ইকোফেমিনিজম যেভাবে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়
ইকোফেমিনিজম (Ecological Feminism) হলো নারীবাদের একটি শাখা। যা পরিবেশবাদ ও নারীবাদের সমন্বয় করে। পৃথিবীর মধ্যে ইকোফেমিনিস্ট চিন্তাবিদরা নারী ও প্রাকৃতিক বিশ্বের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে এই নামকরণ করেছেন।
ইকোফেমিনিস্ট তত্ত্ব পরিবেশ ও নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। সমাজে নারীর অবস্থানের সমতা ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয় ইকোফেমিনিজমের মাধ্যমে। যেখানে কোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠী থাকবে না। ইকোফেমিনিজমের ব্যাখ্যা ও কিভাবে এটি সামাজিক চিন্তাধারায় প্রয়োগ করা যেতে পারে তার মধ্যে রয়েছে ইকোফেমিনিস্ট শিল্প, সামাজিক ন্যায়বিচার, রাজনৈতিক দর্শন, ধর্ম, সমসাময়িক নারীবাদ ও কবিতা।
ইকোফেমিনিস্ট বিশ্লেষণ সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ধর্ম, রাজনীতি, সাহিত্য ও মূর্তিবিদ্যায় নারী ও প্রকৃতির মধ্যে সংযোগ অনুসন্ধান করে। প্রকৃতির নিপীড়ন ও নারীর নিপীড়নের মধ্যে সমান্তরাল সম্বোধন করে। এই সমান্তরালে নারী ও প্রকৃতিকে সম্পত্তি হিসেবে দেখা, পুরুষদের সংস্কৃতির পরিচালক ও নারীকে প্রকৃতির পরিচালক হিসেবে দেখা হয়েছে। কিভাবে পুরুষরা নারীদের ওপর কর্তৃত্ব করে এবং মানুষ প্রকৃতিকে আধিপত্য করে তার মধ্যেই কিন্তু সীমাবদ্ধ নয়। ইকোফেমিনিজম জোর দেয় যে নারী ও প্রকৃতি উভয়কেই সম্মান করতে হবে।
ফলে পুরুষের কাছে নারী যেমন মানুষের কাছে প্রকৃতিও তেমনই দশা। ইকোফেমিনিজমের কথা হলো পুরুষতান্ত্রিক আগ্রাসন কমিয়ে আনতে হবে। লিঙ্গ, জাতি, বর্ণ, ধর্ম ভেদে নারীর প্রতি সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে নারীর এই চেতনার বাস্তবায়ন করা এখন সময়ের দাবি।
আমাদের সমাজে প্রকৃতির মতোই নিপীড়িত, অবহেলিত নারী। আর নারীর এই অবহেলা, অবদমনকে প্রকৃতি মাতার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। যে প্রকৃতির কোলে মানুষের বাস তা সংরক্ষণের জন্য জণগণের মধ্যে কোনোই সচেতনতা বা উদ্যোগ লক্ষ করা যায় না। আবার নারী একজন কন্যা, মা, বোন প্রভৃতি রূপে মমত্ব স্নেহঘেরা হলেও তার প্রতি পুরুষ সমাজের নিপীড়নের কোনো খামতি নেই। তাই নারীর সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।
সমাজে নারীর ন্যায্য অধিকার ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধকল্পেই ইকোফেমিনিজম তত্ত্বের উদ্ভব। প্রকৃতির ওপর মানুষের নিপীড়ন ও নারীর ওপর পুরুষতন্ত্রের আধিপত্য দুটোই যেন একসূত্রে গাঁথা।
আজকের পৃথিবীতে প্রকৃতি হুমকির সম্মুখীন। বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রধান কারণ অবাধে গাছপালা উজাড়। নিজেদের ভোগের সামগ্রী ভেবে বাছবিচারহীনভাবে প্রকৃতিকে নিধন পুরুষতন্ত্রের আগ্রাসী মনোভাবকেই প্রতিষ্ঠা করে। নারীকে যেমনভাবেই হোক দমিয়ে রাখা, শোষণ-নিপীড়ন চালানো, ভোগের সামগ্রী মনে করে যথেচ্ছ আচরণ করা, বৈষম্যের শিকারে পরিণত করা পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার ফল। পুরুষ সবসময় প্রভু। নারী সেখানে ভৃত্য।
মানুষ প্রকৃতির থেকে যেমন শুধু ভোগ করেই খালাস। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনোই তৎপরতা বা উদ্যোগ দেখা যায় না। নারীর থেকে পুরুষ শুধু শুষে নিতেই প্রস্তুত। নারীর কল্যাণে তাকে রক্ষায় কয়জন মনুষ্যত্বের পরিচয় দিতে পারেন? ফলে পুরুষের কাছে নারী যেমন মানুষের কাছে প্রকৃতিও তেমনই দশা। ইকোফেমিনিজমের কথা হলো পুরুষতান্ত্রিক আগ্রাসন কমিয়ে আনতে হবে। লিঙ্গ, জাতি, বর্ণ, ধর্ম ভেদে নারীর প্রতি সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে নারীর এই চেতনার বাস্তবায়ন করা এখন সময়ের দাবি।