বিশ্ব হাড়ক্ষয় দিবসে নারীরা সচেতন হোক
আজ ২০ অক্টোবর। বিশ্ব হাড়ক্ষয় দিবস। এই দিনটিতে বিশ্বব্যাপী হাড়ক্ষয় রোধে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়। হাড়ক্ষয় রোগে নারী-পুরুষ উভয়ই সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের জীবনযাপন পদ্ধতি, শারীরিক-মানসিক সুস্থতার ব্যাপারে নারীরা বেশ উদাসীন। দিনশেষে নিজের জন্য একটু সময় বের করে শরীর ও মনের পরিচর্যার দিকে মনোনিবেশ করেন না এমন নারীর সংখ্যায়ই বেশি।
তাছাড়া নারীরা পরিবারের কল্যাণ কামনা করতে করতে নিজের জীবনের সুখ-আহ্লাদ, শরীরের যত্ন নেওয়ার মতো কোনো মানসিকতাও তাদের গড়ে ওঠে না। তবে মানুষের জীবন অনেকটাই ইঞ্জিনের মতোই। যদি ইঞ্জিনের যত্ন নেওয়া না হয়, তবে মরিচা পড়বেই আর বয়স বৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে এর জটিলতাও ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকে। ফলে শরীর ও মনের পরিচর্যা যতটা একজন ব্যক্তি ততটাই সুস্থ থাকবেন।
বয়স বৃদ্ধির ফলে নারীদের শারীরিক নানা জটিলতা বৃদ্ধি পায়। তার একটি হাড় ক্ষয় রোগ। এটি অনেকটা ঘাতক রোগ ক্যানসারের মতো। শরীরের মাঝে ধীরে ধীরে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাড়ক্ষয় বাড়তে থাকে।
পঞ্চাশোর্ধে প্রতি ৩ জন নারীর ১ জন ও প্রতি ৫ জন পুরুষের ১ জন হাড়ক্ষয় রোগে ভোগেন। তাদের সবারই হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। বিশ্বে হাড়ক্ষয়ের কারণে প্রতি বছর ৯০ লাখ মানুষের হাড় ভেঙে যায়। অর্থাৎ প্রতি ৩ সেকেন্ডে ১ জনের হাড় ভেঙে যায়। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক পরিমাণে ঝুঁকিপূর্ণ। পঞ্চাশোর্ধ নারী-পুরুষের হাড় ভাঙার ঝুঁকি ৪০ শতাংশ। নারীদের হাড়ক্ষয়জনিত কারণে ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা পুরুষের তুলনায় বেশি। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই এ ব্যাপারে জানেনও না! হাড়ক্ষয় দিবসে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে সচেতন করে তোলা হয়।
একটানা বসে, শুয়ে থাকা যাবে না, সুষম খাবার খেতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম, ভিটামিন ‘ডি’ যুক্ত খাবার খেতে হবে। এর জন্য নারীদের উচিত বয়স কম থাকতেই হাড়ের যত্ন নেওয়া। ব্যায়াম এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
হাড়ক্ষয় হওয়ার জন্য মূলত বয়সটা প্রাধান্য পায়। মানুষের জন্ম পর থেকে প্রথম ২০ বছর হাড় ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার চেয়ে হাড় লম্বা ও মোটা হয়। ফলে এ সময় হাড়জনিত কারণে শারীরিকভাবে তেমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। এরপরের স্টেজ ২০-৪৫ এই সময়কালে হাড় তৈরি ও ক্ষয় প্রায় সমান সমান পর্যায়ে থাকে ফলে এ সময়টাতেও মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা প্রবাহিত হয়। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয় ৪৫-এর পর থেকে। কারণ বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে হাড়ের বৃদ্ধি আর হয় না বরং হাড়ের ক্ষয় বাড়তে থাকে। নারীদের ক্ষেত্রে হাড়ক্ষয় রোগে ভোগার সম্ভাবনা বেশি এবং পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখন পর্যন্ত, এ রোগে বিশেষভাবে নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন!
নারীদের শরীরে এস্ট্রোজেন নামক এক প্রকার হরমোন আছে। যা নারীদের সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধিতে সহয়তা করে। একইসঙ্গে মাসিকচক্রে কাজ করে। পাশাপাশি এই হরমোন হাড়ক্ষয় রোধেও সাহায্যকারী ভূমিকা পালন করে। তবে ৪৫ বছর বয়সে এই হরমোন হঠাৎ-ই কমতে থাকে। ধীরে ধীরে নারীদের মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। এই সময় হাড় ক্ষয়কারী কোষের কাজ বেড়ে গেলে হঠাৎ করেই হাড় তৈরির চেয়ে হাড় ক্ষয় বেশি হয়। হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। এটাকেই পোস্ট মনোপজাল বা মাসিক বন্ধ পরবর্তী হাড়ক্ষয় বলে। পাশাপাশি পুরুষের স্বাভাবিক গতিতেই হাড় ক্ষয় হতে থাকে এবং ৬৫-৭০ বছর বয়সে তাদেরও হাড়ক্ষয় বৃদ্ধি পায়।
নারীদের ক্ষেত্রে মূলত বয়স বৃদ্ধি, ৪৫-এর আগেই মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া, অপারেশনের কারণে ডিম্বাশয় ফেলে দেওয়া, আগে হাড়ভাঙা, যেকোনো কারণে দীর্ঘদিন শুয়ে-বসে থাকা, আগে হাড়ভাঙা, বাবা-মা বা পরিবারিক সূত্রে, স্বাস্থ্য ঝুঁকির মতো কাজ করা দীর্ঘদিন, শরীরের ওজন কমে যাওয়া, এসব কাজে সম্পৃক্ত থাকলে ধীরে ধীরে হাড়ক্ষয় রোগ সৃষ্টি হতে পারে। তবে যদি প্রতিরোধের জন্য নারীদের শারীরিক যত্ন বাড়াতে হবে।
একটানা বসে, শুয়ে থাকা যাবে না, সুষম খাবার খেতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম, ভিটামিন ‘ডি’ যুক্ত খাবার খেতে হবে। এর জন্য নারীদের উচিত বয়স কম থাকতেই হাড়ের যত্ন নেওয়া। ব্যায়াম এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
রোগীর কোমর ব্যথা, মেরুদণ্ড বাঁকা বা কুজো হওয়া, উচ্চতা কমে যাওয়া, যেসব ওষুধ খেলে হাড়ক্ষয় বাড়ে এমন ওষুধ খেলে প্রভৃতি ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এই রোগের সাধারণত তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না তবে উপরিউক্ত সমস্যাগুলো দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হবে। তাই হাড়ক্ষয় রোধে নারীদের সচেতনা জরুরি।