‘ডায়াবেটিস সেবা নিতে আর দেরি নয়’
বলা হয়ে থাকে নীরব মরণব্যাধির যদি কোন আদর্শ উদাহরণ থাকে তাহলে সেটি হচ্ছে ডায়াবেটিস। বর্তমান সময়ে প্রায় অধিকাংশ মানুষেই ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। যা ধীরে ধীরে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে।ডায়াবেটিস থেকে পুরোদমে নিস্তার পাওয়া প্রায় অসম্ভব। বিশ্বে এই রোগটি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে ১৪ এই নভেম্বর একটি বিশেষ দিন হিসাবে স্মরণ করা হয়।
আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। প্রতি বছর বাংলাদেশসহ প্রায় ১৭০টি দেশে দিবসটি পালিত হয়। ডায়াবেটিস দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য—‘ডায়াবেটিস সেবা নিতে আর দেরি নয়’। দেহের অন্যান্য কোষকলার মতো স্নায়ুতন্ত্রকেও আক্রান্ত করে। ডায়াবেটিস রোগীর স্নায়বিক সমস্যা বা ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি কর্মক্ষমতা হরণ করে জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে অতিরিক্ত মাত্রার গ্লুকোজ স্নায়ুকোষকে দিনের পর দিন ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে। স্নায়ুকোষগুলোর সংযোগস্থল নষ্ট হয়, তাদের আবরণ নষ্ট হতে থাকে। সব মিলিয়ে স্নায়বিক উদ্দীপনা সংবহন বাধাগ্রস্ত হয়।
গবেষণা বলছে ৭০ শতাংশ ডায়াবেটিসের রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই অকালে মৃত্যুবরণ করে থাকেন। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ- এ দুটো পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যে বিষয়গুলো ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত, যেমন: অতি ওজন, ধূমপান, মন্দ খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা বা বংশগতি। এগুলো হৃদরোগেরও ঝুঁকি। তাই এ দুটো সমস্যা পরস্পরের হাত ধরেই চলে। একটির ঝুঁকি কমালে অপরটির ঝুঁকিও কমে আসে।
বর্তমানে ডায়াবেটিসের কারণে অপেক্ষাকৃত কম বয়সী মানুষের হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। ৪০ বছরের নিচে অনেক তরুণ, যুবা নানা ধরনের হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকের হৃদরোগ হয়ে যাওয়ার পর ডায়াবেটিস শনাক্ত হচ্ছে, যা তাঁরা আগে বুঝতেই পারেননি। একটি বড় অংশ হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত টেরই পায় না যে তাঁর কোনো হৃদরোগ আছে। এর কারণ হলো ডায়াবেটিস আমাদের¯স্নায়বিক অনুভূতিকে ভোঁতা করে দেয়, যার ফলে অন্যদের মতো হৃৎপিণ্ডে সমস্যা হলে বুকে ব্যথা বা চাপ লাগা, ঘাম অথবা পরিচিত উপসর্গগুলো তাঁদের প্রায়ই হয় না। এমনকি কোনো ধরনের উপসর্গ ছাড়াই তাঁদের হার্ট অ্যাটাক হওয়া বিচিত্র নয়।
ডায়াবেটিসজনিত কিডনি বিকল হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না। ৭০-৮০ শতাংশ ক্ষতিসাধনের পরই কেবল উপসর্গগুলো দেখা দেয়। যেমন: মুখ ও শরীর ফুলে যাওয়া, শরীরে পানি জমা, অরুচি, ক্ষুধামান্দ্য, বমি ভাব, রক্তশূন্যতা, চুলকানি, বোধশক্তিতে সমস্যা ইত্যাদি। কখনো বুকে পানি জমে শ্বাসকষ্ট বা রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া। কিডনি জটিলতার অনেক রোগী স্ট্রোক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, কেননা প্রস্রাবে আমিষ যেতে থাকলে এই রোগগুলোর ঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস রোগীর স্নায়বিক সমস্যা প্রতিরোধ করতে বা নিম্নতম পর্যায়ে রাখতে হলে প্রথম কাজ হলো রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, আর নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। যদি কারও স্নায়বিক সমস্যার লক্ষণ দেখা দেয়, তবে শুরুতেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা জরুরি। এ ছাড়া পায়ের বিশেষ যত্ন নেওয়া, সঠিক জুতা নির্বাচন, পায়ের যেকোনো সংক্রমণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া দরকার। ব্যথা ও নানা রকমের বিরক্তিকর অনুভূতি কমাতে বেশ কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যায়। সর্বোপরি ডায়াবেটিসের বিষয়টি নিয়ে একটি সামগ্রিক ধারণা রাখা সকলের উচিত।