Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গার্মেন্টসে কমছে নারীর অংশগ্রহণ!

বাংলাদেশে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত নারীদের অন্যতম বড় কর্মসংস্থান হলো গার্মেন্টস বা পোশাক কারখানা। মূলত নারী শ্রমিকদের ওপর ভিত্তি করেই চলতো এই পোশাক কারখানাগুলো। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে নারীদের কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই তৈরি পোশাক খাতে নারীরাই এখন পিছিয়ে পড়ছেন। একসময় পোশাক কারখানায় সিংহভাগ নারী কাজ করলেও এখানে নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা এখন বেশি। অথচ দেশে তৈরি পোশাক কারখানা ও শ্রমিকের সংখ্যা দুই-ই বেড়েছে। কিন্তু সেই হারে এই খাতে নারীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়নি।

 

পোশাক কারখানায় নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের পিছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। গার্মেন্টেসে কাজ করা নারীর একটি বড় অংশই আসে গ্রাম থেকে। নারী শিক্ষার ব্যাপারে প্রথম থেকেই দেশের গ্রামাঞ্চলে ছিলো বেশ বৈষম্য। অনেক মেয়েই ছোটবেলায় পড়ালেখার সুযোগ পায়না। তার ওপর যারা পায় বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক কারণে ফলাফলে তেমন সাফল্য দেখাতে পারেনা। ফলে অল্প বয়সেই তাদের বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। এমতাবস্থায় অনেকেই চলে আসে রাজধানীতে কাজের উদ্দেশ্যে। কিন্তু কাজের জন্য তাদের মধ্যে তেমন দক্ষতাও থাকেনা। শিক্ষা ও দক্ষতার অভাবে তাদের কাছে কেবল খোলা থাকে গার্মেন্টেসে কাজের সুযোগ। এভাবে তাদের বেশ একটা আয় হয়। কোনোভাবে চলে যায় সংসার। 

 

১৯৭০’র দশক থেকে দেশে তৈরি পোশাক খাতের যাত্রা শুরু। তখন অত্যন্ত কম পারিশ্রমিকের কারখানা-গুলোয় মূলত নারীরাই কাজ করতেন বাড়ির ঝি’র কাজের বদলে। নব্বইয়ের দশকে নিটওয়্যার গার্মেন্টস যাত্রা শুরুর পর থেকে নারীদের অংশগ্রহণের হার কমতে শুরু করে এবং ক্রমান্বয়েই তা কমছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ইউএন উইমেনের সহায়তায় ২০১৮ সালে দেশের ২১৬টি পোশাক কারখানায় একটি জরিপ চালানো হয়েছিল। তাতে দেখা গেছে নারী শ্রমিকের হার প্রায় ৬০ শতাংশ।

 

বিগত চার বছরের ব্যবধানে পোশাক-শিল্প খাতে নারীর অংশগ্রহণ ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তির দুটি পৃথক জরিপ বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বেসরকারি একাধিক জরিপেও নারী শ্রমিক কমে যাওয়ার এই প্রবণতা উঠে এসেছে। এ খাতে মোট ৩৩ লাখ ১৫ হাজার মানুষ কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে সিংহভাগই পুরুষ শ্রমিক।

 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ (২০১৬) অনুযায়ী, পোশাক-শিল্প খাতে পুরুষ শ্রমিক এখন ৫৩ দশমিক ৮২ শতাংশ; বিপরীতে নারী আছেন ৪৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। অর্থাৎ এক সময় ৮০ শতাংশেরও বেশি নারী শ্রমিক থাকলেও এখন তা আশঙ্কাজনক-ভাবে কমে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২০ বছরে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পোশাক কর্মী কাজ হারাবে এবং বলার অপেক্ষা রাখে না, এর অধিকাংশ হবে নারী।  

 

এর পিছনে বেশ কয়েকটি কারণকে দায়ী করেছে বিশেষজ্ঞরা। এই খাতে নারী অংশগ্রহণ কমছে আর পুরুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে। গার্মেন্টস শিল্পে এখন পুরুষদের আগ্রহ জন্মাচ্ছে। এর কারণ হলো ভালো বেতন। অন্যদিকে আবার প্রযুক্তি ও দক্ষতায় নারীদের থেকে পুরুষরা বেশি এগিয়ে। গার্মেন্টস-কর্মী হিসেবেও পুরুষরা বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। আর নারী শ্রমিকরা পিছিয়ে পড়ছেন।

 

এছাড়াও নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনা তো আর নতুন নয়। উচ্চ কর্মকর্তা কর্তৃক হয়রানির শিকার হয়েও কাজ ছেড়ে দিচ্ছে অনেক নারী। এছাড়াও সন্তান জন্মদানের পর নারী কর্মীদের একটা বড় অংশ এমনিতেই ঝরে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, তৈরি পোশাক খাতের একজন নারী শ্রমিক গড়ে সাত বছরের বেশি কাজ করতে পারেন না।

 

কিন্তু এ নারী শ্রমিক যে কমে যাচ্ছে এটা পুরোটা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা যাবে না। এদের অনেকে শ্রেণীভিত্তিক উদ্যোক্তা হচ্ছে।  যে এলাকায় যে জিনিসের উৎপাদন ভালো হয়, তারা গ্রামে ফিরে সেসব জিনিস তৈরির চেষ্টা করছে। এটা তাদের স্বাবলম্বী হতে আরো বেশি সহায়তা করছে। তবে শেষোক্ত কারণ ছাড়া বাকি কারণগুলো নারীকে অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা পিছিয়ে নিয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ