Skip to content

১লা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বড় টিপ পরলে নারীবাদী, ছোট চুল রাখলে সমকামী!

ভারতের কোনো এক ইউটিউব চ্যানেলে একদা একটি বাক্য শুনেছিলাম, 'এ-দেশে নারীদের থেকে গরুদের বেশি সম্মান দেওয়া হয়'। কথাটি শুনে এত মোক্ষম সত্য মনে হয়েছিল যে, সেটা আজও স্মরণে রয়ে গেছে।

 

নারীদেরকে তার চুল, চোখ, সাজ-পোশাক, গায়ের রং দিয়ে আলাদা-আলাদা বিভক্ত করার প্রবণতা একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য বহন করে চলেছে। সেটা যেকোনো ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার দেশে আরো বেশি। কারণ, সচরাচর যে সব বৈষম্য আছে নারী-কেন্দ্রিক, সেগুলো ছাড়াও আরো কারুকার্য শোভিত গানে যুক্ত হয়ে ধর্মীয় রীতির নামে নারী-স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। 

 

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নারী হয়ে এ-দেশে জন্ম নেওয়াকে এতটা ভয়ংকর লাগে না, নারী হিসেবে নিজে যথেষ্ট গর্ব বোধই করি। কিন্তু এই সুখী বোধ করাটা ততক্ষণ পর্যন্ত কাজ করে, যতক্ষণ কোনো ভয়ংকর ব্যক্তিবর্গ আমাকে নারী হিসেবে বা নারী হওয়ার কারণে কোনো বিপর্যয়ের মধ্যে না ফেলে দেয়। 

 

এই সমাজটা এমন একটা সমাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এখানে বিদ্যার সার্টিফিকেট অর্জন করা সহজ, কিন্তু বোধের বিদ্যা একেবারে শূন্য। মানুষ এত তাড়াহুড়োর মধ্যে জীবন যাপন করে যে, তার সেই সময়টাই থাকে না, নিজের বোধকে উন্নত করার জন্য কিঞ্চিৎ সময় ব্যয় করতে পারে। 

 

একটা মিনিমাম কার্টসি বলে কোনো বিষয়ের মতো, এর নগণ্য বিষয় নিয়ে কে ভাববে, যেখানে হাতে পর্যাপ্ত টাকা-পয়সা নেই, পর্যাপ্ত শিক্ষা নেই, জমিজমা নিয়ে দাঙ্গা, জ্যামে বসে যেখানে বিরক্তি নিয়েই ১২ ঘন্টার মধ্যে সারা দিন মিলিয়ে-মিশিয়ে ৪/৫ ঘন্টাই চলে যায়। বাকি আর ৬/৭ ঘন্টায় মানুষ কী করবে? একটু গসিপ-আড্ডাই না হয় দিল। 

 

গসিপ-আড্ডার মূল বিষয়ই হলো: এই মেয়ে, ওই মেয়ে নিয়ে মন্তব্য করা। কাউকে ভালো সাজানো, কাউকে মন্দ সাজানো-  এই হচ্ছে আম-সাধারণের আড্ডা। কিন্তু এই যে নারীদের কপালের টিপ আর মাথার চুল নিয়ে এত এত বিষদ সভা বসে, এটা কিন্তু শুধু নারীদের ক্ষেত্রে হয়, তা-ই না। এটা ছেলেদের ক্ষেত্রেও হয়। যে ছেলেরা চুল বড় রাখে, তারা হলো নেশাখোর, আর কানে দুল পরলে হিজড়া। উল্লেখ্য, হিজড়া একটি গালি হিসেবে পরিচিত। এ-ছাড়া, নারীবাদী তো গালি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েই আছে।

 

এই গালির চর্চা নারীদের ক্ষেত্রে মানুষ করতে পারে বেশি। কারণ, নারীরা হয়তো এত বছর ধরে সইতে সইতে লোকে বুঝেও ফেলেছে যে, নারীরা পালটা জবাব দেবে না। পোশাক, কপালের টিপ নিয়ে, এমনকি পাবলিক ট্রান্সপোর্টে গায়ে হাতও যদি কেউ দেয়, তবু এই নারী কোনো প্রতিবাদ হয়তো করবে না। কারণ, সে ছোটো বেলা থেকে শিখেই এসেছে, যৌন হয়রানি হোক বা মৌন হয়রানি হোক, সেটার জন্য নারীই দায়ী!

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীবাদীদের নিয়ে একটা মানদণ্ড আছে। নারীবাদী স্টার্টার প্যাক নামে। হাতা কাটা ব্লাউজ, বড় টিপ, গলার আওয়াজ বেশি এবং গায়ে গন্ধ এবং ধূমপায়ী- এই সব বৈশিষ্ট্যর কাছাকাছি বৈশিষ্ট্য যদি কোনো নারীর সাথে মিলে যায়, তাহলে সে নারীবাদী। এর মধ্যে আসলে নামের চাইতে গালিই বেশি। একজন মানুষকে রাস্তায় চলতে দেখলেও আমরা তাকে বিচার করে ফেলি। 

 

আর চুল ছোট রাখলে সেটা নিয়ে তো আর কথাই নাই। মেয়ে লিটারেলি পাগল এবং সমকামী! চুল ছোট রাখলে সারাক্ষণ লোকে নানা কথা বলতে থাকে। সমাজের বিশ্বাস, চুলই হচ্ছে নারীর আসল সোন্দর্য। সেটা কেটে ফেললে তাকে আর দেখতে নারী-সুলভ লাগে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। 

 

যা-ই হোক, এই যে মনগড়া বিচার করে কোনো নারীকে কোনো খারাপ সিল মেরে দওয়া, একটা  মানুষকে ছোট করে নিজে তৃপ্ত হওয়া, সেটা কতটা স্যাডিস্টিক আমরা নিজেরাও বুঝি না। কিন্তু একজন নারী কি হবে না হবে, বড় টিপ পড়বে নাকি ছোট চুল রাখবে, সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। দয়া করে এ-সব করে নিজের সময় নষ্ট না-ই করলেন৷

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ