Skip to content

৬ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রানি ও প্রিন্স ফিলিপ: এক রাজকীয় প্রেম কাহিনি

তাদের বিয়ে ছিল প্রেমের। তারা দুজন দুজনকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন। ডার্টমথ নেভাল কলেজে ১৯৩৯ সালে তোলা ছবি দেখে বোঝা যায় রাজকীয় এই প্রেম-প্রণয়ের সূচনা তখন থেকেই।

প্রিন্স ফিলিপ তখন ১৮ বছরের সুদর্শন চনমনে নেভাল ক্যাডেট। বাবা-মার সঙ্গে ওই কলেজ সফরে গিয়ে ১৩ বছরের রাজকুমারী এলিজাবেথের নজর কাড়েন তিনি। কৈশোরের সেই আকর্ষণ ধীরে ধীরে বন্ধুত্বে রূপ নেয়। দুজন দুজনকে চিঠি লিখতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হঠাৎ মাঝেমধ্যে দেখাও হতো দুজনের।

প্রিন্স ফিলিপ যখন ব্রিটিশ নৌবাহিনীর হয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, তরুণী রাজকুমারী তার ঘরে প্রিন্স ফিলিপের একটি ছবি রেখেছিলেন।

যাযাবর রাজকুমার, লাজুক রাজকুমারী

গ্রিস ও ডেনমার্কের এই রাজকুমারের ছেলেবেলা ছিল অনেকটা যাযাবরের মতো। তার জন্ম গ্রিসের রাজপরিবারে, কিন্তু নির্বাসিত হওয়ায় ইউরোপের এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরতে হয়েছে তাকে। এ কারণে অল্প বয়স থেকে তিনি ছিলেন অনেক স্বাবলম্বী ও শক্ত মনের। রাজকুমার হলেও রাজপ্রসাদের ছায়া তার ওপর ছিল না।

রাজকুমারী এলিজাবেথ ছিলেন তার বিপরীত। তার জন্ম ও বড় হওয়া ছিল রাজপ্রাসাদের সুরক্ষিত বেষ্টনীর ভেতর। বাইরের জীবনের বাস্তবতার সঙ্গে তার পরিচয় ছিল খুব সামান্য। চুপচাপ লাজুক স্বভাবের ছিলেন তিনি। যেকোন বিষয় নিয়ে অনেক ভাবতেন। ফলে ভিন্ন প্রকৃতির হলেও তারা দুজন এক অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠেছিলেন।

পৌত্র যুবরাজ উইলিয়াম তার দাদা-দাদীর সম্পর্ক নিয়ে একবার বলেছিলেন: ‘দাদা আমার দাদীকে অনেক হাসাতে পারেন। কারণ, দাদা এমন কিছু কথা বলেন, এমন কিছু কাজ করেন এবং জীবনের অনেক বিষয়ের ওপর তার যে দৃষ্টিভঙ্গি তার সঙ্গে দাদীর দৃষ্টিভঙ্গির বেশ তফাৎ। ফলে তারা দুজন দারুণ এক দম্পতি।’

রাজকুমারীর যখন বিশ বছর, প্রিন্স ফিলিপ বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তার এক বছর পর ১৯৪৭ সালে এলিজাবেথের ২১তম জন্মদিনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বাগদানের কথা প্রকাশ করা হয়।

প্রিন্স ফিলিপ, তার মা গ্রিসের রাজকুমারী এলিসের মাথার টিয়ারা থেকে নেওয়া হীরার টুকরো দিয়ে নিজে বাগদানের আংটির নকশা করে দিয়েছিলেন। বিয়ের আগে তিনি এলিজাবেথের মায়ের কাছে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, এলিজাবেথের প্রতি ‘শতভাগ দ্বিধাহীন প্রেমে নিমজ্জিত তিনি।’

ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে গির্জায় দুই হাজার অতিথির সামনে তাদের বিয়ে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে মাত্র দু বছর আগে। ব্রিটেন তখনও সেই ধাক্কা সামলাতে বিপর্যস্ত। সেই কঠিন সময়ে ঐ বিয়ে নিয়ে অনেকদিন পর ব্রিটিশরা উৎসব করেছিলেন। উইনস্টন চার্চিল ঐ বিয়ে সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘এই কঠিন সময়ে এ যেন রঙের এক ঝলকানি।’

বিয়ের পরের বছর জন্ম হয় প্রথম ছেলে চার্লসের। তারপর জন্ম নেয় মেয়ে অ্যান।

প্রিন্স ফিলিপ তখন ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে তরতর করে ওপরে উঠছেন। যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস চেকার্সে কাজ করার সূত্রে বৌ-সন্তান নিয়ে তিনি তখন মল্টায় থাকেন। রাজপ্রসাদের বাইরে সেই দাম্পত্য জীবন ছিল অনেক স্বাভাবিক, স্বাচ্ছন্দ্যের ও উচ্ছলতায় ভরা।

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজা ষষ্ঠ জর্জের অসময়ে মৃত্যুতে সবকিছু রাতারাতি বদলে যায়। রানি এলিজাবেথের বয়স তখন মাত্র ২৫। প্রিন্স ফিলিপ ৩০ বছরের। তারা জানতেন রাজকুমারী একসময় রানি হবেন, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি তাকে সিংহাসনে বসতে হবে তা তারা ভাবেননি।

স্ত্রীর সিংহাসনে আরোহণে প্রিন্স ফিলিপকে নৌবাহিনী ছাড়তে হলো। যে মানুষটি যুদ্ধ জাহাজের কমান্ডার ছিলেন, হঠাৎ করে সেই পেশা ত্যাগ করে রানির সঙ্গীর ভূমিকা নেওয়া সহজ ছিল না প্রিন্স ফিলিপের জন্য।

সময়টা ভুললে চলবে না। এই পরিবর্তন ঘটছে ১৯৫০ এর দশকে, যখন কোনো পুরুষের জন্য স্ত্রীর উচ্চতর আর্থ-সামাজিক মর্যাদা মেনে নেওয়ার চল ছিল না বললেই চলে।

অন্যদিকে মাত্র ২৫ বছর বয়সী রাজকুমারী, যিনি সবে মা হয়েছেন, ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের দায়িত্ব নেওয়া তার জন্যও সহজ কোনো বিষয় ছিল না।

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ