প্রায় ১০০ বছর পর পৃথিবীর বুকে কার্ল মার্ক্স!
কার্ল মার্ক্স একজন বহুল আলোচিত ব্যক্তি। আলোচক থেকে পৃথিবীতে তার সমালোচকের সংখ্যাই বেশি। যারা সত্যবাদী, সত্যকে নির্দ্বিধায় প্রকাশ করে, তাদের সমালোচকের অভাব হয় না। তাই সেইসব সমালোচনা থেকে মুক্তি পেতে এবং তার প্রতিবাদী মনোভাব বিশ্ববাসীকে জানাতে তিনি মার্কিন নাট্যকার হাওয়ার্ড জিনের 'সোহোতে মার্ক্স ' এর মাধ্যমে ফিরে আসেন বর্তমান পৃথিবীতে। আর সেটির বাংলা অনুবাদ করে জাভেদ হুসেন মার্ক্সকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন।
বটতলা ও যাত্রিক প্রযোজিত, নায়লা আজাদ নূপুর পরিচালিত, জাভেদ হুসেন অনুদিত, হুমায়ুন রেওয়াজ ও উম্মে হাবিবা অভিনীত 'মার্ক ইন সোহো'-র প্রথম প্রদর্শনী ছিল ৬ অক্টোবর।
মার্ক্স তার জীবনের যেসব লেখনী পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার সমালোচনায় লিখেছেন মঞ্চে তা নাটকের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
হুমায়ুন রেওয়াজের অভিনয়ও ছিল অত্যধিক প্রশংসনীয়। তিনি খুব চমৎকারভাবে মার্ক্স-এর চরিত্রকে তুলে ধরেছেন উপস্থিত দর্শকদের সামনে। টানা একঘন্টা তিনি ঘটনাগুলো ও মার্ক্স-এর মনের কথাগুলোর অনবরত বর্ণনা করে গেছেন। এতে করে তার কঠোর পরিশ্রমী অভিনেতা হওয়ার পরিচয়ও প্রকাশ পেয়েছে।
জেনির চরিত্রে থাকা উম্মে হাবিবার অভিনয়ও ছিল অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন। তিনি সম্পূর্ণ ঘটনার বর্ণনা তার নৃত্য এবং চমৎকার অঙ্গভঙ্গি দ্বারা প্রকাশ করেছেন। তার ওপর থেকে চোখ সরানোর মত দর্শক খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল ছিল।
তাদের দুজনের অভিনয়ে দর্শকরা মার্ক্স সম্পর্কে জেনেছে। তার মনের কথা গুলো শুনেছে এবং কথাগুলো শুনে মনে হয়েছে আমাদের দেশের রাজনৈতিক অবস্থা-ই প্রদর্শিত হচ্ছে। এত বছর পরেও মার্ক্স ফিরে এসে দেখেন তিনি যে সকল বিষয়ে প্রতিবাদ করে গেছেন তা এখন আরো বেশি বেড়েছে। শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার, সঠিক মূল্যায়ন না দেওয়া এবং তাদেরকে অবহেলা সমাজে আজও বিদ্যমান। প্রতিদিনই তাদের বিরুদ্ধে হওয়া অত্যাচারগুলো পত্রিকায় দেখা যায়।
নাটকের একটি দৃশ্যে মার্ক্স পত্রিকায় একটি খবর পড়লেন "নিউইয়র্ক শহরে একটি চাকরির দুই হাজার পদের জন্য ভোর হওয়ার আগে থেকে এক লক্ষ লোকের লাইন। বাকি আটানব্বই হাজারের কি হবে?"
এই প্রশ্নের জবাবে আমাদের চারপাশে মানুষের চাকরির জন্য হাহাকার, সেই বাসের ধাক্কা আর রোদে পুড়ে দীর্ঘ লাইনের কথা দর্শকদের মনেও ঘুরপাক খাচ্ছিল। প্রতিদিনই গরীবের প্রতি অত্যাচার বেড়েই চলেছে। ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে আর গরীবের সম্পদ সমাজের অগ্রগতির নামে প্রতিনিয়ত ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে।
খুব অল্প সময়ে লেখকের বুদ্ধিমত্তায় শক্তিশালী বার্তা প্রকাশ পেয়েছে নাটকে। দর্শক নাটকটিকে উপভোগের পাশাপাশি অনুভবও করেছেন, আর এতেই নাটকের সার্থকতা প্রকাশ পেয়েছে।