Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওমিক্রন এক নতুন আতংক!

শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ, আতঙ্ক বাড়িয়ে চলেছে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। ভাইরাসটি নিয়ে শুরু থেকেই উদ্বেগ ছিল সারা পৃথিবী জুড়ে। বিশ্বে নতুন এই আতংকের রেশ ধরে বাংলাদেশেও বিরাট আতংক বিরাজ করছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, বোতসোয়ানা, হংকং, বেলজিয়াম ও ইসরায়েলে মানুষের দেহে ভাইরাসের এ নতুন ধরনটির সংক্রমণ ধরা পড়লেও এর জিন বিন্যাস ভয় দেখাচ্ছে।

জিন কাঠামো বেশিবার পরিবর্তিত (মিউটেট) হয়েছে যে আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় ওমিক্রন অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এবং টিকাও এর বিরুদ্ধে অকার্যকর হয়ে যেতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন। বিজ্ঞানীদের মতে, এ ভ্যারিয়েন্ট কতটা সংক্রামক বা এর আক্রমণের ধরন কতটা তীব্র হবে, টিকার সুরক্ষা এড়াতে পারবে কিনা কিংবা এর কারণে মহামারী পরিস্থিতির অবনতি হবে কিনা- এসব প্রশ্নের উত্তর অনুমানের ভিত্তিতে দেওয়া যাবে না। সেজন্য আরও সময় দরকার, প্রয়োজন আরও পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ। ভ্যারিয়ান্টটি সারা বিশ্ব জুড়ে বি.১.১.৫২৯।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরন বা ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্ত করার কথা জানান গত মঙ্গলবার। যেসব নমুনা থেকে ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া গেছে সেগুলো নেওয়া হয়েছিল ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে।পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে তারা ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে তাদের উদ্বেগের বিষয়টি সরকারকে জানান এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাইরাস ইভোলিউশন বিষয়ক টেকনিকাল গ্রুপকে বসতে বলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায়  মানুষের দেহে এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে প্রাককালে, যার বেশিরভাগই মিলেছে সবচেয়ে জনবহুল গৌতেং প্রদেশে। এর বাইরে বোতসোয়ানা, হংকং, বেলজিয়াম ও ইসরায়েলে ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্ত হয়েছে। চিহ্নিত বি.১.১.৫২৯ নামে ভ্যারিয়েন্টটি আলোচনার সুবিধার জন্য  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর নাম দিয়েছে ‘ওমিক্রন’। একে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ বা ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট’ শ্রেণিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আলফা, বেটা, গামা ও ডেল্টার ক্ষেত্রেও একই ভাষ্য ব্যবহার করেছিল তারা। এর অর্থ হচ্ছে- প্রাথমিক তথ্য প্রমাণে ভ্যারিয়েন্টটি বেশি সংক্রামক এবং এর বিরুদ্ধে টিকা কম কার্যকর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রাথমিক পর্যালোচনায় ভ্যারিয়েন্টটি গৌতেংয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং সম্ভবত এখন দেশের অন্য ৮টি প্রদেশেও পৌঁছে গেছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সংখ্যা বিস্তার দিনের প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেস (এনআইসিডি) নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণেই এমনটা হয়েছে তা না বললেও দেশটির বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা রোগীর ঊর্ধ্বগতির পেছনে বি.১.১৫২৯ ধরনের ভূমিকা থাকতে পারে। এখন পর্যন্ত যাদের দেহে ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্ত হয়েছে, তাদের বড় অংশই তরুণ। তবে এটি টিকাদানের হার বেশি এমন এলাকায় কেমন আচরণ করবে, তা বলা যাচ্ছে না।

সবচেয়ে বেশি যে দেশে ভ্যারিয়েন্টটি মিলেছে, সেই দক্ষিণ আফ্রিকায় টিকাদানের হার খুবই কম। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের এক চতুর্থাংশের সামান্য বেশি কোভিডের টিকা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. জো পাহলা। উদ্বেগের কারণ এ ভাইরাসের জিন বিন্যাসে মিউটেশন বা রূপবদলের সংখ্যা। ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশনের ধারা খুবই অস্বাভাবিক যার মধ্যে ৩০ এরও বেশিবার মিউটেশন হয়েছে কেবল স্পাইক প্রোটিনেই। সব ভাইরাসই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রূপ বদলায়। তবে বেশিরভাগ পরিবর্তনের ক্ষেত্রেই ভাইরাসটি যে দেহে আশ্রয় নেয় তার ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না, বা ফেললেও তা এত সামান্য যে টেরই পাওয়া যায় না।

মানবদেহের কোষে প্রবেশে ভাইরাস যে স্পাইক প্রোটিনকে ব্যবহার করে, বি.১.১.৫২৯ এর সেই স্পাইক প্রোটিনেই মিউটেশন হয়েছে ৩০ বারের বেশি, যা ডেল্টার মিউটেশনের প্রায় দ্বিগুণ এবং উহানে শনাক্ত হওয়া আদি ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে ‘উল্লেখযোগ্য পার্থক্য’ সৃষ্টি করেছে। কোভিড মোকাবেলায় বিশ্বে এখন পর্যন্ত যত টিকা ব্যবহৃত হচ্ছে তার সবগুলোই বানানো হয়েছে করোনাভাইরাসের আদি রূপকে ধরে। ভ্যারিয়েন্টটির কিছু কিছু পরিবর্তন মানুষের শরীরের অ্যান্টিবডিকে অকার্যকর এবং দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার সক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তবে অন্য অনেক পরিবর্তন সম্বন্ধে এখনও কিছুই জানা যায়নি, তাই এটি আদতেই কেমন আচরণ করতে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

বি.১.১.৫২৯ এ পাওয়া কয়েকটি মিউটেশন এর আগে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। সেসব মিউটেশনের ফলে ভ্যারিয়েন্টটি দ্রুত সংক্রমিত হতে পারবে বলে আন্দাজ করা হচ্ছে। কিন্তু নতুন ভ্যারিয়েন্টে আরো কিছু মিউটেশন রয়েছে যার কারণে হয়তো শরীরের অ্যান্টিবডি ভাইরাসকে শনাক্ত করতে পারবে না এবং ভ্যাকসিন অপেক্ষাকৃত কম কার্যকর হবে, বলছেন বিজ্ঞানীরা। মিউটেশনগুলো ভাইরাসকে এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ছড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শক্তিশালী করেছে বলে আশঙ্কা। ইমিউন সিস্টেমের বিভিন্ন অংশকে পাশ কাটিয়ে শরীরে প্রবেশ করার সক্ষমতাও থাকতে পারে এগুলোর।

উদ্বেগ, আতঙ্ক থেকেই বিশ্বের অনেক দেশ এরই মধ্যে সতর্কতামূলক পদক্ষেপও নিয়ে নিয়েছে। কেননা মহামারীর শিক্ষাই হচ্ছে- সবসময় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করলে আপনার চলবে না, আগেই পদক্ষেপ নিতে হবে, সম্ভাব্য বিপদ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। সচেতনতাই কেবল রুখে দিতে পারে মহাবিপদ।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ