বিয়ে করায় হল সিট হারালেন ঢাবি ছাত্রী
গত ৯ ডিসেম্বর সারাদেশ ব্যাপী 'রোকেয়া দিবস' পালন করেছে। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত। এই বিশাল ভূমিকার বাইরে একটি পরিচয় মুখ্য নয় তবুও প্রসঙ্গত কারণে নিয়ে আসতে হচ্ছে আর সেটি হলো তিনি একজন বিবাহিত নারী৷ বিবাহিত হয়েই মাদাম কুরী জিতে নিয়েছেন নোবেল পুরষ্কার৷ পূর্ণ বয়স্ক দুজন মানুষের বিয়ে কখনোই নারী অথবা পুরুষ কারো শিক্ষাঙ্গন ও কর্মক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় না।
তবে, শিক্ষা ও প্রগতির আঁতুড়ঘর, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে আবাসিক ছাত্রীদের বিবাহিত হওয়া অন্যতম কঠিন অপরাধ এবং যেই অপরাধের জন্য তাদের অধিকার হলের সিট ছাড়তে তাদের বাধ্য করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের সাবেক হল সংসদ প্রতিনিধিরা তাদের ফেসবুক ওয়ালে আবাসিক একজন ছাত্রীকে বিবাহিত হবার কারণে হল প্রশাসন দ্বারা হেনস্তার কথা প্রচার করেন। সেই ছাত্রীর বোন আবাসিক হবার সাক্ষাৎকার প্রদান করতে আসলে তার বড় বোন বিবাহিত এটি তিনি প্রকাশ করেন এবং এতে হাউজ টিউটর ক্ষেপে যান। পরবর্তীতে তিনি নির্দেশ প্রদান করেন বড় বোন হল না ছাড়লে ছোটবোন হলে উঠতে পারবে না। তারা দুজনই শিক্ষার্থী এবং দুজনই আলাদাভাবে ভর্তিযুদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন। অথচ তাদের অধিকার হলের যেই বরাদ্দ সিট তার জন্য এত লাঞ্ছনা কেন একজন আবাসিক ছাত্রীর নিতে হবে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য নিয়ম রয়েছে এবং সময়ের প্রয়োজনে যেগুলোর অধিকাংশই এখন আর মানা হয় না। করোনা মহামারীতে ছাত্রীদের একটি বিশাল অংশ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধও হয়েছেন।
শামসুন্নাহার হলের বাইরে বিবাহিত হবার কারণে আরো গুরুতর অন্যায়ের স্বীকার হয়েছেন বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের আরেকজন আবাসিক শিক্ষার্থী। মাত্র দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত পদ্মা বাড়ৈ বৃষ্টির হলের সিট কেটে দেয়া হয়েছে। বৃষ্টির স্বামী পটুয়াখালিতে থাকেন এবং পড়াশোনার জন্যই বৃষ্টিকে ঢাকায় থাকতে হয়।
হলের সিট কেটে দেয়া প্রসঙ্গে বৃষ্টি জানান, হলের অনেকেই বিবাহিত কিন্তু বিয়ের বিষয়টি তাদের গোপন রাখতে হয় কেবল মাত্র হলের সিট বাঁচিয়ে রাখতে। সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় স্বামীর মঙ্গল কামনায় শাখা-পলা-সিঁদুর পরার কারণে তার সিটটি বাতিল করা হয়। বিয়ে তো কোনো অপবিত্র কাজ নয় যে কেউ বিবাহিত হলে সেটি লুকিয়ে রেখে তাকে চলতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য পুরাতন নিয়মের সাথে অত্যন্ত অসঙ্গতিপূর্ণ এই নিয়মটি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ টি ছাত্রী হলের প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে ৪ দফা দাবি নিয়ে সাক্ষাৎ করেন।
উপাচার্য মহোদয় জানান, ছাত্রীদের এই দাবি যৌক্তিক এবং প্রভোস্ট কমিটির পরবর্তী সভায় এই নিয়মের বিষয়ে তিনি অবশ্যই আলোচনা করবেন। তিনি আরো বলেন, বিয়ে করা কোনো অপরাধ নয় অথবা প্রেগনেন্সি কোনো ডিজিজ নয়।
শামসুন্নাহার হল প্রভোস্ট ড. লাফিফা জামালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বিবাহিত ছাত্রীদের হলের সিট বাতিলের যেই নিয়ম রয়েছে, সেটা বিরুদ্ধে তিনি একাত্মতা প্রকাশ করবেন বলে জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য লিখিত নিয়ম থাকলেও সেগুলোর বাস্তবিক প্রয়োগ একেবারেই শূন্য। নিয়মগুলো আবার সকলের জন্য সমান নয়।
উপাচার্য থেকে হল প্রভোস্ট সকলের স্বীকার করেন যে এই নিয়মে পরিবর্তন আনা জরুরী কিন্তু বিবাহিত বলে হলের সিট বৃষ্টিদের কাটা পরে অথবা শামসুন্নাহার হলের ভুক্তভোগী ছাত্রীর সিট ছাড়ার আল্টিমেটাম জারি হয়ে যায়। প্রগতির ঝান্ডাধারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলে, কেনো এখনো স্বামীর স্বচ্ছলতায় একজন নারীকে ঢাকা শহরে থাকতে হবে এবং ছাত্রী থাকাকালীন তিনি হলে থাকতে পারবেন না – এই নিয়ম যুগের পর যুগ ধরেও পাল্টাতে পারেনি সেটি অত্যন্ত বিস্ময়ের।
বিবাহিত ছেলেদের হলে থাকার ব্যাপারে কোনো অসুবিধা নেই। যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি একজন বিবাহিত মানুষ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা বিবাহিত হবার কারণে তাদের অধিকার বঞ্চিত হবে সেটি অত্যন্ত কষ্টদায়ক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অতিসত্বর এই বর্বর নিয়ম পরিবর্তন করা উচিত বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। কারণ, এতে অসহায় ছাত্রীরা রীতিমতো দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে এমনটাই মনে করেন ছাত্রী প্রতিনিধিবৃন্দ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।