Skip to content

৮ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানসিক স্বাস্থ্য : নারীর সচেতনতা জরুরি

আমাদের সমাজে নারীরা পরিবারের ভালো-মন্দ চিন্তায় সর্বদা এতটাই তৎপর থাকেন, যে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভাবনার কোনোই অবসর পান না। সাধারণ সর্দি, কাশি, জ্বরকে কিছুটা প্রাধান্য দিলেও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে বেশিরভাগই উদাসীন। এমনকি অনেকে জানেনই না যে মনের সুস্থতার জন্যও পরিচর্যা জরুরি। ফলে নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদাসীনতায় তাদের শারীরিক জটিলতা বেড়েই চলেছে।

বর্তমান সময়ে এসেও প্রায় বেশিরভাগই মানুষই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে নারাজ। এ সম্পর্কে সামাজে গড়ে ওঠা ট্যাবু ভাঙেনি! বেশিরভাগই মনে করেন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা মানেই হলো মানসিক রোগ। আর মানসিক রোগীরা তো অনেকটা ভারসাম্যহীন, পাগলরূপেই পরিচিত। ফলে এই প্রচলিত ভুল ধারণার কারণে নারী-পুরুষ উভয়েই তার মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হলে চেপে যান। খোলামেলা কথা বলতে চান না কারও সঙ্গে। এতে করে জটিলতা দিন দিন আরও বাড়ে বৈ কমে না। যখন প্রচণ্ড পরিমাণে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে, তখন ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হন। যা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কোটা পেরিয়ে মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হতে থাকে!

মানসিক ব্যাধি মানসিক স্বাস্থ্যের একটি দিক। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ ও কর্মক্ষমতার বিপর্যয় ঘটলে মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন যাতে দীর্ঘ সমস্যা থেকে মুক্তি ঘটে। সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার পাশাপাশি মানসিকভাবে সুস্থ থাকা জরুরি। যেহেতু মনই মানুষকে সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ করে তাই মনের সুস্থতা না থাকলে জীবনযাত্রার পথ ক্রমাগত জটিল হয়ে পড়বে। তবে মানুষের জীবনের গতি প্রতিনিয়ত একই ছন্দে অতিবাহিত হয় না। দীর্ঘ চলার পথে উত্থান-পতন থাকবেই। তবে সেটাকে কেন্দ্র করে জীবনকে আবর্তিত করলে চলবে না। তাতে করে মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, ট্রমা, আত্মহত্যা প্রবণ মনোভাব, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, সাইকোসিস প্রভৃতি সমস্যা হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মতে, স্বাস্থ্য হলো শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক; এই তিন অবস্থার সুস্থ সমন্বয়। সুতরাং একজন ব্যক্তিকে সুস্থ হতে হলে অবশ্যই এই ৩ ধরনের সুস্থতাই জরুরি। শারীরিকভাবে রোগবালাই মুক্ত থাকা, মানসিকভাবে ভয়, হতাশা, বিষণ্ণতা, চাপ মুক্ত থাকা মানসিক সুস্থতার জন্য জরুরি। আর সমাজের বিভিন্ন চ্যলেঞ্জকেও মোকাবিলা করতে পারা সামাজিকভাবে সুস্থ থাকার মাধ্যম বলে পরিগণিত হয়। কিন্তু বর্তমান যান্ত্রিকতার যুগে অনেকেই শারীরিক, সামাজিকভাবে সুস্থ থাকলেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন। মনের সুস্থতা বা মানসিক স্বাস্থ্য স্বাস্থ্যের অন্যতম উপদান হলেও তা নিয়ে থাকছেন উদাসীন!

মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনা বাড়াতে নারীদের জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিকল্পে নারীরা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।

নারীদের জীবনকে সুস্থ ও সুন্দর করে তুলতে অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিতে হবে। বর্তমান যান্ত্রিক জীবনে নিজের প্রতি উদাসীন হলে তা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা তৈরি করতে পারে। ফলে নারীদের উচিত মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তৎপর ভূমিকা পালন করা।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে নিজের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। নারীদের মনে রাখতে পরিবার-পরিজন থাকবেই কিন্তু শুধু তাদের কথা বিবেচনা করে দিনরাতের সবটা সময় পার করা ঠিক না। মানুষের শরীর অভ্যাসের দাস কিন্তু তা কোন যন্ত্র নয়। সবসময় অস্বাভাবিক চাপ নিতে থাকলে একসময় শরীর হঠাৎ বিকল হয়ে যেতে পারে। ফলে সবকাজের মাঝে ব্যালেন্স করতে হবে। দিনের একটি সময় নিজের যত্ন নিতে হবে।

মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে নারীদের প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার। আমাদের সমাজে বেশিরভাগ নারীই ভালো ফলটা, মাছটা বা ভালো যেকোনো খাবার সন্তান-পুরুষ সদস্যদের দিয়ে খাওয়াতেই অভ্যস্ত। কমোল হৃদয়ের অধিকারাণী মা, বোন বোঝেনই না যে তার নিজের জন্যও পুষ্টিকর খাবার একইরকমভাবে জরুরি! ফলে এ ব্যাপারেও নারীদের অতিরিক্ত আবেগ বাদ দিয়ে কিছুটা নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে।

মানসিকভাবে সুস্থ থাকার অন্যতম উপায় পর্যাপ্ত ঘুম। আমরা জানি অনিদ্রা এমন একটি গভীর সমস্যা যা কি না আরও অনেক জটিলতার সৃষ্টি করে। ফলে মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে, চাপ মুক্ত থাকতে পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নাই। শুধু ঘুমই নয় বরং ঘুমের পাশাপাশি মানসিকভাবে তরতাজা থাকতে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নিয়মমাফিক ব্যায়াম করার মাধ্যমেও মানসিক স্ট্রেচ কমানো সম্ভব।

মনকে সুস্থ রাখতে মনের মতো কাজ করা জরুরি। অর্থাৎ কেউ যদি শখের কাজ করতে পারে বা যেই কাজকে ভালোবাসেন তার মধ্যে সময় অতিবাহিত করতে পারেন তবে স্বাস্থ্যের সমস্যা থেকে অনেকাংশেই পরিত্রাণ ঘটবে। আর যেই কাজকে ভালোবেসে করা হয় সেখানে আত্মতৃপ্তি থাকেই। ফলে ব্যক্তি তার নিজের ওপর আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। এতে করে নিজের মধ্যে ভালোভাবে বাঁচার তাগিদ অনুভব করেন যা মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সময় সবসময় একতালে একই তালে চলে না ফলে জীবনে কী পেলাম বা কী পেলাম না তার হিসেব কষতে গেলে বরং আরও হতাশা বাড়বে। যা মানসিক স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির সম্মুখীন করে তুলতে পারে। বিধায় জীবনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সাহস থাকতে হবে। একটা না একটা সময় মানুষ জয়ী হবেই। শুধু সে অনুযায়ী কাজ করে যেতে হবে। আর যাইহোক না কেন কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হবে বেঁচে থাকার জন্য। কারণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেঁচে থাকটাই সবচেয়ে বড় আত্মতুষ্টির ব্যাপার। যতটা পারা যায় প্রিয়জন বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় অতিবাহিত করতে হবে। এতে করে বাড়তি চাপ কমবে। মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে সবসময় কাজে সক্রিয় থাকতে হবে।

কাজের মাঝে ডুব দিলে অযথা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি মিলবে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে সবকিছুকে ইতিবাচক অর্থে দেখতে হবে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মনকে শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। জীবনে বিভিন্নরকম ঘটনা ঘটতে পারে। সেসব সমস্যাগুলো জিইয়ে না রেখে বরং ক্ষমা প্রদর্শন করেও কিন্তু সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

প্রাথমিকভাবে নারীরা নিজেদের সম্পর্কে সচেতন হলেই মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারবেন। তবে দীর্ঘদিন মানসিক অস্থিরতা, ডিপ্রেশন, হতশা, শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্য সম্পর্কে হেলাফেলা না করে আশু সমাধানের পথে পা বাড়াতে হবে। নারীদের জীবনকে সুস্থ ও সুন্দর করে তুলতে অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিতে হবে। বর্তমান যান্ত্রিক জীবনে নিজের প্রতি উদাসীন হলে তা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা তৈরি করতে পারে। ফলে নারীদের উচিত মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তৎপর ভূমিকা পালন করা।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ