পিরিয়ড বন্ধ হলে কী হয়?
মেনোপজ একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। নারীদের ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরবর্তী সময়কে মেনোপজ বলা হয়। সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে নারীদের ডিম্বাশয়ে ডিম্বের পরিমাণ কমতে থাকে যার ফলে পিরিয়ডের পরিমাণও কমতে থাকে। আস্তে আস্তে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায় এবং একটা সময় পর সন্তান ধারণ ক্ষমতাও বন্ধ হয়ে যায়।
নারীদের শরীরে এই পরিবর্তন আসার পেছনে মূল কারণ ওয়েস্ট্রোজেন নামের একটি হরমোন। এটি নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য চক্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বয়স বাড়তে থাকলে নারীদের শরীরে ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদন কমে যেতে থাকে। এই হরমোনই প্রজননের পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
মেনোপজের সময় নারীর শরীরে যেসব প্রভাব পড়ে:
মেনোপজের সময় আকস্মিকভাবে আগুনের উল্কার মত শরীরে গরম অনুভূত হয়। রাতে ঘাম হয়। ঘুম হয় না। দুশ্চিন্তা হওয়া, মনমরা ভাব এবং যৌনতায় বা মিলনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার ঘটনা অতি সাধারণ। মূত্রথলিতে সমস্যা এবং যোনিপথ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার ঘটনাও খুব স্বাভাবিক। আর ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদন যখন শরীরে একেবার বন্ধ হয়ে যায় এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে নারীদের হাড় ও হৃদপিণ্ডের উপরে। তবে যদি থেরাপির মাধ্যমে হরমোন প্রতিস্থাপন করা যায় এবং শরীরে ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ ঠিক রাখা যায় তাহলে শরীরে এর নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা কমানো সম্ভব।
ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনের সাথে অন্য আরও হরমোন সম্পৃক্ত। যেমন প্রোজেস্টেরোন ও টেস্টোস্টেরোন। তবে, ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনের মত এগুলোর প্রভাব এতটা তীব্র নয়। মেনোপজের পর ওয়েস্ট্রোজেন হরমোন শরীরে আর পুনরুৎপাদন হয় না। ফলে, মেনোপজের পর ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনের অভাব নিয়েই জীবনের বাকিটা সময় কাটাতে হয়। গাইনোকোলজিস্ট ও মেনোপজ বিশেষজ্ঞরা বলেন, মেনোপজ নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হবার কিছু নেই। মেনোপজের লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। মেনোপজের ক্ষেত্রে হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপিকে একটি কার্যকর উপায় বিবেচনা করা হয়। তবে, এই নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। কারণ হরমোন প্রতিস্থাপনের বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
মেনোপজ নারীর স্বাস্থ্যের জন্য একটি ভালো দিক। মেনোপজ হলে কিছু বিষয়গুলো নারীদের খেয়াল করলে সুস্বাস্থ্য পাওয়া সম্ভব হবে । ব্যালেন্সড ডায়েট বা ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খাওয়া। চর্বিযুক্ত খাবার না খাওয়া। হৃৎপিণ্ড ও হাড়কে সুরক্ষা দিতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। দুশ্চিন্তা, চাপ ও হৃদরোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা। হার্টের অসুখ ও হঠাৎ গরম লাগা কমাতে ধূমপান ও অ্যালকোহল পান বন্ধ ।