Skip to content

১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুধু আইনই নয়, নারী-নির্যাতন বন্ধে চাই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও

যুগ পালটে গেছে, সময় এগিয়েছে। নারীরাও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অনেকটা এগিয়েছে। তবে যুগ যুগ ধরে নারীদের ওপর চলে আসা অত্যাচার- নির্যাতন কি কমেছে? অনেকেই উত্তর দেবেন, আজকাল সমাজ আধুনিক হয়েছে, নারীরা বহু দূর এগিয়েছে, নিজরে পায়ে দাঁড়িয়েছে, তাই নির্যাতনও কমেছে। আদৌও কি তাই? 

 

কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, 'বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।' পুরো বিশ্ব নয়, শুধু নিজের দেশের দিকেই তাকানো যাক। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশ্বকে বিস্মিত করেছে, সেখানেও নারীর অবদান চোখে পড়ার মতো। কিন্তু নারী যত সফলতাই এনে দাও না কেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে  'নারী নির্যাতন’-এর মতো মারাত্মক ব্যাধি সহজে দূর হচ্ছে না। সমাজ ও সভ্যতা যত এগিয়ে যাচ্ছে, ততই যেন এ প্রবণতা বেড়ে চলেছে। 

 

শুধু আইনই নয়, নারী-নির্যাতন বন্ধে চাই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও

 

প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যমে চোখ রাখলেও দেখা যায় নির্যাতন, ধর্ষণ, অত্যাচারের খবর। সমাজের নানা ক্ষেত্রে নিপীড়িত ও  অবহেলিত নারীরা। পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে নারীর এগিয়ে যাওয়া, গতিশীলতা, অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা যেমন চোখে পড়ার মতো,  নারী-নির্যাতনও তেমনি চোখে পড়ার মতো। সমাজ অনেক এগিয়ে গেলেও নারী-নির্যাতন কমছে না বরং নির্যাতনের ধরন বদলাচ্ছে।

 

প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন অপরাধ। নারীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। আগে নারীরা বিভিন্ন সামাজিক প্রথা, কুসংস্কার, লোকলজ্জার ভয়ে ঘরের চার দেয়ালে বন্দি থাকতেন। বাইরের পৃথিবীতে পা বাড়ানোর সাহস দেখাতেন না। বর্তমান সময়ে নারীর সে ভয় ভেঙেছে। নারী আত্মনির্ভরশীল হয়েছে। তাই বলে কি নারীর চলার পথ মসৃণ হয়েছে? 

 

শুধু আইনই নয়, নারী-নির্যাতন বন্ধে চাই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও

 

এ-সময়ে এসেও পথে-ঘাটে, বাসে-ট্রেনে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থলেও নারীরা ব্যাপক হারে নির্যাতিত হচ্ছেন। ঘর থেকে শুরু করে কর্মস্থলে নারী বিভিন্ন ধরনের মৌখিক সহিংসতার শিকার হন। শারীরিকভাবে না হলেও মানসিকভাবে নির্যাতন হচ্ছে বহু নারী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের অবাধ বিচরণও নারী নির্যাতন কয়েকগুণ বাড়িয়েছে। 

 

অনলাইনে নারীরা প্রতিনিয়ত এমন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কেউ অচেনা কারো থেকে, কেউ আবার পরিচিত কারো থেকে।  বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন প্রায় সবাই আছে এ তালিকায়।  অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নারীরা ভয়ে কিংবা অন্য কারণে এ-সব হয়রানির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পারেন না। আমাদের দেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, দেশের তিন-চতুর্থাংশ নারীই সাইবার বুলিংয়ের শিকার।

 

শুধু আইনই নয়, নারী-নির্যাতন বন্ধে চাই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও

 

প্রাচীনকালে নারীকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হতো, বর্তমানে নারী এ অধিকারটি আদায় করে নিতে সক্ষম হলেও তাঁকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে শিকার হতে হয় বুলিংয়ের,  লাঞ্ছিত হতে হয় শিক্ষক থেকে শুরু করে পুরুষ সহপাঠীদের কাছেও। আবার কর্মস্থলে প্রবেশ করতে তো একধরনের যুদ্ধই করতে হয় নারীদের। কখনো যুদ্ধ জয় করে প্রবেশ করতে পারলে সমাজ, পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে শুনতে হয় কটূ কথা। আবার উচ্চ শিক্ষিত বসের বিশেষ নজরে পড়লে তো কোনো কথাই নেই। 

 

আজকাল যৌতুক না চেয়ে, কন্যার বাবার কাছে উপহার চান বরের বাবা। উপহার কোনোভাবে দিতে না পারলে বউকে সহ্য করতে হয় শারীরিক, মানসিক অত্যাচার। পরিসংখ্যানও বলছে সমাজে নারী-নির্যাতন বিষয়টি এগোচ্ছে খারাপভাবে। প্রায় প্রতিবছরই নারী-নির্যাতনের ঘটনা কয়েক শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করোনা মহামারির মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরে ধর্ষণ ও নারী-নির্যাতনের ঘটনা প্রায় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

 

শুধু আইনই নয়, নারী-নির্যাতন বন্ধে চাই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও

 

এ-ছাড়া, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গেল বছর  জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরে মোট ৩ হাজার ৭০৩ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তবে অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো, নারী-সহিংসতা রোধে আছে আইন, বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক চুক্তি। কিন্তু এগুলোর তেমন কোনো বাস্তবায়ন নেই বা এ-সব আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষও সচেতন নয়। শুধু আইন প্রণয়নই নয়, নারী-নির্যাতন প্রতিরোধে তাই প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও।
 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ