শুভ জন্মদিন বলিউড বাদশাহ!
বলিউডের অন্যতম সেরা রোমান্টিক অভিনেতা শাহরুখ খানের ৫৬ তম জন্মদিন আজ। ভক্ত কুলের কাছে "বলিউড বাদশাহ", "বলিউড কিং" ও "কিং খান" হিসেবেই বেশি পরিচিত শাহরুখ। শুধু বলিউডেই নয়, বিশ্বজুড়েই রয়েছে কিং খানের অসংখ্য ভক্ত সমর্থক।
কিং খানের জন্মদিন মানেই বলিউড পাড়ায় উৎসব। অনেক আগে থেকেই ভক্তরা প্রিয় অভিনেতার জন্মদিন উদযাপনের জন্য হাজির হন শাহরুখের বাড়ির সামনে। দেশে দেশে এ অভিনেতার ভক্তরা দলবেঁধে কেক কাটেন, প্রিয় তারকার ছবি দেখেন। যেন ২ নভেম্বর মানেই শাহরুখ খান দিবস।
১৯৬৫ সালের আজকের দিনে নতুন দিল্লির এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কিং খান। পিতা মীর তাজ মোহাম্মদ খান ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মী ছিলেন। মাতা লতিফ ফাতিমা ছিলেন ঊর্ধ্বতন সরকারী প্রকৌশলী ইফতিখার আহমেদের কন্যা।
ছয় বছর প্রেম করার পর ১৯৯১ সালের ২৫শে অক্টোবর গৌরী চিব্বারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন শাহরুখ খান। তাদের এক পুত্র আরিয়ান খান ও এক কন্যা সুহানা খান । ২০১৩ সালে তৃতীয় সন্তান আব্রাম খানের জন্ম হয়।
টিভি সিরিয়াল থেকে বড় পর্দায় ১৯৮৮ সালে শাহরুখ খান জীবনে প্রথম ‘দিল দরিয়া’ নামক একটি টিভি ধারাবাহিকে কাজ করার চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু কাজ শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছিল তখন। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে ‘ফৌজি’ নামক টিভি সিরিয়ালে তার অভিনয় জীবনের শুরু হয়।
দিওয়ানা (১৯৯২) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি বড় পর্দায় যাত্রা শুরু করেন। তার বিপরীতে ছিলেন দিব্যা ভারতী। ছবিটি ব্যবসা সফল হয় এবং তিনি বলিউডে নিজের অবস্থান তৈরি তরতে সক্ষম হন।
১৯৯৩ সালে বাজিগর ও ডর ছবিতে খলচরিত্রে অভিনয় করে তারকাখ্যাতি লাভ করে শাহরুখ। ডর চলচ্চিত্রটি খুব সাফল্য লাভ করেছিল। বাজিগর ছবির জন্য ক্যারিয়ারের প্রথম ফিল্ম-ফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৫ ছিল শাহরুখ খানের জন্য তো বটেই, পাশাপাশি বলিউডের নতুন ইতিহাস গড়ার একটি বছর। মুক্তি পায় শাহরুখ-কাজল জুটির ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’। এটি বক্স অফিসের আগের সব রেকর্ড ভাঙে, যার সব কৃতিত্ব পান শাহরুখ খান।
চলচ্চিত্রটি ভারতের সর্বাধিকবার প্রচারিত চলচ্চিত্র হিসেবে নতুন রেকর্ড করেছে। এর আগে অমিতাভ বচ্চনের ‘শোলে’র ২৬০ সপ্তাহ চলার রেকর্ডটি ভেঙে দেয়। চলচ্চিত্রটিতে শাহরুখ খান অভিনয় করেন ‘রাজ’ আর কাজল অভিনয় করেন ‘সিমরান’ চরিত্রে। মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথে ছবিটি বক্স অফিস করেছে পরিপূর্ণ।
রোমান্টিক নায়ক হিসেবে খ্যাত হলেও শাহরুখ খান অভিনীত চরিত্রগুলোতে দেখা যায় বিভিন্ন চরিত্রের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। ‘ডন’ সিরিজ এর প্রথম মুভি পাওয়ার পর শাহরুখ খান ‘বলিউড কিং’ উপাধি পান। ডন কিংবা বাজিগরে যেমন নির্দয় শাহরুখ অন্যদিকে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’তে চমৎকার এক রোমান্টিক অভিনেতা। নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে জয় করেছেন কোটি ভক্তর হৃদয়।
আবার কাল হো না হো কিংবা দেবদাসে ব্যর্থ প্রেমিকের রূপের ছিলো সমান জনপ্রিয়তা। অ্যাকশন হিরো হিসেবেও শাহরুখ নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ডন সিরিজ, যাব তাক হেয় জান, শক্তি-দ্য পাওয়ার, ম্যায় হু না-এর মতো চলচ্চিত্রগুলোতে দেখা মেলে অ্যাকশন হিরো শাহরুখ খানের।
অভিনেতা হিসেবে বৈশ্বিক অবদানের জন্য শাহরুখ খানকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত করেছে স্কটল্যান্ডের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়। ওয়েলথ-এক্স সংস্থার বিচারে বিশ্বের সবথেকে ধনী হলিউড, বলিউড তারকার তালিকায় শাহরুখ খানের অবস্থান দ্বিতীয়।
শাহরুখ ৩০টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন থেকে ১৪টি পুরস্কার এবং একটি বিশেষ পুরস্কার অর্জন করেন। দিলীপ কুমারের সাথে যৌথভাবে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে সর্বাধিক আটটি পুরস্কার বিজয়ের রেকর্ডধারী। খান বাজীগর (১৯৯৩), দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে (১৯৯৫), দিল তো পাগল হ্যায় (১৯৯৭), কুছ কুছ হোতা হ্যায় (১৯৯৮), দেবদাস (২০০২), স্বদেশ (২০০৪), চাক দে! ইন্ডিয়া (২০০৭), ও মাই নেম ইজ খান (২০১০) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।
২০০৫ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মাননায় ভূষিত করে। ফ্রান্স সরকার তাকে ২০০৭ সালে অর্দ্র দে আর্ত এ দে লেত্র, ও ২০১৪ সালে ফরাসি লেজিওঁ দনরের পঞ্চম পদ শ্যভালিয়ে খেতাব প্রদান করে।