Skip to content

৫ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করা প্রথম এশীয় নারী

বাংলাদেশে বর্তমানে নারী খেলোয়াড়দের নিয়ে তুমুল জয়জয়কার চলছে। একসময় নারীদের সীমানা ছিলো ঘরের দরজা পর্যন্ত। ঘরের বাইরে কয়েক কদম এগোতে হলেও হাজার বাধার সম্মুখীন হতে হতো। দিন পাল্টেছে নারীরা আকাশ ছুঁতে শিখছে। যেমন বাংলাদেশের জাতীয় দলের নারী ফুটবলাররা শুধু মাঠে প্রতিপক্ষকে হারায়নি সমাজের টিপ্পনিকেও হারিয়েছে।

তবে আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে সমাজের টিপ্পনিকে হারানো এতো সহজ বিষয় ছিলো না। ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের আনাগোনা ছিলোনা বললেই চলে। বিশেষ করে আমাদের উপমহাদেশে । ক্রিকেট, ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা থাকলে বাকি ক্ষেত্রে ছিলে মানুষের উদাসীনতা। একজন ভারতীয় নারী সাতারের পোশাক পরে বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াবে তা মানতে তৎকালীন সমাজ মোটেও রাজি ছিলো না। কিন্তু সব টপকে বিশ্বকে নিজের নাম স্মরণে রাখতে বাধ্য করেছিলেন আরতি সাহা৷

আরতি সাহা একজন ভারতীয় বাঙালি সাতারু। মধ্যবিত্ত বাঙালী হিন্দু পরিবারে ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার কলকাতায় ১৯৪০ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা পাঁচুগোপাল সাহার তিন সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় ও দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছিলেন।

চার বছর বয়সে তার কাকার সাথে চাঁপাতলা ঘাটে স্নান করতে গিয়ে সাঁতার শেখা শুরু করেন। সাঁতারের প্রতি তার আগ্রহ দেখে তার বাবা তাকে শোভাবাজারের হাটখোলা সুইমিং ক্লাবে ভর্তি করে দেন। ১৯৪৬ সালে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে শৈলেন্দ্র স্মৃতি সাঁতার প্রতিযোগিতায় ১১০ গজ দূরত্বের ফ্রি স্টাইলে সোনা জেতেন।

১৯৪৬ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে আরতি দেবী বহু সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৫ থেকে ১৯৫১ সালের মধ্যে ২২টি রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে তিনি মুম্বাইতে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় রূপো ও ব্রোঞ্জ জেতেন। ১৯৫১ সালে রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় ১ মিনিট ৩৭.৬ সেকেন্ডে ১০০মিটার অতিক্রম করে ডলি নাজিরের রেকর্ড ভেঙ্গে দেন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে তিনি সাঁতারু ডলি নাজিরের সঙ্গে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।

এরপর রচিত হয় বিশাল এক ইতিহাস। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি এশিয়া মহাদেশের প্রথম মহিলা হিসাবে ইংলিশ চ্যানেলের ৬৭.৫ কিমি দূরত্বের পথ অতিক্রম করেন ১৬ ঘণ্টা ২০ মিনিটে। তিনি ফ্রান্সের কেপ গ্রিস নে থেকে সাঁতার শুরু করে ইংল্যান্ডের স্যান্ডগেটে শেষ করেন এবং সেখানে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে ইংরেজদের মাটিতে ভারতের পতাকা উড়িয়ে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন। শত বাধা অতিক্রম করে সেদিন বিদেশে গিয়ে সুইমিং কস্টিঊম পরে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করার যে সাহস আরতি দেখিয়েছিলেন তা তাকে আজও স্মরণীয় করে রেখেছে।

আরতি সাহা ভারতের প্রথম মহিলা হিসাবে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের “পদ্মশ্রী” সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৬৯ সালে বিধানচন্দ্র রায়ের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসক অরুণ গুপ্তের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৯৪ সালের ২৩শে আগস্ট কলকাতার একটি নার্সিং হোমে দীর্ঘ ১৯ দিন ধরে জণ্ডিস ও এনসেফালাইটিসের ভোগার পর মৃত্যু বরণ করেন এই সাহসী নারী। আজ তার জন্মদিনে পাক্ষিক অনন্যার পক্ষ থেকে রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।

অনন্যা/জেএজে

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ