Skip to content

৫ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘হাতের কাছে ভরা কলস, তৃষ্ণা মেটে না’

 

গত এক দশক ধরে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ অনেক পুরস্কার আনছে, নানান ক্ষেত্রে প্রশংসা পাচ্ছে। বাংলাদেশ নিয়ে ভালো ভালো কথা শুনতে অবশ্যই খুব ভালো লাগে। কিন্তু এত ভালোর মধ্যেও কোথায় যেন অস্বস্তি কাজ করে। পঞ্চাশের দশকের মানুষ আমি। বয়স তো কম হলো না। কত ধরনের মানুষ আর জমানা দেখলাম। কিন্তু এই সোয়া একবিংশতে এসে দেখছি—মানুষ যেন কেমন হয়ে গেছে! গত দুই বছর ধরে এত লোক মহামারিতে ভুগল, কেউ মারা গেল, কারো চাকরি গেল; সবকিছুর পরও ২০২১ সাল শেষের দিকে মনে হলো, কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, সব কিছু বুঝি স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে! কিন্তু ২০২২-এর শুরুতে মনে হলো, আমরা যেন প্যাঁচকাটা চক্রে আটকে গেছি, একই বৃত্তে ঘুরে ঘুরে আসছি। আর এত বিপদের মধ্যে একটি জিনিস স্পষ্ট বোঝা গেল, বিপদের সময় শেষ পর্যন্ত টাকাপয়সাই মুখ্য হয়ে ওঠে। মহামারি আমাদের অনেক ধরনের শিক্ষাই দিল। মহামারিতে আমরা কি আরো মানবিক হলাম, নাকি অমানবিক? মহামারি আমাদের স্বার্থপর করল, নাকি পরার্থে কাজ করার পথ দেখাল? আমরা তো একজনের ভাইরাস আরেক জন ভাগ করে নিচ্ছি। নিচ্ছি মানে, কেউ যদি কোভিডে আক্রান্ত হয়, সেই ভাইরাস তো কারো না কারো শরীর থেকেই ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। কোভিডের ওমিক্রন ধরন তো এখন দাবানলের মতো সারা বিশ্বে ছড়াচ্ছে। উঠে দাঁড়াতে গিয়েও আমরা বারবার হোঁচট খাচ্ছি। তবে মহামারির এই দুটি বছর বিজ্ঞান-প্রযুক্তি আমাদের উজাড় করে সহায়তা করেছে। এর পাশাপাশি আমরা দেখেছি আমাদের উন্নয়নের অপর পিঠও।

আমরা যদি গত ১০০ বছরের সব উন্নয়নকে দেখি, বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বে উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটেছে—বিদ্যুৎ, টেলিফোন, যোগাযোগের বিপুল বিশাল উন্নয়ন ঘটেছে। কিন্তু এই মহামারি এসে যেন বুঝিয়ে গেল, মানুষের আসলে সত্যিকারের উন্নয়ন হয়নি। বাংলাদেশেও বিপুল ও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বটে, কিন্তু কোথায় যেন একটি খাপছাড়া ব্যাপার ঘটে গেছে। এই যে এত উন্নয়ন, এটাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে বা ব্যবহার করার জন্য তো কিছু নিয়মনীতি থাকতে হবে। কোন উন্নয়ন আমাদের সার্বিক জীবনমানে বিশেষভাবে কাজে লাগবে, কারা এটা ব্যবহার করবে—সেসব ব্যাপারে আমরা যেন অন্ধগলিতে মাথা ঠুকছি। এ যেন ভৌত উন্নয়নের গোলকধাঁধা! প্রযুক্তি ব্যবহারের মতো উন্নয়নমূলক অবকাঠামো ব্যবহারেরও যে বিশেষ নিয়মকানুন আছে এবং এই নির্দেশনাবলি নিয়ে যে ব্যবস্হাপনা ও প্রস্ত্ততি দরকার, তা কি করা হয়েছে? সেই যে গান আছে, ‘লালন মরল জল পিপাসায়, থাকতে নদী মেঘনা/ হাতের কাছে ভরা কলস, তৃষ্ণা মেটে না।’ হাতের কাছে উন্নয়নের ভরা কলস, কিন্তু তৃষ্ণা মিটছে না। আমরা কি বুঝে দেখার চেষ্টা করেছি—কেন মিটছে না তৃষ্ণা?

আমরা ছোটবেলায় শিক্ষার শুরুতে সরলরেখা-বক্ররেখা-বৃত্ত দিয়ে বর্ণমালা অ-আ-ক-খ লিখতে শিখেছি। আমার নাতি-নাতনিকে দেখেছি বিদেশে ওদের শেইপ ও কালার শেখানোর মাধ্যমে অ্যালফাবেট শেখানো হয়। অর্থাৎ প্রত্যেকটা জিনিস ভাগে ভাগে শিখিয়ে মস্তিষ্ককে ধারণ করার জন্য ধীরে ধীরে প্রস্ত্তত করা হয়। সব শিক্ষার ক্ষেত্রেই ধাপে ধাপে সবকিছু শেখানো হয়। এটাই শিক্ষার সহজ নিয়ম। তেমনই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞকে ব্যবহার করার শিক্ষাও নাগরিকদের ধাপে ধাপে শেখাতে হয়। সিভিক সেন্স তৈরি করতে হয় জনগণের মধ্যে। কিন্তু আমাদের দেশে সিভিক সেন্সসহ প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ কজন আছেন? একসময় দেশে খুব সামান্যসংখ্যক মানুষের অক্ষরজ্ঞান ছিল। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৯৭১ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ১৬.৮ শতাংশ। ১৯৯১ সালে ৩৫.৩ এবং ২০০১ সালে ছিল ৪৭.৯ শতাংশ। বর্তমানে দেশে সাক্ষরতার হার ৭৫.৬০ শতাংশ। এ হিসাবে দেশে নিরক্ষর মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি সাড়ে ১২ লাখ। যে হারে সাক্ষরতা বাড়ছে তাতে শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন করতে আরো ২৭/২৮ বছর লাগবে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, এটা কেবল ‘সাক্ষরতা’র কথা বলা হচ্ছে। অর্থাৎ যাদের কেবল ‘অক্ষরজ্ঞান’ আছে। এদের ‘ক-অক্ষর গোমাংস’ বললে অত্যুক্তি হবে না। তাহলে অশিক্ষিত মানুষের সংখ্যা আসলে কত? হিসাব নেই।

একজন অশিক্ষিত মানুষের জন্য যা যা বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার, দেখা যায় যে, কোনোভাবে মাধ্যমিক পাশ করা অনেকের মধ্যেই সেসব বৈশিষ্ট্য প্রকটভাবে প্রকাশিত। এসব শিক্ষার বাইরে আমাদের দেশের বড় একটি অংশ ধর্মীয় শিক্ষাও গ্রহণ করে থাকে। ধর্মশিক্ষা মানেই ভালো হওয়ার শিক্ষা। যদিও এখানে ‘ভালো হওয়া’র বিষয়টি মূলগত। কিন্তু নীতিগতভাবে ভালো হওয়া এবং ভালোমন্দের বিচার করার বিচারবুদ্ধি অর্জন করার শিক্ষাটা আলাদা। আর এটা না শিখলে এত এত উন্নয়নের ব্যবহার আমরা শিখব কী করে? ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে, অনেক অনেক উন্নয়নকাজ হওয়ার পরও মনে হচ্ছে, মানুষের যেন কোনো উন্নয়নই হয় নাই! সুতরাং এ কথা স্পষ্ট যে, মানুষের উন্নয়ন না হলে ভৌত উন্নয়ন সার্থকতা লাভ করতে পারে না। মৃতব্যক্তির কাছে আলিশান বাড়ি আর চন্দন-পালঙ্কের যেমন কোনো মূল্য নেই, তেমনি অশিক্ষিত ব্যক্তি বা ভালোমন্দের বিচারবুদ্ধিহীন ব্যক্তির কাছেও ভৌত উন্নয়ন মূল্যহীন। এর ব্যবহার এবং এর বিপুল মূল্যও সে জানে না। এজন্যই আমরা দেখতে পাই, আমাদের মহামূল্যবান পদ্মা সেতুর পিলারের ফেরিচালকরা বারবার ধাক্কা দিচ্ছে। অনেকে এটাকে ষড়যন্ত্র বলতে পারেন। কিন্তু এটা ষড়যন্ত্র, নাকি সেই ফেরিচালক জানেই না কীভাবে ইন্সট্রাকশন অনুসরণ করতে হয়—সেটা যথাযথ তদন্তের বিষয়।

 

‘হাতের কাছে ভরা কলস, তৃষ্ণা মেটে না’

২০৪১ সালে আমাদের ‘উন্নত দেশ’ হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই অনুযায়ী আমরা উন্নয়নকাজ করেও চলেছি। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০৩১ সালে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংকের শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চায়। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৬০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ৮৮টি দেশের মধ্যে মাত্র ১৩টি দেশ উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ আয়ের ধাপে উন্নীত হয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে, বর্তমানে আমাদের একটি বিশাল সুবিধা রয়েছে। সেটা হলো, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট সুবিধা। দেখা গেছে যে, আমাদের জনসংখ্যার মধ্যে ৬৬ শতাংশই তরুণ-যুবক—কর্মক্ষম। আমাদের সোয়া ১ কোটি জনগণ বিদেশে থাকে এবং তারা অঢেল পরিমাণে রেমিট্যান্স দেশে পাঠায়। আরেকটা অর্জন রয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প খাতে। কিন্তু অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি টেকসই ও গতিশীল করতে তারুণ্যে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্হান সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। অর্থাৎ আমাদের তরুণ জনগোষ্ঠীর এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট-সুবিধাকে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু সেটা কি হচ্ছে? আমাদের কর্মক্ষম জনসংখ্যার বড় একটি অংশ অশিক্ষিত এবং অপ্রশিক্ষিত। এদের জন্য সুশিক্ষা, সুসংস্কৃতি, খেলাধুলা, বিনোদন—সবকিছুরই বিপুল অভাব দেখতে পাওয়া যায়। এখানে কেবল অভাব নেই বিভেদের। আমরা শতবর্ষ পরও দেখতে পারছি, মানুষে মানুষে কত বিভেদ!

আমরা এখনো একজনকে মানুষ হিসেবে না দেখে বলে দিচ্ছি—তুমি হিন্দু, তুমি মুসলিম! গরিব-বড়লোক হিসেবে সবাইকে দাগিয়ে দিচ্ছি। কালো-ফরসা হিসেবে চিহ্নিত করছি, কে কেমন! ঢাকা শহরের এত উন্নয়ন যে, ২০-২৫ মিনিটের স্বাভাবিক পথ যেতে সময় লাগে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা। আমাকে প্রায়শই ধানমন্ডি থেকে গুলশান এবং কারওয়ান বাজার যেতে হয়। প্রায়শই এত অসহ্য জ্যাম থাকে যে, বয়স আরেকটু কম হলে আর উন্নত বিশ্ব হলে গাড়ি থেকে নেমে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে হেঁটেই চলে যেতাম গন্তব্যে। তাতে একটু এক্সারসাইজও হতো। কিন্তু ঢাকার ফুটপাতে কি হাঁটার কথা চিন্তা করা যায়? বিশেষ করে আমাদের মতো সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য ঢাকার কোন অংশটি চলাচলবান্ধব? জ্যামে বসে থাকতে থাকতে দেখতে পাই, পাবলিক বাসগুলো যেন যুদ্ধ করে আমার গাড়ির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে! গাড়ির জানালা দিয়ে গাড়িগুলোর বাইরের দৈন্য আর ভেতরের নরক অবস্হা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। এসবও কি উন্নয়নের অভিঘাত? একটি গাড়িতে ৩৫টি সিট থাকলে সেখানে গাদাগাদি করে ৭০ জন তোলা হয়। ঠাসাঠাসি ভিড়, আর তার মধ্যে সিটগুলো এমনভাবে পরপর প্রায় গা ঘেঁষে বসানো, যেন বাসের কারিগররা ধরেই নিয়েছেন—এই দেশটি বামনদের। এখানে পাঁচ ফুটের বেশি লম্বা মানুষ নেই। সবাই ছোট-লোক, সুতরাং তাদের হাঁটুও ছোট। ভুক্তভোগীদের কাছে জেনেছি, ওসব সিটে হাঁটু ভাঁজ করে স্বাভাবিক উচ্চতার কোনো মানুষের বসতে ভীষণ কষ্ট হয়। পায়ের শিরায় রক্ত যেন জমাট বেঁধে যেতে চায়। অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকলে পা ঝিমঝিম করে। তার ওপর সিটগুলো ভাঙাচোরা, নড়বড়ে এবং নোংরা। এরপর যখন ঠাসাঠাসি করা যাত্রীরা ধাক্কাধাক্কি করতে করতে, গাড়ির উলটোপালটা গতির সঙ্গে দুলতে দুলতে, সামনের সিটের যাত্রীর ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়তে পড়তে, পেছনের যাত্রীকে সামনে নামতে দেওয়ার জায়গা করে দিতে এক জনের সরুপথে দুজনের মাঝখান দিয়ে চ্যাপটা হয়ে তৃতীয় জনকে সামনের এগোনোর সুযোগ করে দিতে দিতে, খানাখন্দে গাড়ির চাকা পড়ে ঝাঁকি খেতে খেতে এবং গরমকালে ঘামে সিদ্ধ হতে হতে যখন কাউকে অফিসে বা কাজে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয়, তখন তার ৪০ বছরের শরীরটি খুব তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যেতে বাধ্য। এভাবে তেলাপোকার মতো বেঁচেবর্তে থাকার সুকঠিন এবং বাধ্যগত সংগ্রাম তাদের জীবনীশক্তি শুষে নেয়। এতে মনের ওপরও চাপ পড়ে ভীষণ। একজন মানুষের ৬০-৬২ বছর বয়সে অবসরে যাওয়ার কথা, কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, ষাটের অনেক আগেই এরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। শরীরে বাসা বাঁধছে হরেক রকমের রোগ। অর্থাৎ শারীরিকভাবে একজন মানুষ ষাটের অনেক আগেই কর্মদক্ষতার বিচারে অবসরে চলে যাচ্ছে।

এদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে চলছে নানান ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা আর সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। এই ক্ষেত্রটির সমস্যা নিয়ে বলতে গেলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখা যাবে। আমাদের সময় আমরা যে শিক্ষা পেয়েছি, তার মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে ছিল ‘ভালোবাসার শিক্ষা’। এই ‘ভালোবাসা’ মানুষের সঙ্গে মানুষকে কানেক্ট করে, বিনিসুতোয় মানবিক বন্ধন তৈরি করে। এই ‘ভালোবাসা’ মানুষকে স্টিমুলেট করে, আনন্দের সঙ্গে কাজ করার জন্য উদ্দীপিত করে। এটা মানুষকে একই সঙ্গে ভালো থাকার অনুভূতিতে সিক্ত করে। যখন কোথাও ভালোবাসার অভাব দেখা যায়, সেখানে ইভিল এসে সেই জায়গটা পূরণ করে। আমাদের চারপাশ এখন তেমনই ইভিলে ভরে উঠছে।

এখন প্রশ্ন হলো, যদি ইভিলে ভরেই উঠবে আমাদের চারপাশ—তাহলে এত উন্নয়নের মূল্য কোথায়? স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হয়ে গেছে। এখনই সময় এসব নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখবার। আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিনোদনসহ সব ধরনের উন্নয়নযজ্ঞ সাজাতে হবে পরিকল্পিতভাবে। আমাদের ভৌত উন্নয়নকে প্রকৃত উন্নয়নে পরিণত করতে হবে। কেবল সেক্ষেত্রেই আমাদের এত বিপুল উন্নয়ন সার্থকতা লাভ করবে, যার সুফল পাবে দেশের সব নাগরিক।

লেখক: সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যা

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ