একের পর এক নক্ষত্রপতন!
‘আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব
হারিয়ে যাব আমি তোমার সাথে’
লতা মঙ্গেশকরের গানের কথাগুলো যেন খুব করে মনে ধরেছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আর বাপ্পি লাহিড়ির। তাই বুঝি মাত্র ১০ দিনের মাথায় বিদায় নিলেন এই দুই তারকাও। আকাশ থেকে যেন একের পর এক তারা খসে পরল। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে হারিয়ে গেল তিন-তিনটি নক্ষত্র। দল ভারী করলেন ও-পারে চলে যাওয়া সঙ্গীতশিল্পীরা, আর এ-পারে শোকের ছায়া আরো ঘন হলো।
প্রথমে লতা মঙ্গেশকর, এরপর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আর সর্বশেষ বাপ্পি লাহিড়ি। যেন ভক্তদের শোক কাটিয়ে ওঠার সময়ই দিলেন না কেউ। ২৭ দিনের লড়াই শেষে করোনার কাছে হেরে যান ভারতীয় উপমহাদেশের সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর। গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮ টা ১২ মিনিটে তিনি প্রয়াত হন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় গত ১১ জানুয়ারি তাঁকে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত ছিলেন তিনি। প্রথম থেকেই তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। ৩০ জানুয়ারি তাঁর কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। কিন্তু বয়সজনিত নানা সমস্যার কারণে শেষ পর্যন্ত হার মানেন তিনি।
লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুর ৯ দিনের মাথায় চলে যান উপমহাদেশের আরেক প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। এরপর করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় বাইপাসের কাছে এক বেসরকারি হাসপাতালে। কিছু দিনের মধ্যেই করোনামুক্ত হলেও কোমরের ভাঙা হাড়ে অস্ত্রোপচার হয় গত ১১ ফেব্রুয়ারি। এরপর শুরু হয় পেটে ব্যথা, কমতে থাকে রক্তচাপ। সর্বশেষ অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় আইসিইউতে। কিন্তু জীবনযুদ্ধের এ লড়াইয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রখ্যাত এই কণ্ঠশিল্পী।
পরপর এই দুই সঙ্গীতশিল্পীকে হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে-না-উঠতেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই চলে গেলেন বর্ষীয়ান সুরকার-গায়ক বাপ্পি লাহিড়ি। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মুম্বাইয়ের এক হাসপাতালে ওই মঙ্গলবারই রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯। বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি, ভুগছিলেন একাধিক শারীরিক সমস্যায়। এ-কারণে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে। সেখান থেকে গত সোমবার তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবারই ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই মধ্যরাতে প্রয়াত হন বাপ্পি লাহিড়ি।
মাত্র ১০ দিনের মধ্যে এমন তিন শিল্পিকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ সঙ্গীতজগত। এই তিন তারকা শিল্পীকে হারিয়ে কোটি কোটি ভক্ত-শ্রোতা শোকে মুহ্যমান । লতা মঙ্গেশকর ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় দীর্ঘজীবন উপভোগ করতে পারলেও বাপ্পি লাহিড়ি তেমন দীর্ঘায়ু পাননি। তবে এই বয়সেই তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, তা তাঁকে দর্শকদের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখবে বহুকাল। শুধু তিনি একা নন, এই তিন নক্ষত্রই দর্শক-হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন তাদের কাজের মাধ্যমে।