট্যাবু ভাঙতে হবে। তাহলে ব্যক্তি ভেদে ব্যক্তিকে তার মতো মেনে নিতে সমাজের কোনই সমস্যা হবে না।

নারীর জন্য সমাজের সদর দরজা উন্মুক্ত রাখতে হবে। প্রত্যকে নারী যেদিন মুক্ত বিহঙ্গের মতো খোলা আকাশ পাবে, কোন বাধা-দ্বিধা থাকবে না সেদিন জাতির প্রকৃত মুক্তি ঘটবে। সমাজের সব অন্যায়-অত্যাচারের মাত্রা কমে যাবে। তাই সমাজে নারীর জন্য যে শৃঙ্খল, ট্যাবু গড়ে উঠেছে সেগুলোকে সমূলে বিনাশ করতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ