শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব
আজ বুধবার (২০ অক্টোবর) বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা’ ও ‘কঠিন চীবর দান’ উৎসব। এটি ‘আশ্বিনী পূর্ণিমা’ নামেও পরিচিত। ‘প্রবারণা’ শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে আগত। ‘প্রবারণা’ শব্দটির পালি ভাষারূপ ‘পবারণা’। এর অর্থ হলো ‘নিষেধ করা’, ‘শিক্ষা সমাপ্তি’। প্রবারণা পূর্ণিমার অপর নাম ‘আশ্বিনী পূর্ণিমা’। প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাব্রত পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও এই পূর্ণিমা তিথি সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর কাছে তাৎপর্যপূর্ণ।
বৌদ্ধদের মতে, এই পুণ্যময় পূর্ণিমা তিথিতে মহামানব গৌতম বুদ্ধ তাবতিংস স্বর্গে মাতৃদেবীকে অভিধর্ম দেশনার পর ভারতের সাংকাশ্য নগরে অবতরণ করেন। মানবজাতির সুখ, শান্তি ও কল্যাণের লক্ষ্যে দিকে দিকে স্বধর্ম প্রচারের জন্য তিনি ভিক্ষু সংঘকে নির্দেশ দেন। একই দিনে তার তিন মাসের বর্ষাবাসের পরিসমাপ্তি ঘটে।
দিবসটি উপলক্ষে ফানুস উড়ানোসহ বৌদ্ধ সম্প্রদায় নানা ধরনের উৎসবের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে- জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, ভিক্ষু সংঘের প্রাতঃরাশ, প্রভাতফেরি, মঙ্গলসূত্র পাঠ, বুদ্ধপূজা, পঞ্চশীল ও অষ্টাঙ্গ উপসথশীল গ্রহণ, মহাসংঘদান, ভিক্ষু সংঘকে পিণ্ডদান, অতিথি আপ্যায়ন, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ, আলোচনা সভা, প্রদীপপূজা, বিশ্বশান্তি কামনায় সম্মিলিত বুদ্ধোপাসনা, বুদ্ধকীর্তন, আলোকসজ্জা, ফানুস ওড়ানো প্রভৃতি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণীতে তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাণীতে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ধরে রাখার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
মহামতি গৌতম বুদ্ধ একটি শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যময় বিশ্ব গঠনে আজীবন সাম্য, মৈত্রী, মানবতা ও শান্তির অমিয় বাণী প্রচার করে গেছেন। তার আদর্শ ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল ও মানবিকতায় পরিপূর্ণ। বুদ্ধের অহিংস বাণী ও জীবপ্রেম আজও বিশ্বব্যাপী বিপুল সমাদৃত।
কঠিন চীবর দানকে বলা হয় দানশ্রেষ্ঠ। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণে এ দানোৎসব সবার মধ্যে গড়ে তোলে ঐক্য, সংহতি ও সম্প্রীতি। ত্যাগ, সংযম, নিয়মানুবর্তিতা আর কঠোর ধ্যান সাধনার মাধ্যমে উদযাপিত ‘কঠিন চীবর দান’ ভক্তদের বৌদ্ধের প্রকৃত অনুসারী হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে আছে হাজার বছরের বৌদ্ধ ঐতিহ্য। এ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাচীন বৌদ্ধবিহারের উজ্জ্বল স্বাক্ষর বহন করছে। প্রবারণা পূর্ণিমা মূলত জাতিকে শিক্ষা দেয় ক্ষমাশীলতা, শ্রদ্ধাবোধ, পরস্পরের প্রতি হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমেই কল্যাণের পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব।