অবসরে যাচ্ছেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী
বর্তমান সময়ে ক্ষমতায়নে নারীর আগমন আন্তর্জাতিক মহলে বিশেষ নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। সাধারণ নারী থেকে হয়ে উঠেছেন ক্ষমতাধর নারী। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী বলতে প্রথমেই আমাদের মাথায় যার নাম আসে তিনি হলেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল। একবার নয়, দুবার নয় পরপর ১০ বার খ্যাতনামা মার্কিন ম্যাগাজিন ফোর্বসের তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারীর তালিকায় তিনি ছিলেন শীর্ষে।
টানা ১৬ বছর ধরে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাঞ্জেলা মার্কেল। তবে এবার অবসরে আসছেন এই প্রভাবশালী নারী। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে হবে জার্মানির সাধারণ নির্বাচন। আর নির্বাচন করবেন না বলে ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন মার্কেল। নতুন সরকার গঠন হবে এবার। এর মধ্য দিয়ে শেষ হতে যাচ্ছে ‘মার্কেল যুগ’। তবে নতুন সরকার গঠন হওয়া পর্যন্ত তাঁকে নির্বাহী সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে৷
১৯৫৪ সালের ১৭ জুলাই পশ্চিম জার্মানির হ্যামবুর্গে জন্মগ্রহণ করেন অ্যাঞ্জেলা মার্কেল। বাবা ছিলেন ধর্মযাজক এবং মা ছিলেন শিক্ষক। টেম্পলিন শহরের একটি স্কুলে পড়ালেখা করেন। এরপর তিনি লাইপৎসিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞান পড়েন। শিক্ষার্থী থাকাকালে মার্কেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম চালুর দাবিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। একজন বিজ্ঞানী হিসাবে নিজের পেশাজীবন শুরু করেন। একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোয়ান্টাম কেমিস্ট হিসাবে ১৯৮৯ সালে বার্লিন দেওয়াল পতনের আগ পর্যন্ত একটি গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করেন তিনি। এ সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৩৫ বছর। ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর জার্মানিতে ৪০ বছরের কমিউনিস্ট শাসনের সমাপ্তি ঘটে। এর পরেই রাজনীতিতে আগমন ঘটে এই ভবিষ্যৎ দীপ্তির।
২০০৫ সাল থেকে জার্মানির চ্যান্সেলর মার্কেল। ১৯৯০ সালে দুই জার্মানির সম্মিলিত নির্বাচনে মার্কেল অংশ নেন এবং এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। এর মধ্যদিয়ে প্রথম নারী চ্যান্সেলর হিসাবেও ইতিহাসে নাম লেখান। পরপর চার মেয়াদে জার্মানি শাসন করেন তিনি। রাজনৈতিক জীবনে নানাবিধ সমস্যা সমাধানে তার মানসিক দৃঢ়তা, দূরদর্শিতা, আত্মবিশ্বাস, ইতিবাচক মনোভাবের মতো অসামান্য নেতৃত্বের গুণাবলির প্রকাশ ঘটেছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক নানা সংকটের মুহূর্তে । যা তাকে শুধু জার্মানির সর্বাধিক সফল নেতাই করেনি, সমগ্র বিশ্বের নেতা হিসাবে আসন দিয়েছে।
২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের সময়ে তিনি দক্ষতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে জনগণের যথেষ্ট আস্থা অর্জন করেছিলেন৷ ঋণ সংকট থেকে ইউরোপীয় অভিন্ন মুদ্রা ইউরোকে রক্ষার ক্ষেত্রেও তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিলেন৷ তার আমলেই জার্মানিতে সামরিক বাহিনীতে তরুণদের বাধ্যতামূলক কার্যক্রম শেষ হয়েছে৷ পরমাণু ও জীবাশ্ম-ভিত্তিক জ্বালানি পুরোপুরি ত্যাগ করে ভবিষ্যতে পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানির পথে যাত্রাও শুরু হয়েছে৷ এছাড়া সমলিঙ্গের বিবাহ ও সদ্যোজাত সন্তানের দেখাশোনার জন্য পিতাদের জন্য ভাতা ও ছুটির মতো বেশ কিছু প্রগতিশীল সিদ্ধান্তও সমাজের উপর প্রভাব ফেলছে৷ কেবল যে জার্মানির উন্নতি করেছেন তা- ই নয়, পুরো ইউরোপের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায়ও কূট-নৈতিকভাবে ভূমিকা পালন করেছেন এই চ্যান্সেলর। ২০১৫ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের জের ধরে শরণার্থীদের ঢল নামার সময়ে মার্কেল তাদের জার্মানিতে স্বাগত জানিয়েছেন৷
আন্তর্জাতিক মহলে অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের অবদান অনস্বীকার্য। অবসরে গেলেও পুরো পৃথিবীর কাছে তিনি সবসময়ই ক্ষমতাধর নারী হিসেবেই পরিগণিত হবেন।