Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পথশিশু: কন্যাদের জন্য ভয়শূন্য পৃথিবী চাই

পথশিশু হয়ে কেউই জন্ম নেয় না। প্রত্যেক শিশু তার মৌলিক অধিকার নিয়ে জন্মায়। বাবা-মায়ের কোল আলো করে জন্মায়। কিন্তু এই আলোময় পৃথিবীর অন্ধকারের দিকেই পথশিশুদের ঠাঁই হয়! বেড়ে ওঠে রাস্তায়। সচ্ছল পরিবারের সন্তানেরা যখন বেড়ে ওঠে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে, ওই সময় পথশিশুরা ছোটে ক্ষুধানিবৃত্তির তাড়নায়। মাথার ওপর যাদের কোনো ছাদ নেই। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে রাস্তার পাশে, ওভার ব্রিজে, বাস স্ট্যান্ডে, স্টেশনে, ফুটপাতে তাদের জীবন কাটে।

শীত, বর্ষায় তাদের ভাগ্যে জোটে আরও দুর্ভোগ। রাস্তার পাশে ছোট্ট খুপড়িতে হঠাৎ বৃষ্টির হানা, তুমুল বর্ষণেও তাদের ঠাঁই ওইটুকুই। বেশিরভাগেরই এই ছোট্ট খুপরিও জোটে না। আকাশের নিচে রাস্তার পাশেই কাটে জীবন! দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে অনাহারে-অর্ধাহারে। কেউ ফুল বিক্রি করে, কেউবা কাগজ কুড়ায়, চকলেট বেচে, কেউ ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন চালায়, কেউবা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির মতো লোমহর্ষক কাজও করে। আবার কন্যা শিশুরা পেটের তাগিদে জড়িয়ে পড়ে পতিতাবৃত্তিতে। জীবনকে টিকিয়ে রাখতে তারা বেছে নেয় এমন নানা অনৈতিক পথও।

বাংলাদেশে ৫ থেকে ১৭বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা প্রায় ৪কোটি। যার মধ্যে প্রায় ৩২ লাখ পথশিশু। এই পথ শিশুরা কারও না কারও স্বজন। কিন্তু জীবনের কঠিনতম পরিহাসে তাদের স্থান রাস্তার পাশে! ক্ষুধার তাড়না, জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা বেশিভাগকেই করে তোলে অপরাধী। একবেলা ঠিক মতো খাবার না জোটায় অনেকের মনে বাসা বাঁধে আক্রোশের। হয়ে ওঠে ছিনতাইকারী, মলমপার্টি, অপকর্মের অন্যতম কারিগর।

অভিযোগ রয়েছে, পথশিশুদের ৯০ ভাগই মাদকের মতো জঘন্য নেশায় আসক্ত। ব্যস্ততম ঢাকার বাস স্টেশন থেকে শুরু করে ওভার ব্রিজে যত পথশিশু , তাদের বেশিরভাগের বিনোদন যেন মাদক! পথশিশুদের দুবেলা দুমুঠো ভাত জোটে না ফলে অনেকেই ক্ষুধার তাড়নাকে নিবৃত্ত করতে মাদকের মাঝে জীবনকে আবদ্ধ রাখে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মতে, ঢাকা বিভাগে মাদকাসক্ত শিশুর প্রায় ৩০ শতাংশ ছেলে এবং ১৭ শতাংশ মেয়ে।

সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়া বৃহৎ এই অংশকে সঠিক পথের দিশা দেওয়া সম্ভব নয়। সরকার, প্রশাসন, বেসরকারি উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক উদ্যোগে একযোগে কাজ করলে তবেই তাদের জীবনে ভয়শূন্য পৃথিবী উপহার দেওয়া সম্ভব হবে।

মেয়ে পথশিশুদের জীবন আরও দুর্বিষহ! পেটের দায়ে কেউ কেউ নিজের দেহটাকেই জীবিকার শেষ অবলম্বন করে তোলে। শুধু এই দেহদানের মধ্যেই তাদের জীবন সীমাবদ্ধ থাকে এমন নয়; বরং তারা এই কাজে নানাভাবে নির্যাতিত হয়। কিন্তু যেখানে তাদের দুবেলা-দুমুঠো ভাত জোটানো দায়, সেখানে তাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ নিয়ে মুখ খোলার মতো দুঃসাহসিক মানসিকতা তাদের থাকে না। রাস্তার পাশেই যেহেতু তাদের বেড়ে ওঠা, রাতের আঁধার তাদের সঙ্গে ঘটে চলে অন্যায়-অবিচার-যৌন হয়রানি-ধর্ষণের মতো ঘটনাও। জীবনের নিরাপত্তাটুকুও তাদের নিশ্চিত নয়। তাদের জীবনকে রক্ষা করতে গিয়ে তারা জন্ম দিচ্ছে আরও পথশিশু।

অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণেও তাদের মুখ খোলার উপায় থাকে না। ফলে পথশিশুদের মধ্যে মেয়ে শিশুদের জীবনের সঙ্গে ঘটে চরম নিপীড়ন, অন্যায়। আবার মেয়ে বলেই যে তারা নেশা, গাঁজা থেকে দূরে এমন নয়। ক্ষুধার তাড়না, জীবনের প্রতি ক্লেদ, হতাশাগ্রস্ত হয়ে তারাও মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে।

সামাজিকভাবে আজও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেনি। তাই সমাজের উচ্চশ্রেণি- নিম্নশ্রেণি কারও হাত থেকেই তাদের রেহাই মেলে না। প্রতিনিয়ত জীবনের মতোই সমাজের আচরণও তাদের প্রতি নিষ্ঠুর। পথশিশুদের ৮০ ভাগ কখনোই স্বাস্থ্য সেবা পায় না। আর ৯০ ভাগের জন্য খাবারের ব্যবস্থাও নেই। এই পথশিশুদের জন্য সঠিক সুযোগ-সুবিধা-নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে আরও ভয়াবহ দিন পার করতে হবে জাতির। পথশিশুদের প্রতি যথাযথ দৃষ্টি দিতে হবে। বাংলাদেশের সাংবিধান অনুযায়ী মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে তাদের জন্য।

///
প্রথমত তাদের খাবারের নিশ্চয়তা দিতে হবে। সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে হলে পথশিশুদের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে হবে। পথশিশুদের প্রতি নজরদারি না বাড়লে সমাজে আরও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। খুন, গুম, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনা আরও বাড়বে। ফলে পথশিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে অনুযায়ী তার বস্তবায়ন করতে হবে। কন্যাশিশুদের জন্য নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলতে হবে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিশু উন্নয়ন ফাউন্ডেশন যৌথভাবে কাজ করতে হবে। কন্যা পথশিশুদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই পথশিশুদের প্রতি নজরদারি জোরদার করতে হবে। সরকারি উদ্যোগে তাদের থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে যারা অসৎ পথে জীবন পরিচালনা করছে বা মাদকের সঙ্গে যুক্ত তাদের রিহ্যাবে পাঠিয়ে সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়া বৃহৎ এই অংশকে সঠিক পথের দিশা দেওয়া সম্ভব নয়। সরকার, প্রশাসন, বেসরকারি উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক উদ্যোগে একযোগে কাজ করলে তবেই তাদের জীবনে ভয়শূন্য পৃথিবী উপহার দেওয়া সম্ভব হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ