Skip to content

৯ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেয়েদের শারীরিক সক্রিয়তা বাড়াতে হবে

সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের শারীরিক সক্রিয়তা সংক্রান্ত প্রথম বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বর্তমান যে চিত্র উঠে এসেছে, তা জাতির জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। প্রতিবেদনটিতে দেখানো হয়েছে, দেশের ১৭-১৮ বছর বয়সী কিশোরীদের ৬৯ শতাংশ শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়। এবং ১৮ বছরের উর্ধ্বে ৪০ শতাংশ নারীরা শারীরিকভাবে অসক্রিয়। এছাড়া ৭০ বছরের নারীদের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তার হার ৪৬ শতাংশ! যা ভবিষ্যৎ জাতির জন্য নানামাত্রিক সমস্যা সৃষ্টি করবে।

এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়তা কমিয়ে আনা না যায় তবে ২০২০-২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ হৃদরোগ, স্থূলতা, ডায়বেটিস ও অনন্য রোগে ভুগবে। যার জন্য সরকারের প্রতি বছর আর্থিক ব্যয় হবে প্রায় ২,৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। ফলে যদি মেয়েদের শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়তা কমিয়ে আনা না যায় তবে অর্থনীতির ওপর যেমন বাড়তি চাপ পড়বে তেমনই শারীরিক জটিলতার কারণে জাতি পিছিয়ে পড়বে। ফলে মেয়েদের শারীরিক সক্রিয়তা বাড়াতে হবে। সে লক্ষ্যে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারীদের নিয়ে নতুন পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। স্কুল, কলেজগুলোতে মেয়েদের জন্য গভর্নিং বডিকে নতুনভাবে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

শুধু পড়াশোনায় নয় বরং আমাদের সন্তানেরা যাতে সুস্থ-সবল জীবনযাপন করতে পারে সেলক্ষ্যে কাজ সম্পাদন করতে হবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী কিশোর-তরুণদের চেয়ে কিশোরীদের শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার হার বেশি। ১১-১৭ বছর বয়সী কিশোরদের শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়তার হার ৬৩ শতাংশ সেখানে কিশোরদের ৬৯ শতাংশ। আবার ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে পুরুষেরা যেখানে ১৬ শতাংশ, সেখানে নারীদের নিষ্ক্রিয়তার হার ৪০ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী মেয়েদের শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার হার দেখেই অনুমেয় নারীদের প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ জীবন!

কিশোরী-তরুণী সর্বোপরি নারীদের শারীরিকভাবে সক্রিয় করতে প্রথমত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। স্কুল-কলেজের সীমানায় উপর্যুক্ত খেলার মাঠ রাখতে হবে। কিশোরীদের খেলাধুলায় উৎসাহিত করতে হবে। সেলক্ষে শারীরিক শিক্ষার নারী শিক্ষক মোতায়েন করতে হবে। যাতে পিতামাতাও সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ না হন। ব্যাডমিন্টন, দৌঁড়, সাইক্লিং, ব্যায়ম, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবারগুলোর মৌলবাদী চিন্তা দূর করতে হবে। আমাদের সমাজে সাধারণভাবে গড়ে ওঠা চেতনায় হলো খেলাধুলা করা শুধু ছেলেদের কাজ। বাইরে ঘুরে বেড়ানো, দৌঁড়- ঝাপ শুধু মেয়েরা করতে পারবে না। এই চিন্তা ধারা থেকে বের না হলে জাতি মুখ থুবড়ে পড়বে। কারণ শরীর তো আর চিন্তার গণ্ডিতে আঁটকে থাকবে না!

বাড়ির মধ্যে আটকে রেখে ফার্মের মুরগির মতো মেয়েদের বেড়ে ওঠাকে রুখতে হবে। বরং শারীরিক, মানসিক সুস্থতার লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে, খেলার মাঠে প্রভৃতি জায়গায় নারীদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

মেয়েদের জন্য সমাজে গজিয়ে ওঠা দেয়াল ভাঙতে হবে নতুবা ৪০ শতাংশ নারীর নিষ্ক্রিয় জীবন থেকে আরও দিনে দিনে বৃদ্ধি পাবে! যেখানে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে নারী-পুরুষের সম সহযোগিতায় বা দেশের পুরো জনশক্তিকে সম্পূর্ণরূপেকাজে লাগানোর চেষ্টা সেখানে ধর্মীয় আবরণ, অপব্যাখ্যা দিয়ে কিশোরী মেয়েদের থেকে পূর্ণ বয়স্ক নারী, প্রৌঢ়া নারী সবাইকে একটি শেকলে বেঁধে ফেলা হয়েছে। একটি অস্বাভাবিক মানসিকতা চাপিয়ে দিয়ে জিম্মি করা হয়েছে। যার দরুণ অনেকের মনোবল থাকা সত্তেও লোকলজ্জা, ভয়, ভীতি নিয়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম নয়! এর ফল শুধুই আমাদের মানসিক দৈন্য। যদি হীন মানসিকতার কণ্ঠরোধ করা যায় তবে জাতির জীবনকে পঙ্গুত্ব থেকে রক্ষা করা যাবে। ফলে মেয়েদের ঘরবন্দী নয় তাদের আলোবাতাসের সাহায্যে বেড়ে উঠতে উৎসাহী করতে হবে।

পরিবারগুলো থেকে মেয়েদের শিখাতে হবে একজন মানুষ সে। ফলে সব কাজ তার জন্য সমানভাবে গ্রহণীয় ও পালনীয়। সামর্থ্য অনুযায়ী বেছে নিতে কোনোটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। কিশোরীদের, নারীদের এই অসক্রিয়তা দূর করতে হলে আমাদের কন্যা সন্তানের চোখের পট্টি আমাদেরই খুলতে হবে। গান্ধীরর মতো চোখের ওপরে যদি কাপড় বেঁধে দেওয়া হয়, তবে দেওয়ালে দেওয়ালে ঠোকর খাওয়া অস্বাভাবিক নয়!

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হর্তাকর্তারা যেন শুধু নারী বলে দমিয়ে না রাখেন। মানুষের মতো আচরণে যেদিন এ সমাজে নারীদের গ্রহণ করা হবে সেদিন নারীরা শারীরিকভাবে বেশি সক্রিয় হয়ে উঠবে। তবে মেয়েদের সক্রিয় করতে পরিবার-সমাজের যৌথভাবে কাজ করতে হবে। যদি নারীদের শারীরিক জটিলতা বাড়ে, তবে পরবর্তী প্রজন্মও অসুস্থ, দুরারোগ্য ব্যধিতে ভুগবে! ফলে মায়ের জাত নারীদের কল্যাণ কামনায় সব প্রতিবন্ধকতাকে রুখে দিতে হবে। খেলাধুলা, ভ্রমণ, বই পড়া, সাঁতার, গান, নাচ, ছবি আঁকা প্রভৃতি কাজে বিশেষভাবে মেয়েদের সংযুক্ত করতে হবে।

বাড়ির মধ্যে আটকে রেখে ফার্মের মুরগির মতো মেয়েদের বেড়ে ওঠাকে রুখতে হবে। বরং শারীরিক, মানসিক সুস্থতার লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে, খেলার মাঠে প্রভৃতি জায়গায় নারীদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ