‘জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বাল্যবিবাহের ব্যাপক যোগসূত্র রয়েছে’
অর্থনীতিবিদ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের পপুলেশন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. সাজেদা আমিন বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ঋতুর বৈচিত্র্যতা দেখা যায়, এমন বৈচিত্র্য আর কোথাও দেখা যায় না৷ তার একটা প্রভাবও সমাজের ওপর পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও বাল্যবিবাহ হচ্ছে৷ সাইক্লোনের প্রভাবে জমি-জমা, সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে নারীদের ওপর। যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা বেশি, সেসব এলাকায় বাল্যবিবাহের হার বেশি।’
রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাল্যবিবাহের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ বিষয়ে আয়োজিত আলোচনায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘অর্থনীতি ও সমাজচিন্তা বক্তৃতামালা’ শীর্ষক এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে কিশোরী ও নারীর ক্ষমতায়নের ওপর গবেষণা করেছেন ড. সাজেদা আমিন। তার গবেষণাপত্রগুলো বিশ্বের নামকরা বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
ড. সাজেদা আমিনের এই গবেষণাকর্মের ওপর আলোচনা করেন দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। আরও আলোচনা করেন ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যন্ড ডাইভার্সিটি বিভাগের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ও গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যাকশন প্রকল্পের পরিচালক মো. ইকবাল হোসাইন এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বাঙলার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আহমেদ জাভেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।
ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা হবে, কিন্তু সেই গবেষণা কিভাবে সরকার নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে যুক্ত করবে তা নিয়ে ভাবতে হবে৷ উন্নয়ন মানে শুধু রাস্তাঘাট বা মেট্রোরেল বানানো নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো নয়, গুণগতমান রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে কিনা সেটি ভাবতে হবে। ঢাকাকে আমরা উন্নত করেছি, কিন্তু পিরোজপুর কিংবা নীলফামারীর গ্রামগুলো সেভাবে উন্নত হয়নি। এখন গ্রামে গ্রামে স্কুল-কলেজ হওয়ার দরুণ সবাই পুঁথিগত শিক্ষা অর্জন করছে, কিন্তু তথাকথিত শিক্ষিত হওয়ার ফলে তারা আর কৃষিকাজও করছে না, অন্য কাজও করতে সক্ষম হচ্ছে না। ফলে শিক্ষিত বেকার বাড়ছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. ইকবাল হোসেন বলেন, আমরা যখন বিভিন্ন সূচকে তুলনামূলকভাবে নারীদের অবস্থান নিয়ে হিসেব করছি তখন আমরা অনেকের ওপরে। কিন্তু যখন বাল্যবিবাহ নিয়ে নারীদের অবস্থান বিবেচনা করতে হয় তখন আমরা সবার নিচে। বিবিএসের জরিপের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বাল্যবিবাহের প্রধান কারণ হচ্ছে দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা। সেইসঙ্গে জলবায়ুর বিষয়টিও ভাবতে হবে।
ব্র্যাকের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী বলেন, বাল্যবিবাহের ফলে মেয়েরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিয়ের পর পড়তে পারবে কিনা, চাকরি করতে পারবে কিনা, স্বাস্থ্যগত সুবিধা পাবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়না।
আহমেদ জাভেদ বলেন, সমস্যাটা যতটা না আইনের, তার চেয়ে বেশি হলো প্রয়োগের ঘাটতির। শুধুমাত্র আইন করে সমস্যার সমাধান করা যায় না। এজন্য বিভিন্ন সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের মধ্যে বোধের বিকাশ ঘটাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আমরা যারা কথা বলি, আমরা ঘরে বসে কথা বলি। আমরা কয়েকজন ছেলে পাঠিয়ে দেই। তারা তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। তার উপর ভিত্তি করে আমরা কথা বলি। সেটিতে আসলে মূল বিষয়টা অনুধাবন করা যায় না। সবার মধ্যে একটা আত্মকেন্দ্রিক প্রবণতা কাজ করে। ‘আমি’ থেকে ‘আমরা’ হতে পারি না। যেকোনো সমস্যার সমাধানে কাজ করতে হলে একাত্মতা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানটি আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করেছে দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যা।