গল্পের জাদুকরের জন্মদিন আজ
বাংলা সাহিত্যের নন্দিত লেখক, জনপ্রিয় নাট্যকার এবং চলচ্চিত্রকার হুমায়ুন আহমেদ এর ৭৩ তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৮ সালের এই দিনে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের দৌলতপুর গ্রামে নানাবাড়িতে জন্ম নেন এই কথার জাদুকর।
কথার জাদুতে কয়েক প্রজন্মকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন হুমায়ুন আহমেদ। ছোটগল্প,উপন্যাস,নাটক, গান বা চলচ্চিত্র যেখানেই হাত দিয়েছেন, সেখানেই সোনা ফলিয়েছেন। ১৯৭২ সালে তার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’র ভূমিকায় খ্যাতিমান সাহিত্যিক আহমেদ শরীফ লিখেছিলেন তার প্রতিভার কথা। এরপর আর থেমে থাকেন নি হুমায়ুন আহমেদ। নানা রঙে রাঙিয়েছেন এদেশের সাহিত্য-অঙ্গন।
মধ্যবিত্ত পাঠক যাদের কাছে একসময় পশ্চিম বাংলার গল্প-উপন্যাসই ছিল সাহিত্য আস্বাদনের মূল অবলম্বন তাদের ফিরিয়ে এনেছেন হুমায়ুন আহমেদ। তিনি সহজ আলোয় তুলে এনেছেন মানবীয় সম্পর্কের নানা দিক,নানা অধ্যায়; জন্ম দিয়েছেন বাংলা নাটকে ‘বাকের ভাই’ এর মত চরিত্র। তার সৃষ্ট চরিত্র ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে উঠে বেশ জনপ্রিয় ও অনুসরণীয়। আশির দশক থেকে মধ্যবিত্ত জীবনের কথা সহজ সরল গদ্যে তুলে ধরে পাঠকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলেন তিনি।
হুমায়ূন আহমেদের লেখা উপন্যাসের সংখ্যা দুই শতাধিক। উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, লীলাবতী, কবি, সৌরভ, নী, ফেরা, কৃষ্ণপক্ষ, গৌরিপুর জংশন, নৃপতি, অমানুষ, সাজঘর, বাসর, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমণি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা ও জননীর গল্প, মধ্যাহ্ন প্রভৃতি। তার সর্বশেষ উপন্যাস ‘দেয়াল’ও পাঠকপ্রিয়তা পায়। তাছাড়া বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতেও তার শিল্পকৌশল ছিল সুনিপুণ।
শুধু কথাসাহিত্যিক হিসেবে নন, হুমায়ুন আহমেদ টেলিভিশন নাটক নির্মাণেও নিয়ে ভিন্নধারা এসেছিলেন। আশি-নব্বইয়ের দশকে তার পরিচালিত ‘অয়ময়’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘আজ রবিবার’ নাটক ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। পরবর্তীতে তিনি অসংখ্য একক ও ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করেছন।
এরপর ‘শঙ্খনীল কারাগার’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে সাড়া ফেলে দেন তিনি। রুপালি পর্দায় তিনি নির্মাণ করেছন ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।
হুমায়ূন আহমেদ তার দীর্ঘ চার দশকের সাহিত্য জীবনে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার মধ্যে একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। দেশের বাইরেও সম্মানিত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। জাপানের এনএইচকে টেলিভিশন তাকে নিয়ে ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’ শিরোনামে ১৫ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র প্রচার করে।