Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী-পুরুষ ক্রিকেটারের বেতনবৈষম্য দূর হোক

ভারতের নারী ও পুরুষ আন্তর্জাতিক দলের ক্রিকেটাররা সমান ম্যাচ ফি পাবেন বলে দেশটির বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট (বিসিসিআই) সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ২৭ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বিসিসিআইয়ের অনারারি সেক্রেটারি জয় শাহ বলছেন, ক্রিকেটে ‘লিঙ্গ সমতার নবযুগে’ চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটাররা একই সমান বেতন পাবেন। জয় শাহ আরও বলেন, এই চুক্তি অনুযায়ী নারী ও পুরুষ খেলোয়াড়রা টেস্টের জন্য প্রায় ১৫ লাখ রুপি, একদিনের আন্তর্জাতিক খেলার জন্য ৬ লাখ ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য ৩ লাখ রুপি করে পাবেন।

ভারতে এই পরিবর্তন-উন্নতি হলেও আমাদের দেশে সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-শিক্ষসহ অন্যান্য খাতের মতোই নারী-পুরুষ ক্রিকেটারদের মধ্যে বেতন বৈষম্য দূরীকরণের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ এখনো দেখা যাচ্ছে না। সম্প্রতি সাফজয়ী নারী চ্যাম্পিয়নদের বিজয় শেষে দেশে ফেরার পরও তাদের জন্য উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের দেখা যায়নি।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় তাদের মতো সাহসী, দুর্নিবার, অপ্রতিরোধ্য নারীরাও জিম্মি। দুবেলা যাদের নুন আনতে পানতা ফুরায়, সেই নারী খেলোয়াড়দের জীবনকে অনেকটাই পঙ্গু করে দিয়েছে এরূপ বৈষম্য। কিন্তু তাদের অপরিসীম মনোবল অর্থনৈতিকভাবে ধস্ত করলেও মানসিকভাবে তারা শক্তিশালী। ফলে বিজয় ছিনিয়ে আনতে কোনো কিছুই তাদের জীবনকে স্থবির করতে পারেনি। কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের প্রতি এরূপ বৈষম্য কেন?

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারী-পুরুষের এমন বেতন বৈষম্য, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার দায় কর্তৃপক্ষের। পুরুষ খেলোয়াড়দের জন্য যদি মাসে মাসে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা যায়, সেই একই ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষেত্রে কেন এত সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে? এর উত্তর সম্ভবত এমন হতে পারে, প্রথমত, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, দ্বিতীয়ত, নারীর প্রতি বিশ্বাস বা আস্থাহীনতা, তৃতীয়ত, ধর্মীয় গোঁড়ামি, চতুর্থত, কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, পঞ্চমত, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নারীদের জন্য বিনিয়োগে অনীহা, ষষ্ঠত, সরকারি উদ্যোগের অভাব। আধুনিকতার বাতাবরণে নিজেদের আবদ্ধ করলেও দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকে লালন করেন।

ফলে নারীদের যে সমাজ, রাষ্ট্র থেকে কিছু পাওয়ার আছে, সে বিষয়ে সবাই উদাসীন। এমনকি নারীরা তাদের দক্ষতা, যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হলেও টেনেহিঁচড়ে তাদের নিচে নামানোর পাঁয়তারা করেই চলছে পুরুষতন্ত্র। যারা নারীদের যোগ্যতা-দক্ষতাকেই আজও সম্মান করতে পারেনি; সেই সমাজ, রাষ্ট্রের কাছ থেকে নারীর প্রতি সম-অধিকার আশা করা অনেকটাই দিবাস্বপ্নের মতো। দিনের পর দিন নারীরা পরিবার থেকে খেলার মাঠ সবর্ত্রই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। আর সেই বৈষম্যকে দূর করতে জাতিকে জাগতে হবে।

ক্রীড়াঙ্গনে নারী খেলোয়াড়দের বৈষম্য মূলত বেতন বৈষম্য, সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য। তবে এই বৈষম্য কিন্তু নতুন কোনো ঘটনা নয়। বরং নারীদের সব ক্ষেত্রেই এরূপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই জীবন পার করতে হয়। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে কোথাও নারী ব্যাপক আকারে বৈষম্যের শিকার হয়, কোথাও কম। তবে নারী খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে এ বৈষম্য আকাশ-পাতাল।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও নারী-পুরুষ ক্রিকেটারদের বেতনবৈষম্য দূর করার উদ্যোগ নিতে পারে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে বাজেটের একটি অংশ নারী খেলোয়াড়দের উন্নয়নকল্পে রাখতে হবে। তাদের বেতন কাঠামোর প্রতি নজর দিতে হবে। সরকারি উদ্যোগ, ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ, সৎ ইচ্ছাই পারে নারীদের প্রতি ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করতে। নারী খেলোয়াড়দের প্রতি এরূপ বৈষম্য দূরীকরণে সমাজ, রাষ্ট্রকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ