Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইলা মিত্র : সাহসিকতার অন্য নাম

ইলা মিত্র (১৮ অক্টোবর ১৯২৫-১৩ অক্টোবর ২০০২) এক সংগ্রামী, সাহসী, মানবতাবাদী নারী। যিনি বঞ্চিত-শোষিত মানুষের জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। বাবার চাকরিসূত্রে কলকাতার বেথুন স্কুল, কলেজে পড়াশোনা করেছেন। বেথুন কলেজে বি.এ সম্মানের ছাত্রী থাকা অবস্থায় তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জমিদার মহিমচন্দ্রের পুত্র রমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। রক্ষণশীল জমিদার পরিবারে বিয়ে হওয়াতে ইলা মিত্রের জীবনে জটিলতা বাড়তে থাকে। যেই নারী কলেজ জীবন থেকেই রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় ছিলেন জমিদার পরিবারে বিয়ে হওয়াতে তার বাইরে বের হওয়া ছিল রীতিমতো যুদ্ধ। তবে এই কাজে তাকে সহোযোগিতা করেন তার স্বামী রমেন্দ্র মিত্র।

রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের নিয়ম মেনে তাকে ঘরেই বন্দি থাকতে হতো। তাই তার হাতে অফুরন্ত সময় ছিল। ওই সময় গ্রামের মেয়েদের পড়ানোর ভার তার ওপর এসে পড়ে। বাড়ির ৪০০ গজ দূরে একটি স্কুলে তাকে যেতে হতো গরুর গাড়ি চড়ে। পরে অবশ্য ধীরে ধীরে পরিবর্তন ঘটে। স্বামী রমেন্দ্র মিত্র জমিদারের বংশধর। তাই জমিদারি শোষণের নানাবিধ বিষয় সম্পর্কে তিনি জানতে পারেন রমেন্দ্র মিত্রের কাছে। কৃষকের ওপর পাশবিক নির্যাতন তাদের খুব আলোড়িত করে। ফলে পরবর্তীকালে জমিদার-জোতদারের শোষণের বিরুদ্ধে একযোগে রমেন্দ্র মিত্র এবং ইলা মিত্র কাজ শুরু করেন। কমিউনিস্ট রমেন্দ্র মিত্র পারিবারিক ঐতিহ্য ও মোহ ত্যাগ করে সাধারণ কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়ান। তিনিই ইলা মিত্রকে তাদের কাজে যোগ দিতে উৎসাহ দেন। এরপরই ইলা মিত্র তেভাগা আন্দোলনের সক্রিয় নেত্রী হয়ে ওঠেন।

১৯৫০ সালের ৭ জানুয়ারি ইলামিত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। পরে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি কলকাতায় চলে যান।সেখানে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় চারবার সদস্য নির্বাচিত হন। এ

ব্রিটিশ শাসনের আগ পর্যন্ত জমির মালিক ছিল চাষীরা। মোগল আমল পর্যন্ত জমির এক তৃতীয়াংশ বা কখনো কখনো তার কিছু কম ফসল খাজনা হিসেবে জমিদার বা স্থানীয় শাসনকর্তার মাধ্যমে রাষ্ট্রকে দিতে হতো। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালুর মাধ্যমে বাংলার কৃষক সমাজকে নিষ্পেষিত করে ফেলা হয়। জমির পরিমাণ অনুযায়ী খাজনা দিতে হতো। জমিদারের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আসে জোতদার। যারা জমিদারের কাছে জমি ইজারা নিতো। ফলে কৃষকেরা জমিতে যা উৎপাদন করতো তার প্রায় সবটাই জমিদার এবং জোতদারের ভাগে চলে যেত। সাধারণ কৃষকদের হাড়ভাঙা খাটুনি ছাড়া তাদের ভাগ্যে দুবেলা দুমুঠো ভাতও জুটতো না ঠিকমতো।

কৃষকদের এত কষ্টের জীবনে তাদের অধিকার আদায়ের পথে সক্রিয় হয়ে ওঠেন ইলা মিত্র। যিনি নিজের জীবন বাজি রেখেছেন এদেশের কৃষক শ্রেণিকে জমিদার-জোতদারের হাত থেকে রক্ষার্থে। দেশ ভাগের পর এদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী কমে গেলেও ইলা মিত্রের শাশুড়ি এদেশে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রমেন্দ্র মিত্র ও ইলা মিত্রও এদেশের সাধারণ কৃষকদের অধিকার আদায়ের জন্য পূর্ব পাকিস্তানে থেকে যান। কিন্তু আজও কৃষক-শ্রমিকের মুক্তি কি ঘটেছে? ইলা মিত্রের আন্দোলন যে অর্থে ছিল সেই শোষিত-বঞ্চিত শ্রেণির মুক্তি আজও ঘটেনি। তাদের জীবনের অন্ধকার আজও দূরীভূত হয়নি। তখন জোতদারেরা-জমিদারেরা শোষণ করেছে সাধারণ কৃষকদের। আজও এই জোতদার শ্রেণি সমাজে বিরাজমান। যারা সাধারণ নাগরিক ও কৃষকের মধ্যস্ততাকারী। প্রকৃত দাম কৃষকদের পকেটে যায় না।

আন্দোলন জোরদার হওয়াতে বারবার তাদের আত্মগোপন করতে হয়েছে। তবু তিনি দমে যাননি। কৃষকের ভাগ্য ফেরাতে লড়াই করেছেন। উৎপাদিত ফসলের তিনভাগের দুভাগ চাষীদের ঘরে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় কৃষকের জীবনের পরিবর্তন হয়নি। আজকের প্রেক্ষাপটে তেভাগা আন্দোলনের গুরুত্ব কম নয়। নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এখনই। যুগে যুগে জন্ম হোক ইলা মিত্রদের। শোষিত শ্রেণির মুক্তি ঘটুক।

১৯৫০ সালের ৭ জানুয়ারি ইলামিত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। পরে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি কলকাতায় চলে যান।সেখানে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় চারবার সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর আজকের দিনে তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী মৃত্যুবরণ করেন। প্রয়াণ দিবসে বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি, মানবদরদি ইলা মিত্রের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ