Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য নিয়ে শুরু হয়েছে ‘হার ই ট্রেড’ প্রদর্শনী

হারিয়ে যাওয়া দেশি-বিদেশি ঐতিহ্য নতুন করে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন একদল তরুণ নারী উদ্যোক্তা। তাদের নিজেদের মেধা-মনন আর সক্রিয় ব্যক্তিত্বের স্ফুরণ ঘটেছে এই প্রদর্শনীতে। দুই দিনব্যাপী বিশেষ এই প্রদর্শনীটি শুরু হয়েছে রাজধানী ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারের ১২ তলায়। শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে কেক কেটে ‘হার ই ট্রেড’ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যা’র সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। 

 

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, ‘হার ই-ট্রেড’ এর প্রেসিডেন্ট প্রীতি ওয়ারেছাসহ অন্য নারী উদ্যোক্তারা। দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যা’র সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, বিজয় দিবসের শুভ লগ্নে এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে, আজকের নতুন প্রজন্মের এ প্রদর্শনী ‘হার ই ট্রেড’ দেখে আমি আপ্লুত, অভিভূত। তারা নিজেদের উদ্ভাবন এবং দেশের যেসব ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে তা তুলে ধরেছেন। কেয়ার গিভারও যে একটা ট্রেড হতে পারে, তা জানলাম। এখানে এসে দেখছি, আমাদের কত সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যা তারা তুলে এনেছে। করোনা মহামারিতে একটি সংগঠন ‘উই’ ১০ লাখ নারী উদ্যোক্তাকে তুলে এনেছেন। যার কারণে মহামারি আমাদের দেশে ততোটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। যদিও দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হয়েছে। তবে ঘরের নারীরা এই সময় কাজের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে যেমন টিকিয়ে রেখেছে, তেমনি ঘরের অবস্থাটাও সচ্ছল রেখেছে। যে কারণে আমি বলি, আপনার ছেলের পাশাপাশি নারীকে শক্তিশালী করলে সংসার শক্তিশালী হবে। যখন নারী-পুরুষ সমৃদ্ধশালী হয় তখনি দেশ শক্তিশালী হয়।     

 

হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য নিয়ে শুরু হয়েছে ‘হার ই ট্রেড’ প্রদর্শনী

হার ই-ট্রেড’ এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যারা নারীদের কেবল পণ্যের মান যাচাই করেই ক্ষান্ত হন না, যারা তাদের পণ্য নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেন, ব্যতিক্রম বাংলা ও বহির্বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতি তুলে আনছেন। তারা নিজেরাই একেকজন ভিন্নধারার শিল্পী। যাদের হাতের ছোঁয়া ও সৃজনশীল মেধায় তৈরি হচ্ছে ব্যতিক্রম সব পণ্যসামগ্রী। তাদেরকে এগিয়ে দিতে কাজ করে থাকেন। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের শিক্ষার্থী পৃথ্বীলা কোলিন্স ও চারুকলার শিক্ষার্থী সেঁজুতি’র ‘মিথ আর্ট এন্ড ক্র্যাপটস’ এর পণ্য সামগ্রী। তারা গামছা, সুতা, আদিবাসী তাঁত দিয়ে ফোক মোটিভে তৈরি করেছেন গলার লম্বা মালা ও ছোট মালা, কানের দুল, হাতের ব্রেসলেট, কোনটাতে রয়েছে মেটালের ফিউশন। 

 

আদিবাসীদের পিননহাদি দিয়ে বানানো হয়েছে লং মালা। এতে ব্যবহার করা হয়েছে কড়ি, বিভিন্ন রঙের সুতোয় কাঁথা ফোড়ের নকশিকাঁথায় সেলাই করা গহনা। একই টেবিলে স্থান পেয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক শামীমা আক্তার সম্পার হাতে তৈরি পণ্য সামগ্রী। তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন, মিশরীয় সভ্যতার প্রতীক ‘শেয়াল দেবতা’ মোটিভের শাড়ি। রাজস্থানের ওয়ারলী চিত্রকলাকে ফুটিয়ে তুলেছেন তার তৈরি শাড়িতে। সম্পার পছন্দ হারিয়ে যাওয়া হাজার বছরের ঐতিহ্যকে এ প্রজন্মের কাছে পরিচিত করা। তাইতো তার পণ্যের রঙ ও ডিজাইনে স্থান পেয়েছে সেইসব অজানা রহস্যের মোটিভ। আরও রয়েছে ধ্যানী বুদ্ধের পাঁচ ফর্মের ব্লকে করা শাড়ি। যা অন্য আর দশটা ব্লক-বাটিকের রঙ-ডাইস থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত ফেরদৌস নিজ হাতে তৈরি করেছেন, কাঠ দিয়ে তৈরি মেয়েদের পার্সব্যাগ. জুয়েলারি বক্স, হাতের আংটি ও চুড়ি। সমুদ্রের পাড়ে পড়ে থাকা বিভিন্ন ধরনের সী-সেল দিয়ে তৈরি করেছেন, হাতের আংটি, মালা, লকেট, ব্রেসলেট ইত্যাদি।  

 

হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য নিয়ে শুরু হয়েছে ‘হার ই ট্রেড’ প্রদর্শনী

প্রদর্শনীতে এসব এক্সক্লুসিভ পণ্যের ক্রেতারাও ছিলেন ভিন্ন রুচির মানুষ। কথা হয় একজন ক্রেতা চিকিৎসক হুমার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক আগে থেকেই এই আপির ক্রেতা। গতানুগতিক কোনো কিছু খুব একটা পছন্দ হয় না। তাই তো অনলাইনে খুঁজে খুঁজে এসব পণ্য কিনে থাকি। কাল রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই জানলাম, আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রদর্শনী, ছুটির দিনও পড়েছে, তাই ইচ্ছেটা আর সংবরণ করতে পারলাম না। সকালেই চলে এলাম’।  

 

শাহনাজ সুলতানা। সাত বছর ধরে নিজের মেধা আর সৃজনশীলতা দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন তার স্বপ্নের ই-সপটি ‘রংধনু ক্রিয়েশন’। শাহনাজ জানান, আমি ছেলেবেলা থেকেই আঁকতে পছন্দ করতাম। কিন্তু সেই সময় লেখাপড়ার ব্যঘাত হবে বলে, আকাঁআঁকিটা লুকিয়ে করতাম। সেই শখটাকেই এখন পেশা হিসেবে নিয়েছি। তবে আমি চারুকলা নয়, হিসাব বিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলাম। আমি যখন গর্ভধারণ করি, তখন আমার চাকরি চলে যায়। সন্তান হওয়ার পর চাকরি ও সন্তান একসঙ্গে সামলিয়ে উঠতে পারছিলাম না। তাই রঙের টানে আবার ফিরে আসি আঁকাআঁকিকে। মসলিন শাড়িতে হ্যান্ডপেইন্ট করি, কখনো নিজের পছন্দে কখনো আবার ক্রেতার পছন্দের ডিজাইনে।  

 

হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য নিয়ে শুরু হয়েছে ‘হার ই ট্রেড’ প্রদর্শনী

 

ভিন্ন পেশা নিয়ে কাজ করছেন ‘এক্সটা মিল এজ কেয়ার’ এর সত্ত্বাধিকারী তাছলিমা সুলতানা সানাম। তিনি ৬০ এর অধিক কেয়ার গিভারদের নিয়ে সমাজের বয়োবৃদ্ধদের সব ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তার প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যাবে, ডিমেনশিয়া কেয়ার, প্যালিয়েটিভ কেয়ার, স্ট্রোক কেয়ার, ক্যান্সার কেয়ার, অটিস্টিক কেয়ার, আইসিইউ এবং সিসিইউ কেয়ার, নিউরো পেশেন্ট কেয়ার, বেবী কেয়ার, ফিজিওথেরাপি ইত্যাদি।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ