Skip to content

৬ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীর প্রতি নির্যাতন থামছেই না!

দেশের নারী সমাজ একটা অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যে দিন পার করছে। মানুষের মাঝে কোমলতা, বিনয়, মমত্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধের আজ বড়ই সংকট! প্রতিনিয়ত একটি কালো অশরীরী ছায়া যেন আমাদের গ্রাস করতে বসেছে। কোথাও যেন এতটুকু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেই। প্রতিনিয়ত এক উত্তেজন, উদ্বেগ, হতাশা, হাহাকারের দাবদাহে পুড়ছে পুরো দেশ! মানুষ এখন জীবন-মৃত্যুর সন্নিকটে। একের পর এক হত্যা, গুম, খুন, ছিনতাই, রাহাজানি, অন্যকে ফাঁকি দিয়ে সম্পদ আত্মসাৎ, চোরাচালান, মাদক সবমিলিয়ে জাতি এখন বিপর্যস্ত।

এই পরিস্থিতিতে চলছে নারীর ওপর জোর-জবরদস্তি, শাসন, হত্যার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। পুরুষের হাতের ক্রীড়নক পুতুলে পরিণত হয়েছে নারী! সব রাগ, জেদ, ক্রোধের বলি হচ্ছে নারী! সংসার চালাতে হিমশিম, সন্তানের চাহিদা পূরণ করতে না পারা, কাজে সফল না হওয়া পুরুষতান্ত্রিক মাসিকতায় সবকিছুর জন্য দায়ী করা হয় নারীকে। এককথায় নারী হচ্ছে ‘যত দোষ নন্দঘোষ’ প্রকারের ঘটনাই ঘটছে।

নারীর প্রতি নির্যাতন যেন কিছুতেই থামছে না। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে নির্যাতনের মাত্রা। তাহলে মানুষের মাঝ থেকে ভয় শব্দটি চলে গেছে? নাকি মানুষের মাঝে বিবেক-মনুষত্ব-ভালোবাসা-শ্রদ্ধাবোধের ঘাটতি দেখা দিয়েছে? কেন নারীর প্রতি শারীরিক-মানসিক অত্যাচার আর কেনোই বা তাকে খুন করা?

গত সোমবার (১৭ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১ টার দিকে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার সন্দেহের জেরে ফরিদা বেগম নামে এক নারী রাবেয়া বেগম নামে আরেক নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বলা হয়েছে, ওই নারীর চুল কেটে, শারীরিক নির্যাতন করে এলাকাবাসীর কাছে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করে ফরিদা বাহিনি। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। এই কাজে তাকে সহোযোগিতা করে আরও ৭-৮ জন। রাতের আঁধারে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় তার ওপর নির্যাতন চালায় তারা। ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে মরিচের গুঁড়া ছড়িয়ে দেওয়া হয়, চুল কেটে দেওয়া হয়, মারধর কোনোকিছুই তারা বাদ দেয় না।

ক্রোধ, রাগ, জেদের মুখে লাগাম দিতে হবে। মানবিক হয়ে ওঠার শিক্ষা দিতে হবে। নতুবা জাতির জন্য দুর্বিষহ দিন আরও ঘনিয়ে আসবে।

এদিকে ময়মনসিংহের ফুলপুরে স্বামীর দায়ের কোপে খুন হয়েছেন ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রোজিনা। ১০ বছর আগে আনোয়ারুলের সঙ্গে বিয়ে হলেও প্রতিনিয়ত সাংসারিক দ্বন্দ্ব তাদের লেগেই থাকতো। তার ওপর চলতো পাশবিক নির্যাতন। কিন্তু গতকাল (১৯ অক্টোবর) রাত ১টার দিকে উপজেলার পয়রী ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ রোজিনার স্বামী ও শাশুড়িকে আটক করেছে।

ঘটনাগুলো খুবই মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক! প্রতিনিয়তই এরূপ নিপীড়নমূলক ঘটনা ঘটেই চলেছে। কোনোক্ষেত্রে দেখা যায় স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন আবার স্বামীর দ্বারা স্ত্রীর ওপর এমন জীবনবিনাশকারী ঘটনা! তবে নারীর প্রতি নির্যাতনের হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কিন্তু এরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার জন্য কারা দায়ী? আর কেনই বা সমাজে এমন অস্থিতিশীল পরিবেশ প্রতিহত করা যাচ্ছে না?

টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত বৃদ্ধি করার আগে মানুষের মানবিকতা, সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি করতে হবে। কালে কালে মানুষ পশু-পাখি, হিংস্র জীবজন্তুর সঙ্গে মোকাবিলা করে টিকে আছে কিন্তু এই হিংস্র জন্তুর চেয়ে পাশের ব্যক্তিটি যখন বেশি অমানবিক, পশু হয়ে ওঠে তখন রাবেয়া, রোজিানার মতো পাশবিকতার শিকার হতে হয়! নারীর প্রতি সর্বোপরি মানুষের প্রতি মানুষের দরদ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে হলে জাতিকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে হবে। টাকা বা অর্থের নিঃশ্বাসে যতদিন মানুষ বাঁচবে ততদিন প্রাকৃতিকভাবে মানুষের জন্য মানুষ আরও ভয়াবহ উঠবে! মানুষকে স্বার্থহীন হতে হবে। ক্রোধ, রাগ, জেদের মুখে লাগাম দিতে হবে। মানবিক হয়ে ওঠার শিক্ষা দিতে হবে। নতুবা জাতির জন্য দুর্বিষহ দিন আরও ঘনিয়ে আসবে।

পরিবারগুলোকে সন্তানদের বিদ্যার দৌড়ে প্রথম হওয়ার চিন্তা-চেতনা ভুলে সন্তানকে প্রকৃত মানুষ করে তুলতে হবে। সত্যি যদি মানবিকগুণ সম্পন্ন মানুষ করে তোলা যায় আমাদের সন্তানদের তবে নারীদের ওপর অত্যাচার যেমন কমবে, বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মাকে দেখবে, পারিবারিক সম্প্রীতি গড়ে উঠবে, স্বামী-স্ত্রী-বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে আন্তরিকতা সৃষ্টি হবে, দুর্নীতি কমবে, সহমর্মিতা বাড়বে। সর্বোপরি জগতে বিরাজমান অস্থিতিশীলতা কমবে। তাই আগে মানুষ হয়ে উঠি আমরা।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ