Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৫০ দেশ ভ্রমণে বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী নাজমুন

ভ্রমণ মানুষকে আনন্দ দেয়, দেয় মানসিক প্রশান্তি। নিজেকে খুঁজতে অনেকেই ভ্রমণকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন। আসলেও তাই। ভ্রমণ অনেকের কাছেই নেশার মতো। একটু সময় পেলেই ছুটে যান পাহাড়ে অথবা সমুদ্রে কিংবা প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম পরিবেশের কোনো মনোরম স্থানে। তবে নাজমুন নাহারের গল্পটা একটু ভিন্ন। সম্প্রতি তিনি ১৫০ টি দেশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়েছেন।

কেবল মানসিক প্রশান্তির জন্যই যে তিনি এই দেড়শ দেশ ভ্রমণ করেছেন তা নয়। দেশের জন্য তিনি কিছু করতে চেয়েছিলেন। নাজমুনের লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশের বিজয়ের ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই পৃথিবীর ১৫০ টি দেশে বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো। তিনি তার এই স্বপ্ন পূরণ করেছেন।

তার সর্বশেষ ভ্রমণের দেশ হলো আফ্রিকার দ্বীপদেশ সাও টোমে ও প্রিন্সিপে। দীর্ঘ ২১ বছর ধরে তিনি লাল-সবুজ পতাকা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এই দেশগুলোয় বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরেছেন তিনি।

১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন নাজমুন নাহার। যেন তার জন্মই হয়েছিলো পৃথিবী ভ্রমণের জন্য। ছোটবেলা থেকেই ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ ছিলো তার। ভ্রমণ-বিষয়ক বই নিয়েই তিনি সময় পার করেছেন। এই বই পড়ার মাধ্যমে তার বিশ্ব ভ্রমণের ইচ্ছা আরো তীব্র হয়ে ওঠে।  তার এই উৎসাহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন বাবা মোহাম্মদ আমীন ও দাদা আহমদ উল্লাহ। বাবার ও দাদার পূর্ণ সাপোর্ট মেয়েকে ভবিষ্যৎ বিশ্ববিখ্যাত পরিব্রাজক হতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। পরবর্তীতে বাবা মারা যাওয়ার পর নাজমুন নাহার তার মা তাহেরা আমিনকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন ১৪টি দেশ।

১৫০ দেশ ভ্রমণে বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী নাজমুন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করেছেন তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেছেন তিনি। এরপর ২০০৬ সালে শিক্ষা-বৃত্তি পেয়ে চলে যান সুইডেন। পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ড-কালীন কাজ করতেন। শুরু তগেকেই তিনি কঠোর পরিশ্রম করে টাকা জমাতেন শুধু ভ্রমণের জন্য। কম খরচে থাকতেন পৃথিবীর নানা ট্রাভেলার্স হোস্টেলে। কিছু টাকা জমলেই বেরিয়ে পড়েন ভ্রমণে। খরচ কমানোর জন্যে বেশিরভাগ সময় সড়ক পথে ভ্রমণ করতেন তিনি। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে দিনের পর দিন সর্বোচ্চ টানা ৫৮ ঘণ্টা, কখনো ৪৮ ঘণ্টা, কখনো ৩৬ ঘণ্টা তাকে বাসে জার্নি করতে হয়েছে। টানা কখনো ১৫ দেশ, কখনো ১৪ দেশ তিনি ৩ মাস, ৪ মাস, ৫ মাসের জন্যে সড়কপথে এক শহর থেকে আরেক শহরে, এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভ্রমণ করেছেন। কোথাও যাওয়ার আগে সেই মহাদেশের ম্যাপ ও সেখানকার দর্শনীয় জায়গাগুলোর খোঁজ নিতেন। জানতেন কিভাবে কম খরচে সেখানে পৌঁছানো যায়।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল তার বিদেশ ঘোরা। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে টানা ঘুরেছেন ৩৫ দেশ। ২০১৮ সালে ভ্রমণ করেছেন ৩২ দেশ। আর ২০১৮ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত  ঘুরেছেন পশ্চিম আফ্রিকার ১৫ দেশ। ২০১৯ এর এপ্রিল থেকে ২০২০ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঘুরেছেন ১৫ দেশ। শততম দেশ ভ্রমণ করেছিলেন ২০১৮ সালের জুনে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছিল ১৩৫। ২০২০ এ করোনা মহামারীর কারণে ভ্রমণে বাধা পড়ে যায় তার। পরবর্তীতে নিষেধাজ্ঞা কমতে থাকলে আবারো শুরু করেন তার যাত্রা। বিভিন্ন দেশ ঘুরে তার ১৪৪ তম দেশ মালদ্বীপ ভ্রমণের মাধ্যমে শেষ করেন ২০২০ সালের যাত্রা।

তবে তার এই যাত্রা কিন্তু সবসময় সুখকর ছিলোনা। বিভিন্ন ঝুঁকি পেরোতে হয়েছে তাকে। বিভিন্ন পাহাড়, মরুভূমি ও কিছু বিপদজনক জায়গায় পদে পদে তাকে লড়তে হয়েছে মৃত্যুর সাথে। অবশেষে জয় হয়েছে কঠোর মনোবলের।

বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে ১৫০তম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করছেন বাংলাদেশের এই নারী। বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা হাতে কেবল ১৯৩টি স্বাধীন দেশই নয়, পরাধীন আরো ৭টি দেশ পাড়ি দিয়ে বিশ্বের প্রথম মানবী হিসেবে গিনেস বুকে নাম লেখাতে চান বাংলাদেশের অভিযাত্রী নাজমুন নাহার। আশা করি তার এই আশা খুব দ্রুতই পূরণ হবে।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ