মাতঙ্গিনী হাজরা: এক অদম্য নারীর গল্প
অনেক চেষ্টা ও সাধনার পর ঐতিহাসিকরা খুঁজে বের করেছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরার জন্মসালটি। ১৮৭০ সালের ১৭ নভেম্বর মেদিনীপুর জেলার তমলুক থানার অধীন এক ছোট গ্রাম হোগলায় জন্ম তার। ঠাকুরদাস মাইতি ও ভগবতী মাইতির একমাত্র মেয়ে মাতঙ্গিনী ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। দারিদ্রের কারণে পড়ালেখার সুযোগ না হওয়া সত্ত্বেও এক আধুনিক মনন ছিল তার। খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয় এবং মাত্র ১৮ বছর বয়সেই বিধবা হন। নিঃসন্তান, নির্ভার মাতঙ্গিনী দেবী দ্রুত স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়ে সম্পৃক্ত হয়ে ওঠেন।
এই সংগ্রামের প্রাক্কালে সমগ্র বাংলায় বসন্তের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এসময় নিজেকে সমাজের সেবায় নিয়োজিত করেন। সমাজসেবামুলক কার্যক্রম করার সময় কংগ্রেস নেতা গুণধর ভৌমিকের সঙ্গে পরিচয়। সেই থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে সংযুক্ত হন। ১৯০৫ সালে সক্রিয়ভাবে স্বদেশী আন্দোলনে যুক্ত হন তিনি। মহাত্না গান্ধীর আদর্শ তাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। গান্ধীর এতটাই গুণমুগ্ধ হয়েছিলেন যে তাঁকে সবাই ‘গান্ধী বুড়ি’ নাম দেয়। এরপর বহু প্রতিবন্ধকতা ও ব্রিটিশ শাসকদের অত্যাচার সহ্য করেছেন। অদম্য সাহস এবং মুক্তির বার্তা নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়েছেন প্রতিটি সংগ্রামে।
১৯৪২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত ছাড়ো আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। হাজারো তরুণের পাশাপাশি বাংলার মাটি কেঁপে উঠছিল এক বৃদ্ধার গলার দাপটে। ‘ইংরেজ ভারত ছাড়ো, করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে, বন্দেমাতরম।’ বৃদ্ধার এই কণ্ঠস্বর ইংরেজদের অস্বস্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই কণ্ঠপ্রদীপ নেভাতেই তারা ছুড়েছিল বন্দুক। অহিংস পথে আন্দোলন করা দলটিকে থামালেও মাতঙ্গিনী হাজরার জ্বেলে যাওয়া আগুন নেভাতে পারেনি তারা। সেই মহিয়সীর জন্মদিনে আমরা তাকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
অনন্যা/এআই