Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“নারী ইউএনওরাও যৌন হয়রানির শিকার”

নারীরা আজ এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি ক্ষেত্রে, ঘরে এবং বাইরে সমান তালেই কাজ করে যাচ্ছে তারা। এতো কিছুর পরেও নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হয়ে যাচ্ছে। যেসব নারীরা স্থানীয় পর্যায়ে সুশাসন নিয়ে কাজ করছে তারাও এই যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-র করা এক জরিপে উঠে এসেছে, নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অসহযোগিতা ও নানা প্রতিবন্ধকতা ছাড়াও যৌন হয়রানিরও শিকার হয়েছেন।

‘স্থানীয় পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উপজেলা নারী নির্বাহী কর্মকর্তার চ্যালেঞ্জ ও করণীয়' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে তথ্যটি প্রকাশ করা হয়। টিআইবি জানায় বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের সময় ৫ দশমিক ৭ শতাংশ ইউএনও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রাক্তন ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাহিদ শারমীন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।

২০২০ সালের জুন মাসের তথ্যের ভিত্তিতে জরিপের জন্য দেশের ৪৮৫টি উপজেলার মধ্যে ১৪৯টি উপজেলায় কর্মরত নারী ইউএনওকে ইমেইলে প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে জরিপে অংশ নেন ৪৫ জন। নাহিদ শারমীন সম্মেলনে জানান গুণগত তথ্য সংগ্রহ করার জন্য মুখ্য তথ্যদাতা হিসেবে নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা পর্যায়ে অন্যান্য সরকারি অফিসের কর্মকর্তা এবং প্রশাসন ক্যাডারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরাসরি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। 

উপজেলা পরিষদে সাচিবিক সহায়তা দিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারী ইউএনওরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে আসা ‘অবৈধ আর্থিক সুবিধার' কারণে অনুমোদন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন, যা গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়। জরিপে অংশ নেওয়া  ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ ইউএনও জানিয়েছেন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে অনিয়ম করতে চাপের মুখে পড়ার কথা এবং ২০ শতাংশ জানিয়েছেন অতিরিক্ত ত্রাণ সামগ্রীর জন্য সুপারিশ করতে বাধ্য করার কথা।

এছাড়া বিভিন্ন মহল থেকে ব্যয়ের যথার্থতা যাচাই না করার চাপ আসার কথা জানিয়েছেন ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা। ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ নারী ইউএনও ভুয়া ব্যয়ের বিল অনুমোদন এবং ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ নারী ইউএনও উপজেলা পরিষদের ক্রয় সংক্রান্ত কাজে অনিয়ম করতে বাধ্য করার কথা বলেছেন। 

জরিপে, ২৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ নারী ইউএনও দায়িত্ব পালনে সহকর্মীদের পক্ষ থেকে এবং ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ উপজেলা চেয়ারম্যানের ‘অসহযোগিতার' সম্মুখীন হওয়ার কথা জানিয়েছেন। এছাড়াও দুর্নীতিবিরোধী কাজের ক্ষেত্রে ‘প্রতিবন্ধকতা' ‘অনৈতিক কাজের জন্য চাপ', উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজে বাধার সম্মুখীন হওয়া, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের দপ্তরের সাথে সমন্বয়হীনতার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে অসহযোগিতা, জেলা প্রশাসন থেকে যথাসময়ে সহযোগিতা না পাওয়া, স্থানীয় সংসদ সদস্য, মন্ত্রী বা সচিবের ‘প্রভাব খাটানোর' সহ নানা অভিযোগ করেছেন জরিপে অনেক ইউএনও।

দুর্যোগ মোকাবিলায় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন ৯৮ শতাংশ ইউএনও এবং করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন ৯১ শতাংশ নারী যা টিআইবির জরিপ বলছে। 

এছাড়াও ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ ইউএনও দুর্নীতির বিরদ্ধে পদক্ষেপ নিতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বা রাজনীতিবিদদের চাপের মুখে পড়েছেন। ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ ইউএনও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, এমনকি সাংবাদিকের মাধ্যমেও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার কথা জানিয়েছেন জরিপে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসহযোগিতার কারণে ৫০ শতাংশ, স্থানীয় রাজনীতিবিদদের কারণে ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ, উপজেলা পরিষদের অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তার দ্বারা ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ, জেলা প্রশাসকের কারণে ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কারণে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ ও সাধারণ জনগণের কারণে ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ ইউএনও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার কথা জরিপে উঠে এসেছে।

টিআইবি স্থানীয় পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নারী ইউএনওদের ভূমিকা আরও কার্যকর করতে আট দফা সুপারিশ করেছে।

নারী ইউএনওদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব দূর করার জন্য উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা পরিষদের অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে নারীর প্রতি সংবেদনশীল আচরণের ওপর প্রশিক্ষণের আয়োজন করা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের এসিআরে জেন্ডার সংবেদশীলতাকে একটি সূচক হিসেবে রাখা দরকার। 

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়ার কাজে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ইউএনও এবং চেয়ারম্যানদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশনের আয়োজন।

দুর্নীতি প্রতিরোধে পদক্ষেপের জন্য নারী ইউএনওদের জেলা পর্যায়ে সম্মানিত করা এবং পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সংবাদমাধ্যমগুলোকে স্থানীয় পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যথাসাধ্য সঠিক সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে ইউএনওর কার্যক্রম সম্পাদনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা দিতে হবে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘দেশে কর্মরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এক তৃতীয়াংশ নারী। আমাদের প্রশাসনিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবেশ জেন্ডার সংবেদনশীল নয়, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক। নারী ইউএনওকে একজন মানুষ বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে না দেখে মূলত নারী হিসেবে দেখার প্রবণতা প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।”

সাংবাদিকদের কারণেও নারী ইউএনওরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন বলে টিআইবির গবেষণায় উঠে এসেছে। 

ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় সাংবাদিকরা প্রভাবশালী মহলের সাথে যোগসাজশে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে থাকেন।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ